হার্ট মানব দেহের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। কোনো কারণে হার্ট বন্ধ হয়ে গেলে ২-৩ মিনিটের মধ্যে মানুষের মৃত্যু অবধারিত। হার্টকে মানবদেহের ইঞ্জিন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। মাতৃগর্ভ থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে হার্ট নামক এই ইঞ্জিনটি চালু থাকে বা কাজ করতে থাকে। হার্ট মূলত অবিরামভাবে রক্ত পাম্প করে সারা দেহে রক্ত সঞ্চালিত করে। দেহের প্রত্যেকটি অঙ্গ এবং প্রত্যেকটি কোষে প্রয়োজনীয় অক্সিজন ও খাদ্যবস্তু (রসদ) সরবরাহ নিশ্চিত করে থাকে। মানুষের শারীরিক কর্ম সম্পাদনের জন্য, বিভিন্ন সময়ে, রক্ত সরবরাহের চাহিদা কম বেশি হয়ে থাকে, যেমন ধরুন-মানুষ যখন বিশ্রামে থাকে বা ঘুমায় তখন রক্ত সরবরাহের চাহিদা সর্বনিম্ন পর্যায়ে থাকে, তখন হার্টকে খুবই কম কাজ করতে হয়। আবার মানুষ যখন পরিশ্রম করতে যায় তখন হার্টকে অধিক কাজ করে শরীরের রক্ত প্রবাহের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে হয়। তা না হলে মানুষ পরিশ্রম করতে বা ভারী কাজ করতে অপারগ হয়ে পরে। সুতরাং এ থেকে বোঝা যাচ্ছে যে, মানুষের শারীরিক কর্মকাণ্ডের ওপর রক্তের প্রয়োজন কমবেশি হয়ে থাকে। মানুষের শারীরিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে বা পরিশ্রমের সঙ্গে আনুপাতিক হারে রক্ত সরবরাহ কমবেশি করতে হয়, এই কাজটা একটি সুস্থ সবল হার্ট খুব সহজেই করার ক্ষমতা রাখে।
শারীরিক পরিশ্রমের সঙ্গে সংগতি রেখে হার্টের কার্যক্রম কমবেশি করতে হয়, তা না হলে মানুষ জীবনের প্রয়োজনে শারীরিক কর্মকাণ্ড সম্পাদনে অপারগ হয়ে যায়।
মানুষের হার্টে অনেক ধরনের অসুস্থতা পরিলক্ষিত হয় মোটাদাগে জন্মগত হার্টের অসুস্থতা, বাতজ্বরজনিত অসুস্থতা, ভাইরাস-ব্যাক্টেরিয়ায় আক্রান্ত হওয়া, প্রদাহজনিত অসুস্থতা, সর্বশেষ হার্টের নিজের মাংশপেশিতে রক্ত সরবরাহের ঘাটতিজনিত অসুস্থতা, যার অধিকাংশই হার্ট ব্লকের জন্য হয়ে থাকে। হার্ট ব্লকের ফলে, হার্টের নিজস্ব রক্ত সরবরাহে কমতি দেখা দেওয়ায় হার্ট দুর্বল হতে থাকে। প্রাথমিক অবস্থায় ব্যক্তি কোনোরূপ সমস্যায় আক্রান্ত হন না এবং চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন না। হার্ট ব্লকে, হার্ট অতি ধীরে দুর্বল হতে থাকে।
বর্তমান সময়ে মানুষের মধ্যে পরিশ্রম করার সুযোগ কমে গেছে যার ফলে হার্ট মাঝারি পর্যায়ে দুর্বল হওয়ার আগ পর্যন্ত ব্যক্তি কোনোরূপ উপসর্গে ভোগেন না। হার্ট অনেক দুর্বল হলে ব্যক্তি বুকে ব্যথা, বুকে চাপ, শ্বাসকষ্ট, বুক ধড়ফড় করা, অল্প পরিশ্রমে হাঁপিয়ে ওঠা, সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠতে গেলে বুকে ব্যথা বৃদ্ধি পাওয়া ইত্যাদিতে আক্রান্ত হন এবং চিকিৎসকের দ্বারস্থ হন। হার্ট অ্যাটাকে হার্ট তাৎক্ষণিকভাবে অনেক বেশি দুর্বল হয়ে যায় এবং অনেকেই মৃত্যুর মুখে পতিত হন। যা হার্ট ব্লকের একটি জটিলতা হিসাবে বিবেচ্য। কাজেই বয়স ৫০ বছর পার হলেই সামর্থ্য থাকলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে হার্টের অসুস্থতা আছে কি না তা নিশ্চিত হওয়া বুদ্ধিমানের কাজ। হার্ট ফেইলর হলে হার্ট এতটাই দুর্বল হয়ে যায় যে, মানুষের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে অপারগতা দেখা দেয়। হার্ট ফেইলুরের লক্ষণসমূহ শ্বাসকষ্ট হওয়া, বুক ধড়ফড় করা, পানি জমে শরীর ফুলে যাওয়া (পা ও মুখ) শরীর অত্যাধিক দুর্বল হওয়া, ক্ষুধামন্দা, বদহজম ও খাওয়ায় অরুচি দেখা দেওয়া। হার্ট ডিজিজের রোগীদের লক্ষণ দেখেও হার্টের কর্মক্ষমতা বোঝা যায়। হৃদরোগ প্রধান মরণঘাতী রোগ। তাই সর্বাগ্রে এর প্রতিরোধ করাই ভালো। হৃদরোগ প্রতিরোধ করার বড় উপায় হলো সুস্থ স্বাভাবিক জীবনযাপন করা, কায়িক পরিশ্রম থেকে বিরত না থাকা, অলসতা পরিহার করা, ডায়াবেটিস, হাইপ্রেসার কন্ট্রোল করা। সব ধরনের খাদ্যবস্তু তাজা-টাটকা খাওয়া এবং প্রয়োজনের অধিক খাবার গ্রহণ না করা।