সাধারণত জুলাই থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত এডিস মশার বিস্তার ঘটে বলে এ সময়টাতে ডেঙ্গুজ্বরের প্রকোপ বেশি দেখা যায়। আবার শীতের শুরুতেই ডেঙ্গুর প্রভাব কমতে থাকে। কিন্তু এ বছর ডিসেম্বর মাসেও ডেঙ্গু পরিস্থিতি অনুকূলে নেই। প্রতিদিনই আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন অনেক রোগী। এ পর্যন্ত মারা গেছে অনেক। জনসাধারণকে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা এবং ডেঙ্গু থেকে বাঁচার নানা উপায় জানাতে সারা দেশে সচেতনতামূলক আয়োজন করেছে বসুন্ধরা শুভসংঘ। বসুন্ধরা শুভসংঘ বন্ধু ও প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য ও ছবিতে কয়েকটি আয়োজনের বিস্তারিত তুলে ধরেছেন জাকারিয়া জামান-
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সচেতনতামূলক সভা
বসুন্ধরা শুভসংঘ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আয়োজনে ডেঙ্গু সচেতনতামূলক সভার আয়োজন করা হয়েছে। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা আয়োজনে অংশ নেন। সভার মূল উদ্দেশ্য ছিল ডেঙ্গু প্রতিরোধে সাধারণ শিক্ষার্থীর করণীয় এবং আশপাশের মানুষকে সচেতন করা, এডিস মশার প্রজননস্থল ধ্বংস করার উপায় নিয়ে আলোচনা।
সবশেষে কর্মসূচির অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীরা ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ক লিফলেট বিতরণ করেন। বসুন্ধরা শুভসংঘের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আমিনুর রহমান বলেন, ‘ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতা সৃষ্টির বিকল্প নেই। এ কর্মসূচি আমাদের একটি ছোট প্রচেষ্টা, যা শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে ডেঙ্গু প্রতিরোধের বার্তা পৌঁছে দিতে সাহায্য করবে।’
আনন্দমোহন কলেজ শাখার গণসংযোগ
ডেঙ্গু প্রতিরোধে শিক্ষার্থীদের সচেতন করতে আনন্দমোহন কলেজে সচেতনতামূলক গণসংযোগ করেছে বসুন্ধরা শুভসংঘ কলেজ শাখার বন্ধুরা। সম্প্রতি আনন্দমোহন কলেজের মৌলভি হামিদ উদ্দিন ভবনে এ আয়োজনটি সম্পন্ন হয়। বসুন্ধরা শুভসংঘ কলেজ শাখার সাধারণ সম্পাদক পূজা চক্রবর্তী লাবণ্যের পরিচালনায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি সৈয়দ নাফিউল হাসান মুবিন। জনসচেতনতামূলক কার্যক্রমটিতে বক্তব্য দেন কলেজ শাখার শিক্ষার্থী উপদেষ্টা আবদুল্লাহ আল মামুন এবং তানজিল আহমেদ। আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘ডেঙ্গু প্রতিরোধে আমাদের যা করণীয় সেসব ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে। দিন এবং রাতে মশারি টাঙিয়ে ঘুমাতে হবে। জমানো পানি রাখা যাবে না এবং ফুলের টব, পুরনো টায়ার, ভাঙা পাত্র, এয়ার কন্ডিশনার ইত্যাদিতে যেখানে পানি জমে থাকে সর্বোচ্চ দুই-তিন দিনের মধ্যে সেগুলো পরিবর্তন করতে হবে। নিজের পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং চারপাশে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।’ তানজিল আহমেদ ডেঙ্গু প্রতিরোধের জন্য তরুণ প্রজন্মকে সচেতন থাকার আহ্বান জানান। যেসব কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ডেঙ্গু প্রতিরোধ করা যায়, এডিস মশার জন্মস্থল ধ্বংস করা যায় সে ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করেন। আনন্দমোহন কলেজের বিভিন্ন বিভাগ ও একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বিভিন্ন ক্লাসরুমে সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা হয়। সৈয়দ নাফিউল হাসান মুবিন বলেন, ‘ডেঙ্গু থেকে বাঁচতে সচেতনতাই যথেষ্ট। সবাইকে নিজ নিজ বাসা-বাড়ির আঙিনা পরিষ্কার রাখতে হবে। আতঙ্কিত না হয়ে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে এবং নিয়মিত ওষুধ সেবনে এ রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।’ বক্তারা বসুন্ধরা শুভসংঘ আনন্দমোহন কলেজ শাখাকে এমন চমৎকার সময়োপযোগী কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য ধন্যবাদ জানান এবং ভবিষ্যতেও বসুন্ধরা শুভসংঘ এমন সচেতনতামূলক কর্মসূচি গ্রহণ করার মাধ্যমে দেশ ও মানুষের সেবার কাজ করে যাবে সেই প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন। আয়োজকরা জানান, ‘আমরা ডেঙ্গু নিয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতনতার কাজটি শুরু করেছি। ধীরে ধীরে আমরা পুরো জেলায় আমাদের কাজের পরিধি বিস্তার করব।’ অনুষ্ঠানে ২ শতাধিক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন। পরে শিক্ষার্থীরাও তাদের মতামত প্রকাশ করেন। কর্মসূচিতে সাধারণ শিক্ষার্থী এবং জনসাধারণের মাঝে সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করা হয়। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বসুন্ধরা শুভসংঘ আনন্দমোহন কলেজ শাখার সহসভাপতি জিহাদ হাসান, নাহিদ ফেরদৌস খান, মাহমুদুল হাসান আকাশ, সাধারণ সম্পাদক পূজা চক্রবর্তী লাবণ্য, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক টিটু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জয় সাহা রায়, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক, রাফিউল হাসান তানভীর, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক, সানজিদা হক জিশা, আইনবিষয়ক সম্পাদক তায়্যিবা আক্তার, সহ-ইভেন্ট সম্পাদক তাউছিয়া তাজবীদ ইফতি, প্রচার সম্পাদক, মেহেদী হাসান, কার্যকরী সদস্য জিহাদ আমির, লামিয়া আলম অনন্যা, অলি আহাদ, মাইসারা সুলতানা মৈত্রী, নীরজনা বিনতে হেনা, আনিকা নাওয়া প্রমুখ।
ঘোড়াঘাটে আদিবাসী শিশু শিক্ষার্থীদের নিয়ে সচেতনতা
দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে আদিবাসী শিশু শিক্ষার্থীদের নিয়ে ডেঙ্গু ও স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক সেমিনার করেছে বসুন্ধরা শুভসংঘ উপজেলা শাখার বন্ধুরা। সম্প্রতি উপজেলার কালুপুকুর শিশু শিক্ষাকেন্দ্রে বসুন্ধরা শুভসংঘ ঘোড়াঘাট উপজেলা শাখার সভাপতি মো. তুরাগ খানের সভাপতিত্বে সেমিনারে বক্তব্য দেন কালুপুকুর শিশু শিক্ষাকেন্দ্রের প্রধান শিক্ষক রবিন হাঁসদা। এ সময় বসুন্ধরা শুভসংঘ ঘোড়াঘাট উপজেলা শাখার সহসভাপতি মো. আফ্রিদি কবির রাকা, সাধারণ সম্পাদক মো. কাওছার হাবিব, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক রিপন সরেন, ক্রীড়া সম্পাদক রিদয় বাস্কে, বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক বিপ্লব মার্ডি, সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক হেমন্ত ভিনসেন্ট বিশ্বাস, কর্ম ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক টমাস আলফা, নারীবিষয়ক সম্পাদক এস্ট্রেলা হাঁসদা, সদস্য অনন্ত হেমব্রম, আলবেনুসসহ কালুপুকুর শিশু শিক্ষাকেন্দ্রের শিশু শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা উপস্থিত ছিলেন।
রবিন হাঁসদা বলেন, ‘এখনো আদিবাসীরা বিভিন্ন দিক থেকে পিছিয়ে আছে। আপনাদের মাধ্যমেই ঘোড়াঘাট উপজেলায় অনেক আদিবাসী ছেলেমেয়ে শিখতে পারছে, তারাও এতে উপকৃত হচ্ছে। এই প্রথম আমার এলাকায় ও স্কুলে এ ধরনের কোনো প্রোগ্রাম হলো। অনেক মেয়র, চেয়ারম্যান ক্ষমতায় থাকলেও কখনো এ ধরনের সচেতনতামূলক সেমিনার আগে হয়নি। সচেতনতামূলক এমন আয়োজন করায় আমি বসুন্ধরা শুভসংঘের সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি এবং সবার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি।