বগুড়ায় অন্ধ রোগীদের চোখে আলো ফোটাচ্ছে গাক চক্ষু হাসপাতাল। ১০০ টাকায় রেজিস্ট্রেশন করে চোখের রোগ নির্ণয় করা হচ্ছে। এই অল্প টাকায় চোখের বিভিন্ন সমস্যা দূর করতে বিভিন্ন এলাকা থেকে রোগীরা চিকিৎসা নিতে আসছেন এই হাসপাতালে। চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে জীবন ধারণ করছেন তারা। এ ছাড়া চক্ষু রোগীদের স্বল্পমূল্যে উন্নতমানের চক্ষু চিকিৎসা নিশ্চিত করতে কাজ করছে হাসপাতালটি। এখানে অত্যাধুনিক মেশিন দ্বারা ফ্যাকো অপারেশনসহ ছানি অপারেশনের মাধ্যমে চোখের ভিতরের অস্বচ্ছ লেন্স বের করে কৃত্রিম স্বচ্ছ লেন্স পুনঃস্থাপন করে দেশজুড়ে সুনাম কুড়িয়েছে গাক হাসপাতাল। স্বল্পমূল্যে অতিদরিদ্র ও দরিদ্র জনগোষ্ঠী চক্ষু চিকিৎসার মাধ্যমে অন্ধত্ব নিবারণ এবং গণসচেতনতা বৃদ্ধি করতে প্রতিষ্ঠানটি কাজ করে যাচ্ছে।
জানা যায়, ১৯৯২ সালে বগুড়ায় প্রতিষ্ঠা করা হয় গ্রাম উন্নয়ন কর্ম (গাক)। বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হিসেবে প্রতিষ্ঠার পর থেকে দারিদ্র্যবিমোচন, আর্থসামাজিক উন্নয়ন বিষয়ে কাজ করছে সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা নির্বাহী পরিচালক ড. খন্দকার আলমগীর হোসেন। এ ছাড়া কর্মকর্তাগণ দারিদ্র্যবিমোচন কাজ পরিচালনা করতে গিয়ে মাঠপর্যায়ে কিছু পরিবারে চোখের সমস্যার খোঁজ পান। চোখে কম দেখে, অর্থাভাবে চোখের চিকিৎসা করাতে না পারা, চোখের চিকিৎসার নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠানের অভাবে এবং এ বিষয়ে ভালো ধারণা না থাকায় চিকিৎসা গ্রহণ থেকে পিছিয়ে পড়ে জটিল আকার ধারণ করত। এসব অবহেলিত দরিদ্র মানুষের চিকিৎসায় ২০১৫ সালে বগুড়ার বনানীতে গাক চক্ষু
হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা হয়। পরবর্তীতে ২০২১ সালে দিনাজপুর ও ২০২২ সালে ঢাকায় চক্ষু হাসপাতাল স্থাপন করে পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোতে চক্ষু চিকিৎসা এবং সংস্থার কর্ম এলাকার প্রত্যন্ত অঞ্চলে চক্ষু ক্যাম্প আয়োজনের মাধ্যমে চক্ষু রোগীদের বিনামূল্যে সেবা প্রদান করা হচ্ছে।
গাক এর উপ-পরিচালক (পিএসটুইডি) মো. আরমান হোসেন জানান, গাক চক্ষু হাসপাতাল প্রতি মাসে চক্ষু চিকিৎসাসেবা প্রদানের লক্ষ্যে বিভিন্ন অঞ্চলে ফ্রি চক্ষু ক্যাম্পের আয়োজন করে। এ ছাড়াও উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় এ ধরনের ক্যাম্প আয়োজন করে বিনামূল্যে চক্ষু চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৫ লাখ চক্ষু রোগীকে স্বল্প ও বিনামূল্যে চক্ষু চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হয়েছে। স্বল্পমূল্যে অতিদরিদ্র ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর চক্ষু চিকিৎসার মাধ্যমে অন্ধত্ব নিবারণ এবং গণসচেতনতা বৃদ্ধি করতে প্রতিষ্ঠানটি কাজ করে যাচ্ছে।
গ্রাম উন্নয়ন কর্ম (গাক)-এর প্রতিষ্ঠাতা নির্বাহী পরিচালক ড. খন্দকার আলমগীর হোসেন জানান, বর্তমানে হাসপাতালে দ্রুততম সময়ের জন্য যদি কেউ চোখ দেখাতে চান তার জন্য ফাস্ট ট্রাক ইউনিট খোলা আছে। যেখানে একজন কনসালট্যান্ট সার্বক্ষণিক দ্রুত সার্ভিস দেওয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছেন। ফাস্ট ট্রাক ইউনিটের সব টেস্টের মেশিনপত্র আলাদা করে রাখা আছে। যাতে দ্রুত সার্ভিস দেওয়া সম্ভব হয়। এ ছাড়া উত্তরাঞ্চলে ভালো কোনো রেটিনা সার্জন না থাকায় মাসে চার দিন ঢাকা থেকে একজন রেটিনা স্পেশালিস্ট ডক্টর এসে চোখ দেখছেন এবং এভাস্টিন ইনজেকশন দিচ্ছেন। যার ফলে উত্তরাঞ্চলে রেটিনা রোগীদের কষ্ট করে ঢাকায় যেতে হচ্ছে না। একই সঙ্গে গ্লুকোমা রোগীদের জন্য সার্বক্ষণিক একজন গ্লুকোমা স্পেশালিস্ট রোগী দেখছেন এই হাসপাতালটিতে। -সি