সোমবার, ২৮ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

রাজনীতিবিদদের ফ্যাশন

রাজনীতিবিদদের ফ্যাশন

আবহমান বাংলার তাঁতের শাড়িতে পরিপাটি শেখ হাসিনা

শাড়িতে ফুটে ওঠে বাঙালি নারীর আসল রূপ। পোশাকের ঐতিহ্য ও শালীনতা ধারণে নারীর পোশাক হিসেবে শাড়ি সব সময়ই অগ্রগণ্য। গোটা পৃথিবীর কাছেও বাঙালি নারীর পোশাক হিসেবে শাড়ি সুপরিচিত। বাঙালিয়ানার এই বৈশিষ্ট্যের শতভাগ পূর্ণতা দেখা যায় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পোশাক কেতায়। শাড়ির পাশাপাশি আমাদের দেশের নারীরা অন্যান্য পোশাকেও অভ্যস্ত। তবে প্রধানমন্ত্রীর পোশাক রীতিতে যেন তার প্রভাব কখনই পড়ে না। তাকে প্রায় সব সময়ই আবহমান বাংলার তাঁতে বোনা শাড়িতে দেখা যায়। সময়, স্থান, উপলক্ষ ভেদে প্রধানমন্ত্রীর শাড়ির রং ডিজাইনে পরিপূর্ণ উপযুক্ততা থাকে। নীল-সাদা কখনো আবার লাল-সবুজ, সাদা-আকাশি, ঘিয়ে-লাল, বেগুনিসহ বাহারি সুতার বুননের তাঁতের শাড়িতে ষোলআনা বাঙালিয়ানা ফুটে ওঠে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। দেশের ঐতিহ্য বহনকারী জামদানি শাড়িও তাকে পরতে দেখা যায়। হালকা ও ছিমছাম কাজের এসব শাড়ি দেখতে খুবই পরিচ্ছন্ন। এমন শাড়িতেই যেন প্রধানমন্ত্রীর স্বস্তি। শাড়ির সঙ্গে মিলিয়ে থ্রিকোয়ার্টার হাতার ব্লাউজ আর মাথার ঘোমটায় সদা হাস্যোজ্জ্বল ও পরিপাটি মানুষ তিনি। সভা, সেমিনার, সমাবেশ, পরিদর্শন সব জায়গায় তার উপস্থিতি শাড়িতে।  সাদামাটা পোশাক, অনাড়ম্বর জীবনযাপন আর সাবলীল প্রকাশ ভঙ্গিতে অনন্য শেখ হাসিনা।

 

 

পোশাকগুলো দামি ব্র্যান্ডের তোফায়েল আহমেদ

পায়জামা-পাঞ্জাবি ও মুজিব কোটই পছন্দের পোশাক বর্ষীয়ান আওয়ামী লীগ নেতা বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এমপির। রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে স্যুটকোট পরতে হয় তাকে। তার পোশাকগুলো সংগ্রহ করা হয় দামি ও মানসম্মত ব্র্যান্ড থেকে। দলীয় কর্মসূচি কিংবা নির্বাচনী এলাকায় থাকা অবস্থায় তিনি পায়জামা-পাঞ্জাবি ও মুজিব কোট পরে থাকেন। মন্ত্রণালয়ে কোনো বিদেশি অতিথির সঙ্গে সাক্ষাতের সময় এবং বিদেশ সফরের সময় তোফায়েল আহমেদ রুচিশীল স্যুটকোটে উপস্থিত হন।  রাতে নিজ বাসায় বাঙালির পোশাক লুঙ্গিতে স্বস্তি খুঁজে পান প্রবীণ এ রাজনীতিবিদ। 

 

 

তার মুজিব কোটে পাঁচ বোতাম ওবায়দুল কাদের

ওবায়দুল কাদের। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং বর্তমান সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী। পোশাকে তার রয়েছে নিজস্ব স্টাইল। প্রভাবশালী এই রাজনীতিবিদ তার ব্যক্তিত্বের সঙ্গে মানানসই ফ্যাশনই বেছে নিয়েছেন। মুজিব কোটে ছয় বোতাম থাকলেও এর আদলে তিনি যে কোট গায়ে জড়ান তাতে বোতাম পাঁচটি। কোটের পকেটে থাকে রুমাল। এ ছাড়া কোটের রংয়েও রয়েছে বৈচিত্র্য। কালো ছাড়াও ছাইরঙা, রয়েল ব্লু-এর মতো উজ্জ্বল রংয়ের কোট পরতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন তিনি। কোটের রংয়ের সঙ্গে পকেটে থাকা রুমালের রংয়েও ম্যাচিং করেন।  দেখা যায় পলো টি-শার্টেও। ক্যাজুয়াল পোশাকের পাশাপাশি শার্ট, পায়জামা-পাঞ্জাবিতেও তিনি সাবলীল।

