চীনের স্বাস্থ্য ও শিক্ষাসেবা নিতে দিনকে দিন আগ্রহী হয়ে উঠছেন বাংলাদেশিরা। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে মেডিকেল ভিসা পেতে বিড়ম্বনার কারণে বাংলাদেশিদের অনেকেই এখন চীনে গিয়ে স্বাস্থ্যসেবা নিতে আগ্রহী। দ্রুত ও সহজে ভিসা দেওয়ায় এবং দেশটির বেশ কয়েকটি হাসপাতালে বাংলাদেশি রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার জন্য মনোনীত হওয়ায় এমনটি হয়েছে। এ ছাড়া চীনে সহজে ভর্তি, আকর্ষণীয় বৃত্তি এবং শিক্ষা শেষে চাকরির সুযোগ থাকায় বাংলাদেশ থেকে শিক্ষার্থীদের চীনে গিয়ে শিক্ষা গ্রহণের ব্যাপারে আগ্রহ তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশের বাজারে চীনের তৈরি পণ্যের প্রতি আগ্রহ থাকায় ব্যবসায়ীদের অনেকেই এখন নিয়মিত চীন সফর করছেন।
দীর্ঘদিন ধরেই চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশিদের দেশের বাইরে সবচেয়ে স্বস্তির গন্তব্য ছিল ভারত। গত বছরের জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের পর রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়ায় কড়াকড়ি আরোপ করে ভারত। সীমিত পরিসরে চিকিৎসা ভিসা দিলেও চাহিদার তুলনায় তা অপ্রতুল। এমন সুযোগে চীন সরকার এগিয়ে এসেছে। দেশটির ইউনান প্রদেশের চারটি শীর্ষ পর্যায়ের হাসপাতাল বিশেষভাবে বাংলাদেশি রোগীদের সেবা দেওয়ার জন্য মনোনীত করা হয়েছে। হাসপাতালগুলো হচ্ছে- দ্য ফার্স্ট পিপলস হসপিটাল অব ইউনান প্রভিন্স, দ্য ফার্স্ট অ্যাফিলিয়েটেড হসপিটাল অব কুনমিং মেডিকেল ইউনিভার্সিটি, চায়নিজ একাডেমি অব মেডিকেল সায়েন্সেসের ‘ফাওয়াই ইউনান হসপিটাল’ এবং ট্র্যাডিশনাল চায়নিজ মেডিকেল হসপিটাল (টিএমসি)। সেখানে চিকিৎসা সুবিধা দেখতে চলতি বছরের ১০ মার্চ বাংলাদেশি রোগীদের প্রথম দল কুনমিং যায়। ওই দলের সফরসঙ্গী হয়েছিলেন চিকিৎসক, ট্র্যাভেল এজেন্ট, সাংবাদিকরাও। ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশনস অব বাংলাদেশের (টোয়াব) পরিচালক (ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স) মো. মানসুর আলম পারভেজ বলেন, ‘ ভারতের ভিসা জটিলতার কারণে বাংলাদেশিদের অনেকেই এখন চীনে চিকিৎসার জন্য যাচ্ছেন।’ আবার বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য উচ্চ শিক্ষায়ও নতুন এক গন্তব্য হচ্ছে চীন। চীনের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সহজে ভর্তি, আকর্ষণীয় বৃত্তি এবং শিক্ষা শেষে চাকরির সুযোগ- এসব কারণে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের অনেকেই এখন চীন যেতে উৎসুক। জার্মান-ভিত্তিক অনলাইন পরিসংখ্যান প্রতিষ্ঠান স্ট্যাটিসটা বলছে, চীনে যত সংখ্যক বিদেশি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে তার মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১২তম। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের বেশির ভাগই প্রযুক্তি, চিকিৎসা ও ব্যবসা বিষয়ে পড়তে চীনে যাচ্ছেন।
চীনের বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা শেষ করে সহজে চাকরি ছাড়াও উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছেন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা। আর বাংলাদেশে চীনের বাণিজ্য বৃদ্ধির কারণে দেশটির প্রতিষ্ঠানগুলোতে অনেক বাংলাদেশির প্রয়োজনও হচ্ছে।