অস্বাস্থ্যকর খাবার, শারীরিক পরিশ্রমের অভাব, মদ, মেদ, প্রতিযোগিতামূলক জীবনপদ্ধতি, স্ট্রেসফুল লাইফ ইত্যাদি হৃদরোগের ক্ষেত্রে পরোক্ষভাবে দায়ী...
আল্লাহ আমাদের শরীরে অধিকাংশ অঙ্গ এক জোড়া করে সৃষ্টি করেছেন। যেমন : দুই চোখ, কান, হাত, পা, ফুসফুস, কিডনি, ডিম্বাশয়, অণ্ডকোষ ইত্যাদি। একটি নষ্ট হয়ে গেলে আরেকটি দিয়ে মোটামুটি কাজ চলে। আর একটি করে অঙ্গ হচ্ছে হৃৎপিণ্ড, যকৃৎ (লিভার), প্লীহা (স্পিন) ও জরায়ু ইত্যাদি। কোনো কোনো রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে জীবন বাঁচানোর জন্য জরায়ু ও প্লীহা ফেলে দিতে হয়। অর্থাৎ, এ দুটো অঙ্গ ছাড়াও মানুষের বেঁচে থাকা সম্ভব। যকৃৎ হচ্ছে এমন একটি অঙ্গ, যার ৮০% নষ্ট হয়ে গেলেও বাকি ২০% থেকে আবার কিছুদিনের মধ্যে পূর্ণ যকৃৎ তৈরি হয়ে যায়। হৃৎপিণ্ড হচ্ছে সব দিক থেকে ব্যতিক্রম। এর সামান্য অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হলে তা আর ঠিক করা সম্ভব হয় না। হৃদরোগে পৃথিবীর অনেক দেশে সবচেয়ে বেশি মানুষ মৃত্যুবরণ করে থাকে। অন্য কোনো অঙ্গ রোগাক্রান্ত হলে এত দ্রুত মানুষ মৃত্যুবরণ করে না, যেমন হৃদরোগের ক্ষেত্রে হয়ে থাকে। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রোগী হার্ট অ্যাটাক হওয়ার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে বা এক ঘণ্টার মধ্যেই মারা যায়। কাজেই এই হৃৎপিণ্ডের যত্নের ব্যাপারে আমাদের মনোযোগী হওয়া দরকার। হৃৎপিণ্ড যেমন অনেক মূল্যবান, এর চিকিৎসাও তেমনই ব্যয়বহুল। অথচ আমরা অল্প খরচে হৃদরোগ প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিতে পারি। হৃৎপিণ্ডের রয়েছে প্রধানত পাঁচ ধরনের রোগ : ১. জন্মগত রোগ, ২. হৃৎপিণ্ডের ভালভের রোগ, ৩. হৃৎপিণ্ডের মাংসপেশির রোগ, ৪. হৃৎকম্পনজনিত রোগ, ৫. হৃৎপিণ্ডের রক্তনালির রোগ। এর মধ্যে রক্তনালির রোগ সবচেয়ে বেশি মারাত্মক। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রতি বছর প্রায় ১ কোটি ৭৯ লাখ লোক রক্তনালির হৃদরোগে মৃত্যুবরণ করে থাকে, যা সব মৃত্যুর মধ্যে ৩১%। হৃৎপিণ্ডের তিনটি বড় রক্তনালি আছে। এই রক্তনালিগুলোর কোনো একটি হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেলে হার্ট অ্যাটাক হয়। এ রোগ হওয়ার জন্য প্রধানত উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিস, ধূমপান, রক্তে অতিরিক্ত চর্বি দায়ী। তা ছাড়া অস্বাস্থ্যকর খাবার, শারীরিক পরিশ্রমের অভাব, মদ, মেদ, স্ট্রেসফুল লাইফ, প্রতিযোগিতামূলক জীবনপদ্ধতি ইত্যাদি হৃদরোগের ক্ষেত্রে পরোক্ষভাবে দায়ী। হৃদরোগ প্রতিরোধের জন্য তেল, ঝাল ও চর্বিবিহীন নানারকম ডায়েটের পরামর্শ দেওয়া হয়। অথচ প্রমাণিত যে, লিভার আমাদের রক্তের চর্বি ৮০% তৈরি করে। মাত্র ২০% চর্বি আসে খাবার থেকে। অর্থাৎ, এরকম কড়া ডায়েটের গুরুত্ব অনেক কম। গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে নিয়মিত পরীক্ষা করে দেখা যে, কার লিভার বেশি চর্বি তৈরি করছে, বিশেষ করে ৪০ বছর পর থেকে। রাসুল (সা.) সব ধরনের খাবারই খেতেন, কিন্তু কম পরিমাণে। গোশত ও শাকসবজি খাওয়ার জন্য মানুষের দুই রকমের দাঁত রয়েছে। গরুর আছে শুধু ঘাস খাওয়ার জন্য দাঁত। আর বাঘ, সিংহ ইত্যাদির আছে শুধু গোশত খাওয়ার জন্য দাঁত। তাতেও বোঝা যায় যে, মহান আল্লাহ আমাদের সব ধরনের খাবার খাওয়ার জন্যই সৃষ্টি করেছেন। হৃদরোগের মতো গুরুত্বপূর্ণ রোগের চিকিৎসায় বিশেষ করে রিং বসানো, বাইপাস ইত্যাদি ক্ষেত্রে যথেষ্ট জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা অর্জন করে চিকিৎসা প্রদান করতে হবে।