খোলাফায়ে রাশেদিনের শাব্দিক অর্থ ন্যায়পরায়ণ। ইসলাম ধর্ম প্রচার ও প্রসারে ন্যায়নিষ্ঠ এবং সঠিকভাবে পথের নির্দেশপ্রাপ্ত হন চার খলিফা। ইসলাম ধর্মের শেষ বাণীবাহক নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর পর ইসলামী বিশ্ব শাসনকারী চারজনকে খোলাফায়ে রাশেদিন বলা হয়। তাঁরা মহানবী মুহাম্মদ (সা.)-এর সহচর ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পর ইসলামের প্রচার ও প্রসারে নেতৃত্ব দেন। এই চারজন হলেন- হজরত আবু বকর (রা.), উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.), উসমান ইবনে আফফান (রা.) এবং আলী ইবনে আবু তালিব (রা.)। এসব নিয়ে আজকের আয়োজন...
হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.)
মক্কার বিখ্যাত কুরাইশ বংশে ৫৭৩ খ্রিস্টাব্দে হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাল্য নাম ছিল আবদুল্লাহ। আবু বকর ছিল তাঁর ডাক নাম। তিনি হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রিয় সাহাবি ছিলেন। এ ছাড়া ইসলামের প্রথম মুসলিম পুরুষ হজরত আবু বকর (রা.)। ইসলাম গ্রহণ করার পর তিনি সিদ্দিক (সত্যবাদী) এবং আতিক (দানশীল) খেতাব লাভ করেছিলেন। আবু বকরের (রা.) পিতার নাম ছিল ওসমান। কিন্তু ইতিহাসে তিনি আবু কুহাফা নামেই সুপরিচিত ছিলেন। তাঁর মাতার নাম উম্মুল খায়ের সালমা। আবু বকরের (রা.) মাতা-পিতা উভয়েই বিখ্যাত কুরাইশ বংশের তায়িম গোত্রের ছিলেন। তাঁর মা প্রথম দিকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। পিতা হিজরির অষ্টম বছরে ইসলামে দীক্ষিত হন। আবু বকরের (রা.) স্ত্রী কুতাইলা বিনতে আবদুল উজ্জা ইসলাম গ্রহণ করেননি। তাই আবু বকর (রা) তাকে তালাক দিয়েছিলেন। অন্য স্ত্রী উম্ম রুমান ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। তাঁর ছেলে আবদুর রহমান ইবনে আবি বকর ছাড়া অন্য সবাই ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। ফলে আবু বকরের (রা.) সঙ্গে তার বিচ্ছেদ ঘটে। আবদুর রহমান ইবনে আবি বকর পরবর্তীকালে মুসলিম হয়েছিলেন। আবু বকরের (রা.) ইসলাম গ্রহণ অনেককে ইসলাম ধর্ম গ্রহণে অনুপ্রাণিত করেছে। তিনি তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের ইসলাম গ্রহণে উৎসাহ জোগান। তাঁর দ্বারা উৎসাহিত হয়ে অনেকে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর মৃত্যুর পর তাঁর উত্তরাধিকার নিয়ে মুসলিমদের মধ্যে মতপার্থক্য দেখা দেয়। মুহাজির ও আনসাররা নিজেদের মধ্য থেকে নেতা নির্বাচনের পক্ষে ছিল। কিছু গোত্র পুরনো প্রথা অনুযায়ী গোত্রভিত্তিক নেতৃত্ব ব্যবস্থায় ফিরে যেতে চায়। আনসাররা সাকিফা নামক স্থানে একত্রিত হয়ে এ বিষয়ে আলোচনা শুরু করেন। এরপর আবু বকর, উমর ও আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহ এখানে আসেন। সভার আলোচনার এক পর্যায়ে উমর ইবনুল খাত্তাব আবু বকরের (রা.) প্রতি তাঁর আনুগত্য প্রকাশ করেন। আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহও তাঁর অনুসরণ করেন। এরপর বাকিরাও আবু বকর (রা.) কে নেতা হিসেবে মেনে নেন। সুন্নিরা তাঁকে ‘খলিফাতুর রসুল’ বা ‘আল্লাহর রসুলের উত্তরাধিকারী’ বলে সম্মান করে থাকেন। আবু বকর (রা.) ছিলেন ইসলামের এক জ্বলন্ত নক্ষত্র।