 

 

পায়জামা-পাঞ্জাবিতেই সাবলীল সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম

সাদা পায়জামা-পাঞ্জাবি আর চারকোনা ফ্রেমের চশমাতে বাংলার মানুষের চেনা মুখ আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। সাদা ছাড়াও আকাশি, জলপাই, ছাইসহ হালকা রঙের পাঞ্জাবির সঙ্গে মুজিব কোট পরেন তিনি। রাজনীতিতে সাদা মনের মানুষ হিসেবে তাকে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার অন্যতম কারণ অনাড়ম্বর জীবনযাপন আর সাদামাটা পোশাক। হাতের রুপালি রঙের ঘড়ির কাঁটায় পার করছেন রাজনীতির পথে বয়ে চলা জীবন। চামড়ার স্যান্ডেল পায়ে গলিয়ে চলেন তরুণ বয়স থেকে। কফি রঙের চারকোণা পাওয়ার চশমার গ্লাসে তাকালে ফুটে উঠে দূরদর্শী নেতার প্রতিবিম্ব। যার গভীর দৃষ্টি আর আন্তরিকতায় সিক্ত হয় গণমানুষ। সাদামাটা পোশাকের এই নেতাকে দেশে কখনো স্যুট-টাই বা কেতাদুরস্ত পোশাক পরতে দেখেননি নেতা-কর্মীরা।  আর শীতের মৌসুমের সঙ্গী ঘিয়ে রঙের শাল। তাই পায়জামা-পাঞ্জাবিতেই পরিপাটি নেতা সৈয়দ আশরাফ।


 

দুই ফিতের চপ্পল পরতেনইন্ধিরা গান্ধী

ভারতসহ সারা বিশ্বের প্রতিমূর্তি নারী ইন্দিরা গান্ধী। ১৯৭০ থেকে ১৯৮০ সালের সময়কালে এই ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ছিলেন স্বাধীন চিন্তার অধিকারী এবং স্পষ্টবাদী। ধারালো এই রাজনীতিবিদ পোশাক-পরিচ্ছদে ছিলেন বিশেষ বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। তার শাড়িতে কখনই খুব উজ্জ্বল বর্ণের ছাপ পাওয়া যেত না। চিকন জরির বর্ডার থাকত কিছু শাড়িতে। তার পরিহিত শাড়িগুলো হতো খুবই মোলায়েম। ফেব্রিক হিসেবে বেছে নিতেন নরম সিল্ক বা জর্জেট। ইন্দিরা গান্ধীর শাড়িতে ছাই বা কালো যে ছাপ ফুটে উঠত তা কিছুটা ছিল কলম আকৃতির। শাড়িতে এই ছায়া সবার জন্য বিশেষ বার্তা বহন করত। রুচিশীল ও ক্ষুরধার অর্থবোধক পোশাক পরিধানের মাধ্যমে সবার কাছে তার বোধের তীক্ষতা প্রকাশ পেত। তিনি সব সময় খাদি পোশাক পরতেন। এর সুতা ভারতের স্বাধীনতার পেছনে খুব গুরুত্বপূর্ণ অর্থ প্রকাশ করত। এই পোশাক পরে ভারতীয়দের উদ্বুদ্ধ করতেন নিজেদের পোশাক নিজেরা বোনার জন্য। এতে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক শক্তিও বৃদ্ধি পেত। সময় ও স্থানভেদে ইন্দিরা গান্ধীর পোশাক বাছাই ছিল উপযুক্ত। এ ছাড়া তার নিয়মিত চুলের স্টাইলের প্রকাশ করত অত্যন্ত টিপটপ অফিসিয়াল লুকে। বিদেশের মাটিতে দেশি কাপড় পরলেও একটি মডার্ন টুইস্ট থাকত। শাড়ি পরার সময় বাম কাঁধে আঁচল তুলে মাথা ঢাকতেন। তিনি কখনই খুব বেশি গহনা পরতেন না।  হালকা-পাতলা কানের টপ বা একটা পুঁতির মালা, হাতে দুটো চিকন চুড়ি থাকত। ব্লাউজের গলা ঘাড় ছুঁয়ে যাওয়া, হাতা থাকত কনুই পর্যন্ত। পায়ে থাকত দুই ফিতের চপ্পল, পাম শু।

 

 

জওহরলাল নেহেরুর গলাবন্ধ কোট

বিশ্বের বেশ কিছু রাজনীতিবিদ তাদের রাজনৈতিক দক্ষতার সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের পছন্দসই ফ্যাশনের জন্য পরিচিতি পেয়েছেন। দেখা যায় তাদের মৃত্যুর পরে ফ্যাশনটি সেসব রাজনীতিবিদের নামেই চলতে থাকে। ঠিক এমনি একটি ঘটনা ঘটে ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর ক্ষেত্রে। নেহেরুর পরিহিত জ্যাকেট ঠিক সেভাবেই নিয়েছে দেশটির জনগণ।  গলাবন্ধ কোটের মতো দেখতে এ পোশাকটি ভারতীয়দের জন্য আভিজাত্যের প্রকাশ ঘটায়। প্রধানমন্ত্রী থাকাকালেই তিনি নিজের এই আলাদাধর্মী জ্যাকেটের জন্য সবার কাছে জনপ্রিয়তা পান।

 

 

খাদির তৈরি সাদা তাঁতের শাড়ি পরতে ভালোবাসেন মমতা ব্যানার্জি

খাদির তৈরি সাদা তাঁতের শাড়ি পরতে ভালোবাসেন পশ্চিমবঙ্গের দিদি মমতা ব্যানার্জি। শাড়িও পরেন হাতেগোনা মাত্র কয়েকটি। একটি শাড়ি থেকে আরেকটি শাড়ির পার্থক্য শুধু পাড়ে। সবুজ, নীল, খয়েরি, কালো, সোনালি, আকাশি, পেস্ট বা অন্য কোনো রং থাকে শাড়ির চিকন পাড়ে। জমিনে দেখা যায় আকাশি, সাদা, ক্রিমসহ অন্যান্য হালকা রং। তার এ ধরনের শাড়ির জোগান মেলে হুগলির ধনেখালি থেকে।  শাড়ির সঙ্গে ব্লাউজও থাকে এক রঙের। বাম কাঁধে তোলা আঁচল পেঁচিয়ে শরীর ঢেকে চলেন এই নেত্রী। একজন মন্ত্রী হয়েও সাদামাটা এ মানুষটি পায়ে পরেন দুই ফিতার চটি চপ্পল।

 

 

মুজিব কোট সজ্জিত বঙ্গবন্ধু ছয় দফা দাবির জন্য ছয়টি বোতাম

হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর কাছে যা যা প্রিয় ছিল তা-ই দেশের সব মানুষের কাছে প্রিয় হয়ে উঠেছে। বঙ্গবন্ধুর বিশেষ পোশাক ছিল সাদা পায়জামা-পাঞ্জাবি আর ছয় বোতামের হাতাবিহীন কালো কোট। যে কোটটি পরবর্তীতে ‘মুজিব কোট’ নামে পরিচিতি পায়। তাকে যারা ভালোবাসতেন তারাই পরবর্তীতে মুজিবের আদর্শ হিসেবে ‘মুজিব কোট’ ব্যবহার করতেন। বর্তমানে তরুণ প্রজন্ম ও নবীন রাজনীতিকদের মাঝেও এটি জনপ্রিয়। বঙ্গবন্ধুর ভক্তদের কাছে এই কোট ধারণ করা মানেই বঙ্গবন্ধুকে ধারণ করার শামিল। পায়জামা-পাঞ্জাবির সঙ্গে মুজিব কোট ছাড়াও মোটা ফ্রেমের চশমা, চুরুটের পাইপও বঙ্গবন্ধুর আইকন হিসেবে ব্যবহূত হয়। বঙ্গবন্ধু ঠিক কত সাল থেকে কালো কোট পরা শুরু করেছিলেন তার কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হয়, ১৯৪৮ সালে যখন আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠিত হয় তখন থেকে বঙ্গবন্ধুকে এই কোট পরতে বেশি দেখা যায়। তবে এই কোটটির প্রচলন ‘নেহেরু কোট’ থেকে। পরে সেখান থেকেই বঙ্গবন্ধু এই কোটটি পরতেন বলেই এর নাম দেওয়া হয় ‘মুজিব কোট’। বঙ্গবন্ধু স্বভাবতই তার পছন্দের সাদা পায়জামা-পাঞ্জাবির মতোই কোটটি ব্যবহার করতেন।

জানা গেছে, কোনো এক সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের এক ছাত্র তার সহপাঠী তাজউদ্দীনকে সঙ্গে নিয়ে শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে দেখা দিতে গিয়েছিলেন। তিনি শেখ মুজিবুর রহমানকে অনেক কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করলেন, কথাও বললেন দীর্ঘক্ষণ। কথা শেষে উঠে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু যখন তার কালো কোটটি গায়ে জড়িয়ে নিচ্ছিলেন তখন ওই ছাত্র লক্ষ্য করলেন কোটে ছয়টি বোতাম রয়েছে। যা এ ধরনের অন্য কোটের বোতামের চেয়ে কম। এ সময় তিনি বঙ্গবন্ধুকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনার কোটের বোতাম ছয়টি কেন? উত্তরে বঙ্গবন্ধু বললেন, এমন প্রশ্ন এর আগে আমাকে আর কেউ করেনি। তুই প্রথম।  তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে বললেন, ‘এই কোটের ছয়টি বোতাম আমার ঘোষিত ছয় দফার প্রতীক।’ আর এ কারণেই একটি আদর্শ মুজিব কোটের প্রতিটিতে বোতামের সংখ্যা থাকে ছয়টি।

 

 

জিয়াউর রহমানের সানগ্লাস

জিয়াউর রহমানের পোশাকের বৈশিষ্ট্য উঠে এসেছিল বিশিষ্ট সাংবাদিক জহিরুল হকের এক প্রতিবেদনে। তিনি লিখেছেন— ‘অনেকবার রিপু করা, তালি দেওয়া হালকা-প্রিন্টের পাজামা, একটি ঢিলে শার্ট। বার বার সেলাই আর তালির অত্যাচারে শার্টটির পিঠের ডানদিক চটের মতো ভারী হয়ে গেছে। এগুলো প্রেসিডেন্ট জিয়া ব্যবহার করতেন। কালে ভদ্রে কখনো বঙ্গভবনে বিশ্রামের সময় পেলে এই ছেঁড়া পাজামা ও শার্ট স্লিপিং স্যুট হিসেবে পরতেন।’ এ কথা সত্য যে, প্রেসিডেন্ট পদের মর্যাদার খাতিরেই জিয়া সবসময়ই রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে শুধু আনুষ্ঠানিকতার খাতিরে ভালো কাপড় পরতেন। সাফারি এবং সানগ্লাস পরে মানুষের সামনে এসেছেন। কখনো বুকের দুই পাশে দুটো পকেটওয়ালা হাফ হাতা শার্টেও দেখা গেছে তাকে। কিন্তু ঘরে তিনি ছিলেন অতি সাধারণ একজন মানুষ। ঘরে ছেঁড়া কাপড় পরতেও তার কোনো সঙ্কোচ ছিল না। একবার এক কর্মকর্তা ইসলামিক শীর্ষ সম্মেলনের সময় জেদ্দা থেকে প্রেসিডেন্ট জিয়ার জন্য দুটি ‘স্লিপিং স্যুট’ কিনেছিলেন। কিন্তু প্রেসিডেন্ট জিয়া সেগুলো ব্যবহার করেননি। দেশের বাইরে যাওয়ার সময় হয়তো একটি নীল স্যুট পরে গেছেন। পরের দিন কোনো প্রোগ্রামে যোগ দেওয়ার আগে সেই পোশাকটি আবার ইস্ত্রি করিয়ে রাখতেন পরার জন্য। অর্থাৎ তার কাছে মাত্র ওই একটিই স্যুট থাকত।

 

 

