দেশবাসীর ওপর ১৭ বছর ধরে চেপে বসা জগদ্দল পাথর থেকে মুক্তির দিন আজ ৫ আগস্ট। প্রধানমন্ত্রী থেকে ক্রমেই ফ্যাসিস্ট হয়ে ওঠা শেখ হাসিনা গত বছর এই দিনে ক্ষমতা ছেড়ে পালিয়ে যান প্রতিবেশী দেশে। এটিই বাংলাদেশের প্রথম কোনো সরকারপ্রধানের পালাতে বাধ্য হওয়ার ঘটনা। শাসনের নামে শোষকের অত্যাচারের বিরুদ্ধে ফুঁসে ওঠেছিল পুরো দেশের মানুষ। ৩৬ দিনের গণ অভ্যুত্থানে প্রায় দেড় হাজার প্রাণের বিনিময়ে আজকের এই দিনে এসেছিল বহু আকাঙ্ক্ষা মুক্তি। ফ্যাসিস্ট সরকারপ্রধানের ক্ষমতার আধিপত্য এবং রাজনৈতিক দুর্গ ভেঙে পড়ায় দেশের প্রতিটি রাস্তায় নেমে এসেছিল উল্লসিত জনতা। বাংলাদেশ পেয়েছিল এক অন্যরকম প্রশান্তি।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে গত বছরের জুলাইয়ের প্রথম দিনে রাস্তায় নামেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। কোটা না মেধা- স্লোগান নিয়ে শুরু হওয়া আন্দোলন থেমেছিল স্বৈরশাসকের ক্ষমতাচ্যুতির মধ্য দিয়ে। গুটিকয় ছাত্রের এ আন্দোলন হাসিনার বুলেটের মুখে ধীরে ধীরে গণজোয়ারে রূপ নিয়েছিল। বুলেটের আঘাতে হাত, পা হারিয়ে পঙ্গুত্ববরণ করেছেন অনেকে। গুলিতে ঝাঁজরা হয়ে নিভে গেছে দুই চোখের আলো। ছাত্র-জনতার ওপর নেমে আসা নিদারুণ অত্যাচারের ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছে প্রায় ২০ হাজার মানুষ। স্বৈরশাসকের মসনদ টিকিয়ে রাখার নিষ্ঠুরতার গল্প এখন মানুষের মুখে মুখে। শেখ হাসিনা তার দীর্ঘ শাসনামলে অহংকার করে বলে আসছিলেন, ‘শেখ হাসিনা পালায় না’। আন্দোলনের মাঝেও বেশ কয়েকবার এই দম্ভোক্তি করেছিলেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে কারফিউ দিয়ে টিকে থাকতে চেয়েছিলেন মসনদে। ৫ আগস্ট কারফিউ উপেক্ষা করে ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি সফল করতে হাজার হাজার মানুষ ঢাকা অভিমুখে পদযাত্রা করেন। দেশজুড়ে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লাখ লাখ মানুষ রাজপথে নেমে আসেন। দুপুরে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবর নিশ্চিত করলে জনতার উল্লাসে চারদিক মুখরিত হয়ে ওঠে। রাজপথ দখলে নেয় লাখো মানুষ। বিক্ষুব্ধ জনতা হাসিনার বাসভবন গণভবনে ঢুকে বিজয় উদযাপন করেন। অসংখ্য মানুষ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও জাতীয় সংসদেও প্রবেশ করেন। দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শিশু, বৃদ্ধ, শ্রমজীবী মানুষ, শিক্ষার্থী- সবাই রাজপথে নেমে একনায়কতান্ত্রিক শাসনের পতন উদযাপন করে। ৫ আগস্ট বাংলাদেশের জনগণের জন্য যেমন বিজয়ের, তেমনি বেদনার। কারণ জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, এই আন্দোলনে প্রায় এক হাজার ৪০০ মানুষ নিহত এবং প্রায় ২০ হাজার আহত হন। দেশ পরিণত হয় রক্তাক্ত প্রান্তরে।