তাঁর শাসনামলে ইসলাম ও জনগণের জন্য তিনি যুদ্ধও করেছেন। আবু বকরের (রা.) খিলাফত ২৭ মাস অর্থাৎ দুই বছরের কিছু বেশি সময় স্থায়ী ছিল। এই সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে তাঁকে বেশ কিছু অস্থিতিশীলতার সম্মুখীন হতে হয়। তা তিনি সফলভাবে মোকাবিলা করেছিলেন। নতুন নবী দাবিকারী বিদ্রোহীদের তিনি রিদ্ধার যুদ্ধে দমন করেছেন। তিনি বাইজেন্টাইন ও সাসনীয় সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেন। যা ইতিহাসের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। পরে হজরত উমর (রা.) ও হজরত উসমান (রা.) অভিযান অব্যাহত রেখেছিলেন। এসব অভিযানের ফলে মুসলিম সাম্রাজ্য কয়েক দশকের মধ্যে শক্তিশালী হিসেবে আবির্ভূত হয়। খলিফা হওয়ার পর তিনি অন্যদের পরামর্শক্রমে তাঁর কাপড়ের ব্যবসা ছেড়ে দেন। রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে ভাতা গ্রহণ করতেন। এই মহান খলিফা শুধু জীবিত অবস্থায় নয়, মৃত্যুর পরেও সবার চোখের মণি ছিলেন। ৬৩৪ সালের ২৩ আগস্ট অসুস্থ হয়ে পড়েন। অসুস্থতার মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় তিনি বিছানায় শায়িতাবস্থায় থাকেন। আবু বকর (রা.) তাঁর উত্তরসূরি মনোনীত করার জন্য প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। যাতে তাঁর মৃত্যুর পর মুসলিমদের মধ্যে সমস্যা দেখা না দেয়। অন্যান্য সাহাবিদের সঙ্গে পরামর্শ করে তিনি হজরত উমর (রা.) কে তাঁর উত্তরসূরি হিসেবে নিয়োগ দেন। ৬৩৪ সালের ২৩ আগস্ট আবু বকর (রা.) মারা যান। হজরত আয়েশার ঘরে হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর পাশে তাঁকে দাফন করা হয়।
হজরত উমর (রা.)
হজরত উমর (রা.) একদিন মুসলমানদের প্রিয় নবী রসুল (সা.)-এর অজ্ঞাতসারে তাঁর মুখে পবিত্র কোরআনের আবৃত্তি শোনেন। এরপর তাঁর মনে ভাবান্তর ঘটার বর্ণনা পাওয়া যায়। একদিন ভগ্নি ও ভগ্নিপতিকে ইসলাম গ্রহণের জন্য নির্দয়ভাবে শাসন করতে গিয়ে নিজেই ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েন। রসুল (সা.)-এর কাছে উপস্থিত হয়ে ইসলাম গ্রহণ করেন। ইসলাম গ্রহণের ফলে তাঁর জীবনের আমূল পরিবর্তন হয়। পরবর্তীকালে তিনি ইসলামের সেবার অক্ষয় কীর্তি রেখে যান। হিজরতের চার বছর পূর্বে যখন তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন, তখন তাঁর বয়স ছিল ২৬ বছর। এরপর তিনি পূর্ণ শক্তিতে ইসলামের খিদমতে নিয়োজিত হয়ে পড়েন। মদিনায় তাঁর ব্যক্তিগত উদ্যম এবং মনোবলের প্রভাবেই তিনি রসুল (সা.)-এর প্রতিষ্ঠিত ইসলামী সমাজে মর্যাদা লাভ করেন। সৈনিক হিসেবেও তাঁর প্রভূত খ্যাতি ছিল। তিনি বদর, উহুদ ও অন্যান্য যুদ্ধে যোগদান করেন। হাদিসে আছে, কোরআনের কয়েকটি স্থানে উমর (রা.)-এর উক্তির সমর্থনে ওহি অবতীর্ণ হয়েছিল। কাবাগৃহের পার্শ্বস্থ মাকামে ইবরাহিমে সালাত আদায়, রসুল (সা.)