ধান-আলু ও সবজিতে বাম্পার ফলনের পর ভুট্টার আবাদে ঝুঁকে পড়েছেন বগুড়ার কৃষক। বাজারে ভালো চাহিদা ও লাভজনক হওয়ায় জেলায় বেড়েই চলেছে ভুট্টার চাষ। লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে জেলায় চলতি মৌসুমে তিন হাজার হেক্টর বেশি জমিতে ভুট্টার আবাদ হয়েছে। কৃষি বিভাগ বলছে, বাজারে ভুট্টার চাহিদা ও দাম বেশি হওয়ার কারণে চাষিরাও ভুট্টা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।
জানা গেছে, প্রতি বছর জেলার বিভিন্ন উপজেলায় কম-বেশি ভুট্টার আবাদ হয়ে থাকে। তবে চলতি বছরে ভুট্টার আবাদ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। আবহাওয়া অনূকুলে থাকায় বাম্পার ফলন হয়েছে। বগুড়া সদর, সারিয়াকান্দি, সোনাতলা, ধুনট, শেরপুর, নন্দীগ্রাম, শিবগঞ্জ, কাহালু, আদমদীঘি, দুপচাঁচিয়া, শাজাহানপুর উপজেলায় ভুট্টার চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে সোনাতলা, সারিয়াকান্দি ও ধুনট উপজেলার যমুনা ও বাঙালী নদীর চরে শতশত একর জমিতে এবার ভুট্টা চাষ করা হয়েছে। কম খরচে অধিক লাভ হওয়ায় উপজেলাগুলোতে ভুট্টার চাষ ব্যাপক হারে বেড়েছে। লাভজনক এই ভুট্টা চাষে কৃষকদের আগ্রহী করে তোলার লক্ষ্যে জেলা কৃষি অধিদপ্তর পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। একই সাথে কৃষকদের সার বীজ ও কৃষি পুনর্বাসনসহ সহায়তা দিয়ে উৎসাহী করছে।
ফলে দিন দিন কৃষকের আগ্রহ বাড়ছে ভুট্টা চাষে। মানুষের খাদ্যের পাশাপাশি মাছ, হাঁস-মুরগী ও গো-খাদ্য হিসেবে ভুট্টার ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় এর চাহিদাও বেড়েছে। ভুট্টা গাছের পাতা সুষম গো-খাদ্য এবং কান্ড জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়, ফলে একদিকে যেমন কৃষক তার গবাদি পশু পালন ও জ্বালানি চাহিদা মেটাতে পারে অপরদিকে বাজারে ভুট্টার ব্যাপক চাহিদা থাকায় কৃষক এ ফসলে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। জেলার বিভিন্ন উপজেলায় এখন ভুট্টা কাটা, মাড়াই করে ঘুরে তুলছেন কৃষকরা।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রায় দুই যুগ আগে জেলায় ভুট্টার আবাদ হতো মাত্র ২ হাজার ১৬৪ হেক্টর জমিতে। পর্যায়ক্রমে চাষ বেড়েই চলেছে। বাজারে ভুট্টার চাহিদা ও ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় এখন ভুট্টার চাষ বেড়েছে ৪ গুণ।
বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার হুয়াকুয়া গ্রামের কৃষক মুছা মন্ডল জানান, এ বছর তিনি সাড়ে ৪ বিঘা জমিতে ভুট্টার চাষ করেছেন। মাড়াই শুরু করার পর প্রতি বিঘায় ৩৫ মণের উপরে ভুট্টা পাবেন। বাজারে গত বছর প্রতি মন ভুট্টা বিক্রি হয়েছে ৯০০ টাকা থেকে ১১শ টাকা পর্যন্ত। উৎপাদন খরচের তুলনায় দ্বিগুণ দামে ভুট্টা বিক্রি করতে পেরে খুশি তিনি। চলতি বছর বাজারে ভুট্টা বিক্রি হয়েছে ১ হাজার থেকে ১২০০ টাকা মন। তিনি বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার আবাদ বেশি হয়েছে।
শাজাহানপুর উপজেলার খলিসাকান্দি গ্রামের ভুট্টাচাষি মিজানুর রহমান জানান, এবার সাড়ে চার একর জমিতে তিনি আগাম ভুট্টার আবাদ করেছেন। আগাম ভুট্টা চাষে রোগ বালাই কম হয়। ৪ থেকে ৫ মাসের মধ্যেই ঘরে চলে আসে ভুট্টা। বীজ, সার, পানি, জমি প্রস্তুত লাগানো, শ্রমিক মজুরি, কাটা-মাড়াইসহ প্রতি বিঘায় তাদের খরচ হয় সর্বোচ্চ ১২ থকে ১৪ হাজার টাকা। ভুট্টার আবাদ বিঘাতে গড়ে ৩৫ থেকে ৪০ মণ হয়।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা ফরিদুর রহমান জানান, ভুট্টা চাষ লাভজনক। পরিশ্রম কম ও উৎপাদন খরচও কম। তাই বগুড়ার কৃষকরা কম খরচে বেশী লাভবান হওয়া ভুট্টা চাষে ঝুঁকে পড়েছেন। গত বছর জেলায় ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্র ছিল ১৪ হাজার ৫০০ হেক্টর। চলতি মৌসুমে ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে সাড়ে ১৪ হাজার হেক্টর। ফলন ধরা হয়েছে ১ লাখ ৩১ হাজার মেট্রিক টন। শেষ পর্যন্ত অর্জন হয়েছে ১৭ হাজার ৭২৪ হেক্টর। লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে জেলায় তিন হাজার হেক্টর বেশি জমিতে ভুট্টার আবাদ হয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল