৩০ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ১ম বর্ষ স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষা। শুরুর দিন থেকেই ভর্তিচ্ছু পরীক্ষার্থী এবং তাদের সাথে থাকা অভিভাবকদের বিভিন্ন সহায়তা দিয়ে আসছে শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শ্রেণির মানুষের কাছে প্রশংসায় ভাসছে তারা। কিন্তু মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টায় দুটি হলের ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, গোলাগুলি আর অগ্নিসংযোগের ঘটনায় এই ছাত্রলীগেই দেখা গেল পুরো বিপরীত দৃশ্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হল এবং আল বেরুনী হলের ছাত্রলীগের মধ্যে ঘটে এই সংঘর্ষের ঘটনা।
এতে প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টার থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানা গেছে। ১৫ জন শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়ে সাভারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী এখনো ৬ জন শিক্ষার্থী সেখানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আল বেরুনী হল সংলগ্ন চৌরঙ্গী এলাকায় মীর মশাররফ হোসেন হলের ১ জন এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের ৩ জন শিক্ষার্থী গান গাইছিলেন। এই চারজনই ৪৫তম আবর্তনের শিক্ষার্থী। এ সময় এক নারী শিক্ষার্থী আল বেরুনী হলের তার কিছু সহপাঠীকে ডেকে এনে তাদের কাছে ওই চারজনের কিরুদ্ধে ‘ইভটিজিং’র অভিযোগ করে। এ নিয়ে ওই চার শিক্ষার্থী এবং ওই নারী শিক্ষার্থীর সহপাঠীদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এরই এক পর্যায়ে আল বেরুনী হলের শিক্ষার্থীরা ওই চারজনকে মারধর করে। এতে মীর মশাররফ হোসেন হলের ছাত্রটি গুরুতর হয়। তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে মীর মশাররফ হোসেন হলের ছাত্রলীগ কর্মীরা ভিড় জমায়।
মীর মশাররফ হোসেন হলের গেটে রাত সাড়ে ১০টায় দায়িত্বরত এক গার্ডের কাছ থেকে জানা যায়, প্রায় ৩০-৪০ জন ছাত্রলীগকর্মী উত্তেজিত কথাবার্তা বলতে বলতে বেরিয়ে যায়। এ সময় তাদের হাতে ছিল ক্রিকেট খেলার স্ট্যাম্প এবং লাঠি।
এরপর রাত ১২টার সময় আল বেরুনী হলের সামনে আল বেরুনী হল ছাত্রলীগ এবং মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। উল্লেখ্য, উভয় গ্রুপের কর্মীরাই শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম আবু সুফিয়ান চঞ্চলের অনুসারী। প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, এ সময় মীর মশাররফ হোসেন হলের ছাত্রলীগ কর্মীদের মধ্য থেকে কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়া হয়। দুই গ্রুপের মধ্যে চলে ইট পাটকেল ছোড়াছুড়ি। মীর মশাররফ হোসেন হলের ৪৪তম আবর্তনের এক শিক্ষার্থীর (খালিদ, নৃবিজ্ঞান, ৪৪তম আবর্তন) বাইকে আগুন ধরিয়ে দেয় আল বেরুনী হলের ছাত্রলীগ কর্মীরা। সব মিলিয়ে চৌরঙ্গী, মেডিকেল সেন্টার, আল বেরুনী হল প্রাঙ্গন, জীববিজ্ঞান অনুষদ এই পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। আল বেরুনী হলের সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় অনেক ভর্তিচ্ছু পরীক্ষার্থী হলটিতে অবস্থান করছিলেন। তারাও এই পরিস্থিতিতে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা এবং শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। সংঘর্ষের সময় মীর মশাররফ হোসেন হলের রবিউল ইসলাম এক রাউন্ড গুলি ছোড়েন বলে অভিযোগ করেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। এ বিষয়ে রবিউল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, “এটা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র। আমার ক্যারিয়ার ধ্বংস করার জন্য এ ধরনের গুজব ছড়ানো হয়েছে। কিছু শিক্ষক ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। তারা দেখেছে আমি কি করেছি, আর কি করিনি। আমি মূলত সংঘর্ষের ঘটনা জানতে পেরে বিষয়টি সমাধান করতে গিয়েছিলাম।”
এদিকে আজ বুধবার সকাল ৮টার দিকে আল বেরুনী হলের সামনে অবস্থিত জীববিজ্ঞান অনুষদের গেটে মীর মশাররফ হোসেন হলের ছাত্রলীগকর্মীদের বিচারের দাবিতে তালা লাগিয়ে দেন। সকাল ৯টা থেকে এই ভবনে ১ম বর্ষের পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল। খবর পেয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম সেখানে উপস্থিত হয়ে তাদেরকে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং যখাযথ বিচার করার আশ্বাস দেন। পরে আল বেরুনী হল ছাত্রলীগ কর্মীরা উপাচার্যের আশ্বাস পেয়ে গেটের তালা খুলে দেন এবং যথাসময়ে ১ম বর্ষের ভর্তিচ্ছুদের ভর্তি পরীক্ষা শুরু হয়।
এসব বিষয়ে প্রক্টর সিকদার মো জুলকারনাইনের কাছে জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে তিনি বলেন, “যে ঘটনাগুলো ঘটেছে এগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শৃঙ্খলাবিধির লঙ্ঘন। ফৌজদারি অপরাধ। আর কোনো অনাকাঙ্খিত ঘটনা যেন না ঘটে সে দিকে আমরা নজর রাখছি। এখন পর্যন্ত যা ঘটেছে তার একটা সুষ্ঠু সামাধান যেন হয় সে বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিশ্চয়ই যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করবে।”
শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি জুয়েল রানা বলেন, “এটি ছাত্রলীগ কেন্দ্রীক কোনো সংঘর্ষের ঘটনা নয়। সাধারণ কিছু শিক্ষার্থীর তুচ্ছ একটি ঘটনা নিয়ে ছাত্রলীগ কর্মীরা নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে জড়িয়েছে। আমি চাইবো ভবিষ্যতে আর কোনো ছাত্রলীগ কর্মী যেন এধরনের ঘটনার সাথে নিজেদেরকে সম্পৃক্ত না করে। আর যারা এই ঘটনার সাথে জড়িত ছিল তাদের বিরুদ্ধে শাখা ছাত্রলীগ উপযুক্ত ব্যবস্থা নিবে এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে এ ঘটনার উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করবে।”
সাধারণ সম্পাদক এস এম আবু সুফিয়ান চঞ্চল বলেন, “যারা এই ঘটনার সাথে জড়িত তারা সংগঠনের আদর্শের সাথে সাংঘর্ষিক কাজ করেছে। তাদের জন্য উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।”
বিডি-প্রতিদিন/০৩ অক্টোবর, ২০১৮/মাহবুব