-এর বিবিগণের সামনে পর্দা পালন ইত্যাদি। সাহাবিগণের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্বে হজরত আবু বকর সিদ্দীক (রা.) হজরত উমর (রা.)-এর অগ্রগণ্য ছিলেন। হজরত উমর (রা.) বিনয় সহকারে তা স্বীকার করতেন। পাশাপাশি সর্বদা হজরত আবু বকর (রা.) কে যথোপযুক্ত সম্মান দেখাতেন। রসুলে করিম (সা.)-এর বিবি হজরত হাফসা (রা.) হজরত উমর (রা.)-এর কন্যা ছিলেন। হজরত আবু বকর (রা)-এর খিলাফতকালে হজরত উমরই (রা.) ছিলেন তাঁর প্রধান উপদেষ্টা। মৃত্যুর পূর্বে তিনি উমর (রা.)-কেই তাঁর স্থলাভিষিক্ত মনোনীত করেন। সাহাবিগণও সর্বসম্মতভাবে উমর (রা.) কে তাঁদের খলিফারূপে গ্রহণ করেন। এভাবে নেতা নির্বাচনের আরবীয় প্রথানুসারে জনগণের সমর্থনের ভিত্তিতেই উমর (রা.) তাঁর খিলাফত শুরু করেন। মুসলিম রাষ্ট্রের পরিধি বৃদ্ধি করার জন্য যুদ্ধ করা তাঁর অভিপ্রেত ছিল না। যেসব সেনাপতি মুসলিমদের প্রয়াসকে সাফল্যম-িত করেছিলেন তিনি ছিলেন তাঁদের সবার চেয়ে উত্তম। এ ক্ষেত্রে তাঁর কৃতিত্ব সর্বজনবিদিত। হজরত উমর (রা.)-এর সময়ই ইসলামী রাষ্ট্রের বাস্তব ভিত্তি স্থাপিত হয়। যখনই কোনো প্রশ্ন বা সমস্যার উদ্ভব হতো তিনি সাহাবিগণকে একত্র করে জিজ্ঞাসা করতেন। সে বিষয়ে হজরত (সা.)-এর কোনো উক্তি বা সিদ্ধান্ত আছে কি না। তিনি আলোচনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতেন। কোরআন ও সুন্নাহই ছিল তাঁর সংবিধান। বিশিষ্ট সাহাবি আলী (রা.), আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রা.) প্রমুখ ছিলেন তাঁর পরামর্শ সভার সদস্য। তাঁর জীবনযাপনের মান সাধারণ নাগরিকের মতো ছিল। এই বিষয়ে হজরত উমর (রা)-এর দৃষ্টান্ত সত্যই বিরল। উমর (রা.)-এর অন্তরে আল্লাহর ভয় ও ভক্তির মধ্যে দৃশ্যত ভয়ই ছিল প্রবলতর। তিনি যে সম্মান অর্জন করেন তা তাঁর চরিত্রগুণের কারণে। শারীরিক শক্তির জন্য নয়। হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর সত্যিকারের সাহাবি এবং কোরআন ও সুন্নাহর পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুসারী খলিফারূপে মর্যাদার উচ্চ শিখরে সমাসীন থাকাকালে ২৬ জুন ৬৪৪ সালে তিনি মুগিরা ইবনে শুবার খ্রিস্টান ক্রীতদাস আবু লুলুর ছুরিকাঘাতে শাহাদাতবরণ করেন। ইতিহাসে কথিত আছে যে, উমর (রা.)-এর নিকট আবু লুলু তাঁর মনিবের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। উমর (রা.)-এর বিচারে অসন্তুষ্ট হয়ে ব্যক্তিগত আক্রোশের বশে অতর্কিতভাবে তাঁকে হত্যা করেন। মৃত্যুর পূর্বে উমর (রা) ছয়জন বিশিষ্ট সাহাবির নাম উল্লেখ (উসমান এবং আলী (রা.) ও তাঁদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিলেন) করেছিলেন। পরে পরামর্শক্রমে তাঁদের মধ্য থেকে একজনকে খলিফা মনোনীত করার উপদেশ দিয়ে যান। ফলে হজরত ওসমান (রা.) খলিফা মনোনীত হন। উমর (রা.)-এর বিখ্যাত একটি উক্তি রয়েছে, তিনি বলেছিলেন সেই দুর্ভিক্ষের সময়- ‘আজ যদি ফোরাতের তীরে একটা প্রাণীও না খেয়ে মারা যায়, তার জন্য আমি উমর আল্লাহর কাছে দায়ী থাকব।’
হজরত উসমান (রা.)
হজরত উসমান (রা.) ছিলেন কোরআনের বিধানের প্রতি গভীরভাবে অনুরক্ত। দানশীলতায় অগ্রগামী। লজ্জাশীলতায় সর্বকালীন দৃষ্টান্ত। ইসলামের তৃতীয় খলিফা হজরত উসমান ইবনে আফফান (রা.) ৫৭৩ খ্রিস্টাব্দে মক্কার ঐতিহ্যবাহী কুরাইশ বংশে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন অত্যন্ত সুদর্শন ব্যক্তি। ইবনে আসাকির আবদুল্লাহ ইবনে হাজাম মাজেনি থেকে একটি বর্ণনা উদ্ধৃত করে বলেছেন, হজরত উসমান (রা.)-এর জীবনের প্রাথমিক অবস্থার ইতিহাস খুব সামান্যই সংরক্ষিত আছে। ইসলাম গ্রহণের আগে তিনি ছিলেন হানিফ ঘরানার লোক। যাঁরা নিজের বিবেকের নির্দেশনায় খারাপ কাজ থেকে বিরত থেকেছেন। তিনি ছিলেন আরবের মুষ্টিমেয় শিক্ষিত লোকের একজন। তিনি ছিলেন কুরাইশ বংশের অন্যতম কুস্তিবিদ্যায় বিশারদ। কুরাইশদের প্রাচীন ইতিহাস বিষয়েও তিনি ছিলেন গভীর জ্ঞানের অধিকারী। বংশীয় আভিজাত্যের ধারায় তিনি ব্যবসায় নিয়োজিত হন। সর্বোচ্চ সততা ও বিশ্বস্ততার দরুন অল্প সময়েই তিনি অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেন। বিপুল ধন-ঐশ্বর্যের কারণে তিনি গনি উপাধি লাভ করেন। মমতা, সহনশীলতা, আত্মমর্যাদাবোধ, দান ও লজ্জা ছিল তাঁর মহৎ চরিত্রের বৈশিষ্ট্য। তিনি সেই ছয়জন সাহাবির মধ্যে অন্যতম যাদের ওপর হজরত মুহাম্মদ (সা.) আমরণ সন্তুষ্ট ছিলেন। তিনি কুরাইশ বংশের উমাইয়া শাখার সন্তান ছিলেন। তাঁর ঊর্ধ্বতন পুরুষ আবদে মান্নাফে গিয়ে হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর বংশের সঙ্গে মিলিত হয়েছেন। ইসলাম গ্রহণের পর হজরত মুহাম্মদ (সা.) স্বীয় কন্যা রুকাইয়ার (রা.) সঙ্গে তাঁর বিয়ে দেন। হিজরি দ্বিতীয় সনে তাবুক যুদ্ধের পরপর মদিনায় রুকাইয়া (রা.) মারা যান। এরপর নবী (রা.) তাঁর দ্বিতীয় কন্যা উম্মে কুলসুমের (রা.) সঙ্গে তাঁর বিয়ে দেন। এ কারণেই তিনি মুসলিমদের কাছে যুন-নূরাইন বা দুই জ্যোতির অধিকারী হিসেবে খ্যাত। উসমান (রা.) এবং রুকাইয়া (রা.) ছিলেন প্রথম হিজরতকারী মুসলিম পরিবার। তাঁরা প্রথম আবিসিনিয়ায় হিজরত করেছিলেন। সেখানে তাঁদের একটি ছেলে জন্ম নেয়। নাম রাখা হয় আবদুল্লাহ ইবনে উসমান (রা.)। কুরাইশদের প্রাচীন ইতিহাস সম্বন্ধে তাঁর অগাধ জ্ঞান ছিল। যৌবনকালে তিনি অন্যান্য অভিজাত কুরাইশদের মতো ব্যবসা শুরু করেন। ব্যবসা খাতে তার সাফল্য ছিল ঈর্ষণীয়। মক্কার সমাজে একজন ধনী ব্যবসায়ী ছিলেন বলেই তার উপাধি হয়েছিল গনি যার অর্থ ধনী।
হজরত ওসমান (রা.) প্রথম পর্যায়ে ইসলাম গ্রহণকারীদের অন্যতম। হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.)-এর উৎসাহে তিনি দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেন যৌবনে। তিনি নিজেই বলেছেন, ‘আমি ইসলাম গ্রহণকারী চারজনের মধ্যে চতুর্থ।’ হজরত আবু বকর (রা.), হজরত আলী (রা.) ও জায়েদ বিন হারিসের (রা.) পরে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। কুরাইশ বংশের অত্যন্ত সম্মানিত ও বিত্তবান ব্যক্তি হওয়া সত্ত্বেও ইসলাম গ্রহণ করার কারণে তাঁকে কাফিরদের অমানুষিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। সীমাহীন নির্যাতনের পরও তাঁর ইমান একটুও টলেনি। হজরত ওমর (রা.) যখন ছুরিকাহত হয়ে মৃত্যুশয্যায়, তখন তাঁর কাছে পরবর্তী খলিফা মনোনয়নের দাবি উত্থাপিত হলে তিনি বলেন, তোমাদের সামনে এমন একটি দল রয়েছে, যাদের সম্পর্কে রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তাঁরা জান্নাতের অধিবাসী। তাঁরা হলেন হজরত আলী (রা.), উসমান (রা.), আবদুর রহমান (রা.), সাদ (রা.), জুবাইর (রা.) ও তালহা (রা.)