সকাল থেকে রাত পর্যন্ত প্রায় ১৪ ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকার পর ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাবার পরিকল্পনা ত্যাগ করে ঢাকায় ফিরে এসেছেন আবু সাদাত। বাংলাদেশে ঈদের দীর্ঘ ছুটিতে ঢাকা শহর ছেড়ে যাচ্ছেন যে লক্ষ লক্ষ মানুষ, তাদের অনেকে শুক্র ও শনিবার বিভিন্ন মহাসড়কে যানজটে আটকে পড়ে দীর্ঘসময় ধরে চরম দুর্ভোগের শিকার হন।
টাঙ্গাইলের কাছে উত্তরাঞ্চলগামী মহাসড়কে যানজট এত ভয়াবহ ছিল যে, বিক্ষুব্ধ কিছু যাত্রী সেখানে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেন।
যানজটে পড়ে বাড়ি যেতে ব্যর্থ হয়ে অনেকেই শেষে ঢাকায় ফিরে আসেন। তাদের মধ্যে একজন ঢাকার আবু সাদাত, যিনি পেশায় ঢাকার একটি টিভি চ্যানেলের সাংবাদিক। শুক্রবার সকালে ঢাকার মিরপুর এলাকা থেকে সপরিবারে একটি মাইক্রোবাসে করে ঈদের ছুটিতে দেশের বাড়ি পাবনার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলেন আবু সাদাত। ঢাকা থেকে সেখানে পৌঁছাতে চার থেকে সাড়ে চার ঘন্টার বেশি লাগার কথা নয়। কিন্তু টাঙ্গাইলের করটিয়া থেকে শুরু হলো যানজট। করটিয়া থেকে যমুনার ওপারের হাটিকুমরুল পর্যন্ত অন্তত ৩০ কিলোমিটার পথ জুড়ে রাস্তার ওপর আটকে গেল হাজার হাজার বাস, ট্রাক, গাড়ি। এমনই অবস্থা যে করটিয়া থেকে চার কিলোমিটার দুরের এলেঙ্গা পর্যন্ত যেতে লেগে গেল ১৪ ঘন্টা।
আবু সাদাত বলেন, ততক্ষণে রাত আটটা বেজে গেছে। এর মধ্যে আমার শিশু কন্যার খাবার শেষ হয়ে গেল। মহাসড়কের পাশে এমন দোকানপাটও নেই যেখান থেকে কিছু খাবার কেনা যায়, যাত্রার বাকি সময়টা পার করার মতো। ওই অবস্থায় আমার মনে হলো যে না, এটা সম্ভব না। আমি গুগল সার্চ করে দেখলাম যমুনা সেতুর পারেও যানজট চলছে, একই অবস্থা। তখন সিদ্ধান্ত নিলাম, না - বাড়ি যাবো না। এলেঙ্গা থেকে গাড়ি ঘোরানো হলো। যে পথটা আসতে আমার ১৪ ঘন্টা লেগেছিল, ঢাকা ফিরে আসার সময় সেই পথটুকু পার হতে আমার সময় লাগলো মাত্র দুই ঘন্টা। রাস্তার একটা পাশ ছিল একেবারে ফাঁকা। অথচ দিনের শুরুতে অবস্থা মোটেও এমন ছিল না।
ঢাকার উপকণ্ঠে গাজিপুরের পর চন্দ্রা হচ্ছে এমন একটি জায়গা যেখানে মহাসড়কে প্রায়ই যানজট হয়। কিন্তু শুক্রবার সকাল বেলা সেই জায়গাটিতে রাস্তা ফাঁকা পেলেন তারা, মনে করলেন আজ আর কোন অসুবিধা হবে না। কিন্তু মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজ পার হবার পর করটিয়া থেকে শুরু হলো যানজট। তখনো সকাল আটটা বাজেনি। কিন্তু বেলা বাড়তে থাকলো, আর বাড়তে থাকলো গরম।
আবু সাদাত বলেন, যেমন তেমন গরম নয়। প্রচণ্ড গরম, কড়া রোদ, আর রাস্তায় নানা জায়গায় চলছে সংস্কার কাজ সেখান থেকে উড়ে আসছে ধূলো। তার মধ্যে রাস্তায় মাইলে পর মাইল জুড়ে আটকে থাকা বাস, ট্রাক, মাইক্রো্বাস আর গাড়ির ভেতর আটকে রয়েছেন হাজার হাজার নারী-পুরুষ-শিশু। যাদের যানে এসি আছে তারা হয়তো একটু স্বস্তিকর পরিবেশে ছিলেন, কিন্তু অন্যদের অবস্থা হলো ভয়াবহ। দেশের নানা প্রান্ত থেকে যেসব ট্রাক ঢাকায় কুরবানির গরু নিয়ে এসেছিল, ফিরে যাবার সময় সেই খোলা ট্রাকগুলোতে চড়েই গ্রামে ফিরছিলেন হাজার হাজার নিম্ন আয়ের মানুষ। তাদের অবস্থা এতটাই খারাপ হয়ে পড়লো যে ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। একটি পরিবারকে আমি দেখছিলাম তারা কলার পাতা কেটে নিয়েছে মাথার ওপর একটু আচ্ছাদন দিয়ে রোদ থেকে বাঁচবার জন্য। সেই জায়গাটায় পথের ওপর তিন ঘণ্টা আটকে থাকার পর কলার পাতাগুলো মরে গেছে, তা আর মাথায় দেয়া যাচ্ছিল না - এতই গরম।
সাথে যোগ হলো পানির অভাব। আশপাশে কোন রেস্তোরাঁ জাতীয় কিছু নেই। ফলে অনেকে কাছাকাছি কোন বাড়ি দেখা গেলে সেখান থেকে পানি নিয়ে আসতে লাগলেন।
এরকম দীর্ঘ সময়ব্যাপী যানজটে বিশেষত: মেয়েদের জন্য বাথরুমের সমস্যা একটা দুর্বিষহ অবস্থা তৈরি করে। এখানেও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
আবু সাদাত বলেন, আমার এক কলিগের স্ত্রী - তিনি একাই যাচ্ছিলেন। ততক্ষণে রাত হয়ে গেছে। এরকম পরিস্থিতিতে দরকার রাস্তার পাশের কারো বাড়ি বা পেট্রোল পাম্পে যাওয়া। মহিলাকে একটি পেট্রোল পাম্প খুঁজে পাবার জন্য কুড়ি মিনিট ধরে অন্ধকারের মধ্যে মহাসড়কের ওপর হাঁটতে হলো। তার পর তিনি যখন আবার উল্টো হেঁটে আগের জায়গায় ফিরে এলেন, তখন তিনি দেখলেন তিনি যে বাসটিতে যাচ্ছিলেন সেটাকে আর দেখা যাচ্ছে না। অবশেষে বাসের ড্রাইভার কন্ডাকটরকে ফোন করে অনেক কষ্টে তিনি বাসটা খুঁজে পেলেন। এমন প্রচণ্ড গরম ছিল যে কিছু যাত্রী রাস্তার পাশের খাল বা পুকুরে গোসল করে নিয়েছেন।
তবে কয়েকজন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তাদের কাছে থাকা পানির বোতল অন্য তৃষ্ণার্ত লোকদের দিয়ে দিচ্ছেন - এমন দৃশ্যও দেখেছেন আবু সাদাত।
ঢাকা টাঙ্গাইল মহাসড়কের এই যানজটে ঈদ উপলক্ষে ঘরমুখো যাত্রীদের দুর্ভোগে দুঃখ প্রকাশ করেছেন সড়ক, পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা
 
                         
                                     
                                                             
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                        