ছিনতাইয়ে বাঁধা দেয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত এক সাংবাদিকসহ ছাত্রী লাঞ্ছিতের ঘটনায় ৪ ছাত্রলীগ কর্মীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) প্রশাসন। মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে এ তথ্য জানান। তবে অভিযোগ উঠেছে এ ঘটনার মূল হোতাকে আড়ালে রাখা হয়েছে।
বহিষ্কৃতরা হলেন, ৪৫তম আবর্তনের বাংলা বিভাগের শুভাশিষ ঘোষ, ৪৭ তম আবর্তনের লোক প্রশাসন বিভাগের ইয়া রাফিউ শিকদার, মো মোস্তাফিজুর রহমান ও মো সোহেল রানা।
রেজিস্ট্রার জানান, প্রক্টরিয়াল বডির প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঘটনার সাথে সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে এমন চার জনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তবে এ ঘটনার পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদনের জন্য চার সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রধান হিসেবে রয়েছেন নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক হারুন অর রশীদ। কমিটিকে বলা হয়েছে আগামী ১৫ কার্য দিবসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে। পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন হাতে পেলে সেই অনুযায়ী প্রকৃত দোষীদের বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কারের শাস্তি প্রদান করা হবে।
গত ২৪ সেপ্টেম্বর সোমবার অভিযুক্ত ওই ছাত্রলীগ কর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুইমিংপুল এলাকায় এক বহিরাগত ফটো সাংবাদিক ও তরুণীর কাছ থেকে ছিনতাই করতে গেলে বাঁধা দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের ৪৩তম আবর্তনের ছাত্র ও বেসরকারি একটি টেলিভিশনের অনলাইনের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত সাংবাদিক মাহমুদুল হক সোহাগ। ছিনতাইয়ে বাঁধা দেয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ কর্মীরা দল বেঁধে সোহাগ এবং তার সাথে থাকা একই বিভাগের ৪৬তম আবর্তনের এক ছাত্রীকে মারধর করে।
মারধরের এই ঘটনায় সোহাগ ও ওই ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এবং উপাচার্য বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন। তাদের দুইজনের লিখিত অভিযোগ অনুযায়ী ৪২তম আবর্তনের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী ও শহীদ রফিক জব্বার হলের সিনিয়র ছাত্রলীগ কর্মী নেজাম উদ্দিন নিলয়ের নেতৃত্বে ৫-৭জন ছাত্রলীগকর্মী তাদেরকে মারধর করে।
কিন্তু যে চারজনকে সাময়িক বহিষ্কার করে পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে সেই চারজনের তালিকায় মারধরের মূল হোতা নেজাম উদ্দিন নিলয়ের নাম নেই। এদিকে মঙ্গলবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা শাখার রেজিস্ট্রার আবু হাসান স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশের কপি বাংলাদেশ প্রতিদিনের হাতে এসে পৌঁছায়। তাতে দেখা যায় নেজাম উদ্দিন নিলয় সহ মোট ৭ জনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। কিন্তু এসব তথ্য নিশ্চিত হওয়ার জন্য রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, “এই বহিষ্কারাদেশের কপিটি সঠিক নয়। এটি খসড়া কপি ছিল।”
৪ জনকে বহিষ্কারের বিষয়ে জানতে চাইলে মারধরের শিকার সোহাগ হতাশা প্রকাশ করে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, “যে চার জন জুনিয়রকে বহিষ্কার করা হয়েছে তারা ছাড়াও আরো কয়েকজন সেখানে ছিল। তাছাড়া যার নেতৃত্বে মারধর করা হয়েছে সেই নিলয়কেই কিছু করা হয়নি। শেষ পর্যন্ত তাকে বিচারের আওতায় আনা হবে কিনা তাই নিয়ে এখন সন্দেহ হচ্ছে।”
বিডি প্রতিদিন/২ অক্টোবর ২০১৮/হিমেল