। তাঁদের যে কোনো একজনকে খলিফা নির্বাচিত করতে হবে। হজরত উমর (রা.)-এর মৃত্যুকালীন উক্তি থেকে এ কথাই প্রমাণিত হয়, আদর্শের মানদন্ডে উন্নীত রসুল (সা.)-এর জবানে জান্নাতের বাশারাতপ্রাপ্ত ব্যক্তিরাই খিলাফতের যোগ্যতম উত্তরাধিকারী। হজরত উমর (রা.) উল্লিখিত ছয়জনকে নিয়ে একটি বোর্ড গঠন করেন। পরে তিন দিনের সময় বেঁধে দিয়ে বললেন, ‘আমার মৃত্যুর পর তাঁরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিজেদের যে কোনো একজনকে ঐকমত্যের ভিত্তিতে খলিফা মনোনীত করবেন।’ হজরত উমর (রা.)-এর ইন্তেকাল হলো। বোর্ড সদস্যরা রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসলেন, তুমুল তর্ক-বিতর্ক, বাগ্বিতন্ডা চলল। সময় গড়িয়ে দুই দিন পেরিয়ে গেল। মসজিদে নববী লোকে লোকারণ্য। শেষ দিনে আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রা.) বললেন, আমি আমার খিলাফতের দাবি ত্যাগ করছি। এবার তোমরা তোমাদের মধ্যে যোগ্যতম ব্যক্তি নির্বাচনের দায়িত্ব আমাকে অর্পণ করতে পার। সবাই খলিফা নির্বাচনের ক্ষমতা আবদুর রহমান বিন আউফ (রা.) কে অর্পণ করলেন। অতঃপর উমর (রা.) কর্তৃক বেঁধে দেওয়া সময়ের শেষ দিনে ফজরের নামাজের পর মসজিদে নববীতে সমবেত মদিনাবাসীর উদ্দেশে এক সংক্ষিপ্ত ভাষণের পর তিনি খলিফা হিসেবে হজরত উসমান (রা.)-এর হাতে বাইয়াত গ্রহণ করেন। এভাবে মানবতাবাদী, ক্ষুধা-দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে সদা তৎপর, বিনয় ও ভদ্রতার অবতার হজরত উসমান (রা.) খিলাফতের দায়িত্ব লাভ করেন। দায়িত্ব গ্রহণের পরে হজরত উসমান (রা.) পুরো রাজ্যজুড়ে বেশ কজন নির্দেশকারী তথা দূত নিযুক্ত করেছিলেন। তাঁদের দায়িত্ব ছিল হজরত উমর (রা.)-এর প্রণয়নকৃত আইনসমূহকে অধিষ্ঠান করা। তাঁরা উসমান (রা.)-এর রাজ্য বিস্তৃত করেছিলেন পশ্চিম থেকে পুরো মরোক্কো পর্যন্ত।
পূর্ব-দক্ষিণ পূর্ব তথা বর্তমান পাকিস্তান পর্যন্ত এবং উত্তর আমেরিকা থেকে আজারবাইজান পর্যন্ত উসমান (রা.)-এর রাজত্বকালে তিনিই সর্বপ্রথম ইসলামিক নৌবাহিনী গড়ে তুলেছিলেন। উসমান (রা.) অনেক বিশিষ্ট সাহাবাদের তাঁর নিজস্ব প্রতিনিধি হিসেবে, রাজত্বের অবস্থা, জনগণের সুযোগ-সুবিধা, অসুবিধা, অবস্থা, প্রশাসনিক ব্যবস্থা, তাঁর বাস্তবায়ন খতিয়ে দেখার লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রদেশে পাঠাতেন। উসমান (রা.) ১২ বছর যাবৎ খলিফা হিসেবে রাজত্ব করেছিলেন। এই রাজত্বকালের প্রথম ছয় বছর রাজ্যের শান্তি প্রতিষ্ঠার কাজে ব্যয় করেছিলেন। তিনি খুব খোলাফায়ে রাশেদিনদের মধ্যে অনেক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। বিপুল ধন-ঐশ্বর্যের মালিক হজরত ওসমান (রা.) মুসলিম জাহানের খলিফা নির্বাচিত হওয়ার পরও অনাড়ম্বর-জীবন যাপন করতেন। হজরত হাসান (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হজরত ওসমান (রা.) মসজিদে নববীতে মাথার নিচে চাদর দিয়ে শুয়ে থাকতেন। মানুষ তাঁর পাশে এসে বসত। তিনি তাদের সঙ্গে কথা বলতেন। মনে হতো তিনি তাদেরই একজন। জুবাইর ইবনে আবদুল্লাহ বর্ণনা করেন, ‘হজরত ওসমান (রা.) সারা বছর রোজা রাখতেন। সারা রাত নামাজ পড়তেন। রাতের প্রথমার্ধে একটু ঘুমাতেন। হজরত উসমান (রা.) তাঁর শাসনামলের প্রথম দিকে রাজনৈতিক, প্রশাসনিক, সামরিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করেন। তাঁর জনহিতকর কার্যাবলি সমাজের অবয়ব পরিবর্তন করে দিয়েছিল। খাল খনন করে কৃষিতে উন্নতি সাধন করেন। পয়ঃপ্রণালি ও রাস্তাঘাট নির্মাণ করে জনগণের অত্যন্ত প্রিয় খলিফায় পরিণত হন। মসজিদে নববীর আধুনিকায়ন করেন তিনি। তাঁর সময় অর্থনৈতিক সচ্ছলতা মদিনার ঘরে ঘরে পৌঁছে গিয়েছিল। কোনো আয়াত বা সুরা নাজিলের পরপর সাহাবাদের মুখস্থ করতে ও লিখে রাখতে নির্দেশ দেওয়া হতো। প্রকৃতপক্ষে রসুল (সা.)-এর জীবিতকালে কোরআন সংকলন ও সংরক্ষিত হয়েছিল। যখন কোনো আয়াত রসুল (সা.)-এর প্রতি নাজিল হতো। তিনি অনতিবিলম্বে তা মুখস্থ করে নিতেন। পরে সাহাবাদের শোনাতেন এবং তাঁদের মুখস্থ করতে ও লিখে রাখতে বলতেন। এ ছাড়া শুদ্ধতা যাচাই করতেন অর্থাৎ সাহাবিদের স্মরণশক্তি পরীক্ষা করে দেখতেন। তিনি সাহাবিদের সুরার ধারাবাহিকতা বলে রাখতেন। যেমন- প্রথম যে সুরা নাজিল হয়েছে সুরা আলাক যা পবিত্র কোরআনে ৯৬ নং সুরা। যা তিনি জিবরাইল (আ.)-এর মাধ্যমে জানতে পেরেছেন। প্রতি রমজানে রসুল (সা.) জিবরাইল (আ.) দ্বারা পুনরাবৃত্তি করতেন। তাঁর মৃত্যুকালীন বছরে রমজানের সময় তিনি দুবার পুনরাবৃত্তি করছিলেন। কোরআন সংরক্ষিত হয়েছিল বিভিন্ন আঙ্গিকে-গাছের বাকলে, চমড়ায়, উটের সেডলে, সমতল পাথরে, গাছের পাতায়। প্রথম খলিফা আবু বকর (রা.)-এর খিলাফতকালে ইয়ামামার যুদ্ধে বহু কোরআনে হাফেজ শহীদ হন। হজরত আবু বকর (রা.) ও ওমর (রা.) সাহাবিগণের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে জায়িদন্ডবিন-সাবিদ (রা.)-কে কোরআন সংকলনের জন্য দায়িত্ব প্রদান করেন। সাহাবিদের একসঙ্গে করে জায়িদন্ডবিন-সাবিদ (রা.) সব কোরআনের আয়াতকে একসঙ্গে করেন। এরপর তা দ্বিতীয় খলিফা হজরত উমর (রা.)-এর তত্ত্বাবধানে আসলে তাঁর হাত হতে হজরত হাফসা (রা.)-এর নিকট পৌঁছায়। আল্লাহ ও তাঁর রসুল (সা.)-এর সঙ্গে হজরত ওসমান (রা.)-এর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। মানবতার কল্যাণে জীবন ও সম্পদ উৎসর্গকারী এসব সাহাবি সম্পর্কে রসুলে খোদা (সা.) বলেছেন, ‘উসমান হলো তাঁদেরই একজন, যাঁরা আল্লাহ ও রসুলকে বন্ধু ভাবেন এবং আল্লাহ ও রসুল তাঁদের বন্ধু ভাবেন। রসুলুল্লাহ (সা.) প্রথম নিজের মেয়ে হজরত খাদিজার (রা.) গর্ভজাত সন্তান রুকাইয়াকে ওসমান (রা.)-এর সঙ্গে বিবাহ দেন। রসুলুল্লাহ (সা.) তাঁকে একাধিকবার জান্নাতের শুভ সংবাদ দিয়েছেন। রসুলে করিম (সা.) বলেছেন, ‘প্রত্যেক নবীরই বন্ধু থাকে। জান্নাতে আমার বন্ধু হবে ওসমান।’ তিনি ছিলেন রসুল (সা.)-এর কাতিবে ওহি দলের অন্যতম। হজরত উসমান (রা.) খিলাফতের মসনদে আসীন হয়েই বড় ধরনের এক সমস্যার সম্মুখীন হন। উবায়দুল্লাহ ইবনে উমার হজরত ফারুকে আজমের হত্যাকান্ডে জড়িত সন্দেহে কয়েকজন নাসারা ও মুনাফিক প্রকৃতির মুসলমানকে হত্যা করেন। হজরত ওসমান (রা.) নিজের সম্পদ থেকে নিহতদের ওয়ারিশদের রক্তপণ দেওয়ার মাধ্যমে বিষয়টি সুরাহা করলেন। ফলে মুসলমানদের ভিতরের সব বিভেদের অবসান হয়। হজরত ওসমান (রা.) অত্যন্ত জনপ্রিয় খলিফা হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যেতে লাগলেন। কিন্তু খলিফার সরলতা, সহিষ্ণুতা ও উদারতার সুযোগে স্বার্থান্বেষী চক্র হজরত ওসমান (রা.)-এর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে মেতে ওঠে। খিলাফতের অষ্টম বছরে হজরত ওসমান (রা.) স্বজনপ্রীতি, কোরআন দগ্ধীকরণ, চারণভূমির রক্ষণাবেক্ষণ, আবুজর গিফারির নির্বাসন, বাইতুল মালের অর্থ অপচয় ইত্যাদি অভিযোগে অভিযুক্ত হয়ে বিরুদ্ধবাদীদের চরম বিরোধিতা ও বিদ্রোহের সম্মুখীন হন। হজরত আলী (রা.)-এর সমর্থকদের অপপ্রচার বিদ্রোহের আগুনে ইন্ধন হিসেবে কাজ করে। অথচ খলিফার বিরুদ্ধে আনীত সব অভিযোগই ছিল মিথ্যা, বিভ্রান্তিকর ও অবাস্তব। হাম্মাদ ইবনে সালামা বর্ণনা করেন, ওসমান (রা.) যেদিন খলিফা নির্বাচিত হন, সেদিন তিনি সর্বোত্তম ব্যক্তি ছিলেন। আর যখন তাঁকে লোকেরা হত্যা করল, তিনি সেদিন থেকেও উত্তম ছিলেন যেদিন তাঁকে খলিফা বানানো হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত মিসর, বসরা ও কুফার বিদ্রোহী গোষ্ঠী একাট্টা হয়ে ৬৫৬ খ্রিস্টাব্দে মদিনায় সমবেত হয়ে খলিফার পদত্যাগ দাবি করেন। হজ উপলক্ষে বেশির ভাগ মদিনাবাসী মক্কা গমন করায় তারা এ সময়কেই মোক্ষম সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করেন। খলিফা পদত্যাগে অস্বীকৃতি জানালে তারা হত্যার হুমকি দিয়ে তাঁকে অবরুদ্ধ করে রাখেন। হজরত ওসমান (রা.) রক্তপাতের সম্পূর্ণ বিরোধী ছিলেন। বিশাল মুসলিম জাহানের খলিফা হিসেবে মুষ্টিমেয় বিদ্রোহীর কঠোর শাস্তিদানের পরিবর্তে তিনি তাদের দ্বারা অবরুদ্ধ হয়ে থাকলেন। হজরত আলী, তালহা ও জুবাইর (রা.)-এর ছেলেদের দ্বারা গঠিত ১৮ নিরাপত্তারক্ষী বিপথগামী বিদ্রোহীদের মোকাবিলায় ব্যর্থ হন। অবশেষে তারা ৬৫৬ খ্রিস্টাব্দের ১৭ জুন আসরের নামাজের পর ৮২ বছর বয়স্ক বৃদ্ধ খলিফাকে অত্যন্ত বর্বরভাবে হত্যা করে।
হজরত আলী (রা.)
হজরত আলী (রা.) ইসলামের চতুর্থ ও শেষ খলিফা। তিনি কুরাইশ বংশে জন্মগ্রহণ করেন। শিশু বয়স থেকেই তিনি হজরত মুহাম্মদের (সা.) সঙ্গে লালিত-পালিত হন। ইসলামের ইতিহাসে তিনি পুরুষদের মধ্যে সর্বপ্রথম যিনি হজরত মুহাম্মদের (সা.) সঙ্গে নামাজ আদায় করতেন। বালকদের মধ্যে তিনি সর্বপ্রথম বালক যিনি নবুয়তের ডাকে সাড়া দিয়ে মাত্র ১০ বছর বয়সে ইসলাম গ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন একজন অকুতোভয় যোদ্ধা। বদর যুদ্ধে বিশেষ বীরত্বের জন্য মুহাম্মদ (সা.) তাঁকে জুলফিকার নামক তরবারি উপহার দিয়েছিলেন। খাইবারের সুরক্ষিত কামুস দুর্গ জয় করলে মহানবী (সা.) তাঁকে আসাদুল্লাহ বা আল্লাহর সিংহ উপাধি দেন। তিনি ছিলেন রসুল (সা.)-এর কন্যা হজরত ফাতেমা (রা.)-এর স্বামী। রসুল (সা.) যখন মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেন তখন হজরত আলীকে রসুল (সা.)