রঙিন জর্জেট শাড়িতে খালেদা জিয়া

গোলাপি, নীল, হলুদ, ঘিয়ে, সাদা, লাল, বেগুনিসহ বিভিন্ন রঙের হালকা উজ্জ্বল জর্জেট শাড়িতে অভ্যস্ত বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। একপাশে গোছানো চুল, মাথায় ঘোমটা আর শিফনের ওড়নায় ফুটে ওঠে মুসলিম আভিজাত্যের ছোঁয়া। শিফন শাড়ির সঙ্গে নিচু হিল জুতা পরতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন তিনি। চকলেট রঙের রোদচশমা আর হালকা মেকআপে স্বকীয়তার ছাপ রয়েছে এই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের। দেশের বাইরে গেলে পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে সাজসজ্জার দিকেও বিশেষ নজর তার। নিজে টিপটপ থাকার সঙ্গে তার বাড়তি নজর রয়েছে বাড়ি এবং নিজস্ব কার্যালয় পরিচ্ছন্নতায়। বিপদে অবিচল, ধৈর্যশীল এবং ঘুরে দাঁড়ানোর অসম্ভব ইচ্ছাশক্তিই এই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। স্বামী-সন্তান হারিয়েও নেতা-কর্মীদের আঁকড়ে পথচলা তার। রাজনৈতিক দূরদর্শিতায় অর্জন করেছেন সেই আস্থার জায়গা। সবজি, মাছ, সালাদ আর হালকা খাবারে অভ্যস্ত তিনি। পোশাক-পরিচ্ছদ আর জীবনযাপনের নিজস্ব ভঙ্গি আলাদা করে পরিচয় করিয়ে দেয় ব্যক্তি খালেদা জিয়াকে।

 

 

মানানসই পোশাকে স্বচ্ছন্দ ব্যারিস্টার মওদুদ

ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য। নেশার টানে বেছে নিয়েছিলেন আইনি পেশা। সেই পেশাগত কারণেই দেশের সর্বোচ্চ আদালতে সাদা শার্ট, কালো প্যান্ট, কালো কোট আর গাউনেই পরিচিত মুখ সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। জমকালো আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানগুলোতে পরিপাটি স্যুট-টাই ভীষণ পছন্দ বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্যের। তার পোশাক-পরিচ্ছদে ফুটে ওঠে স্বকীয়তা। নিজের পছন্দসই পোশাকে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন তিনি। পোশাকের সঙ্গে জুতাও চাই মানানসই। দেশের বাইরে ধূসর ও কালো রঙের স্যুটকোটের সঙ্গে মিলিয়ে টাই পরতেই অভ্যস্ত এক সময়ের এই উপরাষ্ট্রপতি। আর বিয়েসহ সামাজিক অনুষ্ঠানগুলোয় ধবধবে সাদা পাঞ্জাবি-পায়জামা পরেন ব্যারিস্টার মওদুদ। তবে অন্য কোনো রং নয়, সাদা পায়জামা-পাঞ্জাবিই পছন্দ তার। বাসাবাড়িতে তার পছন্দের পোশাক হচ্ছে দেশের ঐতিহ্যবাহী লুঙ্গি ও ফতুয়া।

 

 

 

ঘরে-বাইরে দুই ধরনের পোশাকে এরশাদ

পোশাক পরিধানের ক্ষেত্রে খুবই সিরিয়াস সাবেক রাষ্ট্রপতি, জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। দিনে ও রাতে সময়ানুযায়ী পোশাক বেছে নেন। পোশাক বাছাইয়ের ক্ষেত্রে তিনি খুবই রুচিশীল। সকালে গলফ খেলতে গেলে সাদা প্যান্ট, সাদা গেঞ্জি ও কেডস পরেন। দিনের নির্দিষ্ট একটি সময়ে ব্যায়াম করেন। ব্যায়াম করার সময় হাফ প্যান্ট ও গেঞ্জি হয়ে ওঠে উপযুক্ত। বাসায় থাকাকালীন পাঞ্জাবি পরতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন তিনি। অফিস করেন সাফারি পরে। বিদেশি গেস্ট বাসায় এলে পোশাক হিসেবে কোট-টাই থাকে। তার সংগ্রহে অনেক কোট রয়েছে। সবই বেশ দামি। কোটের সঙ্গে মিলিয়ে টাই অথবা সিল্কের রুমাল ব্যবহার করেন। পকেটেও থাকে ম্যাচ করা রুমাল। রাতের পোশাক হিসেবে গাউনে তার অভ্যস্ততা। দেশ-বিদেশ যেখানেই থাকেন, নিয়ম করে এভাবেই পোশাক বেছে নেন তিনি। কাপড়ে একটু ভাঁজ পড়লে না ধুয়ে পরার পক্ষপাতী নন। সাবেক এ রাষ্ট্রপতির ম্যাচিং করে জুতা পরার অভ্যাস। তার আরেকটি পছন্দের জিনিস হলো ঘড়ি। অনেকগুলো ঘড়িও রয়েছে তার কাছে। যেনতেন নয়, দেড়-দুই লাখ টাকার কলমও রয়েছে এরশাদের। ফ্যাশনেবল এ মানুষটির অপছন্দ লুঙ্গি। তিনি কখনো লুঙ্গি পরেননি। ঈদের সময় একের পর এক পাঞ্জাবি-পায়জামা পরেন।

 

 

পাগড়ির পরিবর্তে মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ পরতেন কারাকুলি টুপি

মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ ছিলেন একজন আইনজীবী, রাজনীতিবিদ ও পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা। ১৯১৩ থেকে শুরু করে ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট পাকিস্তানের স্বাধীনতা পর্যন্ত জিন্নাহ নিখিল ভারত মুসলিম লীগের নেতা ছিলেন। স্বাধীনতার পর তিনি পাকিস্তানের প্রথম গভর্নর জেনারেল হন এবং আমৃত্যু এই পদে বহাল ছিলেন। তার রুচি, স্টাইল, অন্যতম সুন্দর পোশাক এবং বাস্তববুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব নিয়ে হাজির হয়েছেন সবার সামনে। তিনি বার বার একই সিল্কের টাই পরতেন না। তার ওয়ারড্রোবে কমপক্ষে ২০০ স্যুট থাকত। জিন্নাহর পোশাক-রীতির জন্য তাকে বিশ্বের অন্যতম সুন্দর পোশাকের মানুষ হিসেবে পরিচয় দিয়েছিল। তার একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন সম্ভবত মতিলাল নেহেরু। নিজেকে সুন্দর পরিপাটি রাখার জন্য জিন্নাহর মেয়ে দিনা বাবাকে ড্যান্ডি বলে ডাকতেন। শেষদিকে এসে তিনি লোকাল পোশাক পরতেন। তবে পশ্চিমা পোশাক বাদ দেননি। পাগড়ির পরিবর্তে তিনি মাথায় পরতেন কারাকুলি টুপি। পরবর্তীতে বয়স্ক প্রজন্মের জন্য টুপিটি ঐতিহ্যে পরিণত হয়। এই টুপির মাধ্যমেই তিনি আলাদাভাবে মুসলিমদের আইডেনটিটি তৈরি করেছিলেন।

 

 

স্টাইলিশ আন্দালিব রহমান পার্থ

রাজনীতিবিদ হলেই গত্বাঁধা পোশাক পরতে হয় এ ধ্যান-ধারণা থেকে বেরিয়ে এসে সময়ের সঙ্গে মানিয়ে চলেন ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ। ঘরোয়া পার্টিতে জিন্স ও শার্টে যেমন দেখা যায়, তেমনি আভিজাত্য ফুটিয়ে তোলেন পাঞ্জাবি ও কটি পরিধানে। কখনো পরেন টি-শার্ট। যারা মিডিয়ার কল্যাণে টেলিভিশন বা পত্রিকায় তাকে ক্যাজুয়াল ড্রেসে দেখে অভ্যস্ত তারা হয়তো কিছুটা চমকে যাবেন। সময়ের সঙ্গে বিচরণ তার মেধা, প্রজ্ঞা ও রুচিশীলতার। ফ্যাশন-সচেতন এই ব্যক্তি আধুনিক পোশাকেও স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। তরুণদের কাছে হালের ক্রেজ মোটরবাইক। ব্যস্ততায় ডুবে থাকা এই মানুষটি সময় পেলেই চড়ে বসেন মোটরবাইকে। কখনো চোখে হালকা রঙের মানানসই সানগ্লাস ব্যবহার করেন। সব মিলিয়ে বলতে গেলে আধুনিকতার ছোঁয়া রয়েছে তার পোশাকে। ঋতু ও পরিবেশ ভেদে হালকা ও উজ্জ্বল রঙের পোশাকে তাকে দেখা যায়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর