৩ দিনব্যাপী সুবর্ণ জয়ন্তী (৫০ বছর পূর্তি) উৎসবকে কেন্দ্র করে সাজ সাজ রব বিরাজ করছে বরিশাল শেরে-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সুবর্ণ জয়ন্তী বর্ণিল করতে পুরো মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকা সাজানো হয়েছে নবরূপে।
নানা রংয়ের মনমুগ্ধকর আলোকসজ্জা করা হয়েছে পুরো ক্যাম্পাসে। মেডিকেল কলেজ ছাত্রাবাস মাঠে করা হয়েছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বিশাল বিশেষ প্যান্ডেল। ইতিমধ্যে দেশ-বিদেশে অবস্থানরত শেরে-ই বাংলা মেডিকেল কলেজের সাবেক ছাত্ররা বরিশালে এসে পৌঁছেছেন। রবিবার সুবর্ণ জয়ন্তীর প্রাক উদ্ধোধনী অনুষ্ঠিত হবে। সোমবার বিকেল সাড়ে ৪টায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সুবর্ণ জয়ন্তী অনুষ্ঠান উদ্ধোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রবিবার প্রাক উদ্ধোধনীর দিন সকাল সাড়ে থেকে শুরু হবে অংশগ্রহণকারী প্রাক্তণ ছাত্রদের রেজিস্ট্রেশন ও গিফট বিতরণ। সকাল ১১টায় মেডিকেল কলেজ ছাত্রাবাসে নির্মিত অস্থায়ী বিশেষ প্যান্ডেলে শুরু হবে আলোচনা সভা ও স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠান। বিকেল সাড়ে ৪ টায় শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত স্টেডিয়াম তাদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হবে ক্রীড়ানুষ্ঠান। সন্ধ্যায় আয়োজন করা হয়েছে বিখ্যাত জাদুশিল্পি জুয়েল আইচের জাদু সহ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের।
পরদিন ৮ অক্টোবর সকাল সাড়ে ৮ টায় বর্নাঢ্য র্যালির মধ্য দিয়ে শুরু হবে সুবর্ণ জয়ন্তীর মূল আনুষ্ঠানিকতা। মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাস থেকে শুরু হয়ে র্যালিটি ডিসি বাংলোর সামনে থেকে পুলিশ লাইনস হয়ে বাংলা বাজার-আমতলা বিজয় বিহঙ্গ ঘুরে হাসপাতালের জরুরি বিভাগ চত্তরে গিয়ে শেষ হবে। র্যালিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রী মো. নাসিম এমপি, মন্ত্রী মর্যদার আলহাজ্ব আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ এমপি, জেবুন্নেছা আফরোজ এমপি ও তালুকদার মো. ইউনুস এমপি এবং নবনির্বাচিত মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ সহ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে।
র্যালী শেষে ওই দিন সকাল ১১টা থেকে আবারও স্মৃতিচারণ এবং আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। ওইদিন দুপুরে সুবর্ণ জয়ন্তীর স্মৃতিস্তম্ভ উদ্বোধন করা হবে। বিকেল সাড়ে ৪টায় ভিডিও কনফারেন্সের শেরে-ই বাংলা মেডিকেল কলেজের সুবর্ন জয়ন্তির আনুষ্ঠানিক উদ্ধোধন ঘোষণা করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য মন্ত্রী মো. নাসিম এমপি, মন্ত্রী মর্যদার আলহাজ্ব আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ এমপি, জেবুন্নেছা আফরোজ এমপি ও তালুকদার মো. ইউনুস এমপি এবং নবনির্বাচিত মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ অংশ নেবেন বলে জানিয়েছেন মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. ভাস্কর সাহা। সন্ধ্যায় জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পি কুমার বিশ্বজিৎ’র পরিবেশনায় মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানের তৃতীয় দিন ৯ অক্টোবর সকাল ১০ টায় আবারও শুরু হবে স্মৃতিচারণ ও আলোচনা অনুষ্ঠান। ওই দিন বিকেলে ক্রীড়ানুষ্ঠান এবং সন্ধ্যায় মেডিকেল কলেজের বর্তমান ছাত্র-ছাত্রীদের পরিবেশনায় আয়োজন করা হয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের।
সবগুলো অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করবেন শেবাচিমের প্রাক্তন ছাত্র কল্যান সমিতির সভাপতি ও সুবর্ন জয়ন্তি উদযাপন কমিটির চেয়ারম্যান প্রফেসর ডা. টিআইএমএ ফারুক।
১৯৬৮ সালের ২০ নভেম্বর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গর্ভনর আব্দুল মোন্য়েম খান শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজের উদ্বোধন করেন। এর আগে ১৯৬৪ সালে ৬ নভেম্বর তিনিই (আব্দুল মোনএয়ম খান) এই কলেজ নির্মাণের ভিত্তি প্রস্তর উদ্বোধন করেন।
রংপুরের লুৎফর রহমানকে কলেজের প্রথম বর্ষে ভর্তির মধ্য দিয়ে শুরু হয় বরিশাল মেডিকেল কলেজের পথচলা। তখন মাত্র ৫৬টি আসনের বিপরীতে শিক্ষার্থী ভর্তি হতো। বর্তমানে এই কলেজের আসন সংখ্যা ২২০। গত ৪৪ বছরে এই কলেজ থেকে এমবিবিএস পাশ করেছে সাড়ে ৬ হাজার জন এবং গত ২ বছরে বিডিএস (ডেন্টিস্ট) পাশ করেছে ৬০ জন। বর্তমানে ৪টি বর্ষে এমবিবিএস কোর্সে অধ্যায়ন করছেন ১ হাজার ২০ জন এবং বিডিএস কোর্সে অধ্যায়ন করছে ১৬৯জন। গত শুক্রবার অনুষ্ঠিত ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণরা হবেন এই কলেজের ৫০তম ব্যাচের শিক্ষার্থী।
শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ব্যবস্থাপনার জন্য এখানে রয়েছে ১ হাজার শয্যার হাসপাতাল, ইনষ্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজিষ্ট, মর্গ এ্যাড মরচুয়ারী, ৩টি ইন্টার্ন ডক্টরস হোস্টেল, ৫টি ছাত্র ও ছাত্রী নিবাস, ১টি নার্সিং ইনস্টিটিউট, ১টি মসজিদ, ১টি জিমনেসিয়াম, খেলার মাঠ এবং বৃহত্তর অডিটোরিয়াম। এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হয়। এখানে পোস্ট-গ্রাজুয়েশন কোর্স যথা এমডি, এমফিল, এমএস ও ডিপ্লোমা করার ব্যবস্থা রয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮/হিমেল