-এর বিছানায় রেখে যান। তিনি সাহসের সঙ্গে সে দায়িত্ব পালন করেন। হজরত আলী (রা.) একজন দুঃসাহসী এবং দক্ষ কৌশলী যোদ্ধা ছিলেন। তিনি হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর সঙ্গে প্রায় সব যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। খেলাফতের নির্বাচনের পরপরই তিনি ইসলামী রাষ্ট্রের রাজধানী মদিনা থেকে ইরাকের কুফায় সরিয়ে নেন। যা ছিল অধিকতর কেন্দ্রীয় একটি স্থান। তাঁর নির্বাচনের পরপরই তিনি জনগণের বিশেষ করে মহানবী (সা.)-এর প্রভাবশালী সাহাবি যেমন হজরত তালহা (রা.) এবং হজরত যুবাইর (রা.) এর উত্থাপিত ‘হজরত উসমান (রা.)-এর হত্যাকারীদের যথাশিগগির শাস্তির দাবির সম্মুখীন হন। হজরত আলী (রা.) ঘোষণা করেন যে, তাঁর সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার রাষ্ট্রের শান্তি-শৃঙ্খলা পুনঃস্থাপন করা এবং কেবল তারপরই তিনি হজরত উসমান (রা.)-এর হত্যাকারীদের বিচারের সম্মুখীন করতে পারবেন। কিন্তু হজরত তালহা (রা.) এবং হজরত জুবাইর (রা.), হজরত আলী (রা.) এই সিদ্ধান্তে রাজি হননি। তাঁরা সৈন্যবাহিনী প্রস্তুত করা শুরু করেন। হজরত আয়েশা (রা.), যিনি প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে অবগত ছিলেন না। তিনিও হজরত উসমানের (রা.) হত্যাকারীদের শাস্তি দেওয়ার উদ্দেশ্যে হজরত তালহা (রা.) এবং হজরত জুবাইর (রা.)-এর সঙ্গে যোগ দেন। তিনজনে মিলে বসরার উদ্দেশ্যে এক দল সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব দেন। হজরত আলী (রা.) যুদ্ধ এবং রক্তপাত এড়াতে চেষ্টা করেন। কিন্তু তাঁর সব প্রচেষ্টা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, তাঁর এবং হজরত আয়েশা (রা.)-এর সৈন্যবাহিনীর মধ্যে যুদ্ধ হয়। যদিও হজরত তালহা (রা.) এবং হজরত যুবায়ের (রা.) যুদ্ধের আগেই সেনাবাহিনী ত্যাগ করেন। অন্য কোনো শত্রুর দ্বারা নিহত হন। হজরত আয়েশার (রা.) সৈন্যরা পরাজিত হয় কিন্তু হজরত আলী (রা.) তাঁকে যথাযথ শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেন। তাঁর নিরাপত্তার খেয়াল রাখেন। তিনি তাঁর ভাই মোহাম্মদ বিন আবু বকর (রা.) এর রক্ষাবেষ্টনীতে তাঁকে মদিনায় প্রেরণ করেন। এটি ‘উটের যুদ্ধ’ নামে খ্যাত। কারণ হজরত আয়েশা (রা.) যুদ্ধের সময় উটের ওপর সওয়ারি ছিলেন। পরবর্তীতে হজরত আয়েশা (রা.) জীবনভর হজরত আলী (রা.)-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য অনুতপ্ত ছিলেন। উটের যুদ্ধের পর হজরত আলী (রা.), হজরত মুয়াবিয়া (রা.) কে, যিনি তখনো তাঁর হাতে বায়আত গ্রহণ করেননি। ইসলামের বৃহত্তর স্বার্থে তাঁর নিকট আত্মসমর্পণ করার আহ্বান জানান। কিন্তু হজরত মুয়াবিয়া (রা.) এই অজুহাতে তাঁর কাছে নিজেকে সমর্পণ করেননি যে, হজরত উসমান (রা.) যিনি উমাইয়া বংশোদ্ভূত ছিলেন। তাঁর রক্তের প্রতিশোধ প্রথমে নিতে হবে। এই বিপর্যস্ত পরাজয়ের পর খারেজিরা হজরত আলী (রা.), হজরত মুয়াবিয়া (রা.) এবং আমর বিন আস (রা.) কে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরবর্তী দুজন হত্যা প্রচেষ্টা হতে বেঁচে যেতে সক্ষম হন। হজরত আলী (রা.) ফজরের নামাজের জন্য মসজিদে যাওয়ার সময় আক্রমণকারীর দ্বারা গুরুতর আহত হন। দুই দিন পর এই অমিত সাহসী এবং ধর্মপ্রাণ খলিফা ৪০ হিজরির ২০ রমজানে পরলোকগমন করেন। তিনিও সেই ১০ জন সৌভাগ্যশালীদের একজন মহানবী (সা.) যাঁদের বেহেশতের সুসংবাদ প্রদান করেছিলেন।