সম্প্রতি চীনের একটি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন প্রতিষ্ঠান সিমাগো বিশ্বব্যাপী গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে র্যাংকিং করেছে। প্রতিষ্ঠানটি দু’ভাবে র্যাংকিং করে থাকে। প্রথমত: বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল গবেষণা প্রতিষ্ঠানের একত্রিত র্যাংকিং। দ্বিতীয়ত: শুধু বিশ্ববিদ্যালয় র্যাংকিং। গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয় একত্রীভূত করে যে মূল্যায়নে করা হয়েছে তাতে দেখা যায় আই.সি.সি.ডি.আর.বি. বাংলাদেশে ১ম এবং সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয় ২য় স্থান অর্জন করেছে। অপরপক্ষে শুধু বিশ্ববিদ্যালয় র্যাংকিং-য়ে সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয় অর্জন করেছে ১ম স্থান। সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য এটা এক বিশাল অর্জন।
ডিজিটাল শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় ‘ঘরে বসে গবেষণার কাজের’ একটি বড় সুযোগ করে দিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন। মঞ্জুরী কমিশনে স্থাপন করা হয়েছিল একটি ডিজিটাল লাইব্রেরি। সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয় প্রতি বছর প্রায় ৯ লক্ষ টাকা ফি দিয়ে এর সদস্য পদটি ধরে রেখেছে। সদস্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ অনলাইনে এই লাইব্রেরিতে ঢুকতে পারে। এই সুযোগের ফলে শিক্ষকদের গবেষণা কাজে অগ্রগতি স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি হতে থাকে। করোনা ছড়িয়ে পড়ার পূর্বে শিক্ষকগণ যেখানে গড়ে বৎসরে ১টি মাত্র গবেষণাপত্র প্রকাশ করতে পারতো, বৎসরান্তে তা প্রায় ৩ গুণে দাঁড়ায়। আমরা গবেষণাপত্র প্রকাশনায় প্রচণ্ড জোর দিয়েছিলাম। শিক্ষকদের প্রকাশনার অনেক সুযোগ করে দিয়েছিলাম। আমরা ডিপার্টমেন্টাল জার্নাল, স্কুল জার্নাল প্রকাশনার উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলাম।
আমাদের আছে ১০টি ডিপার্টমেন্ট। আমরা ১০টি ডিপার্টমেন্টের প্রতিটি ডিপার্টমেন্ট থেকে বছরে ২ থেকে ৩ টা ইস্যু/জার্নাল বের করেছি, যা করোনার আগে কখনো করা হয়নি। আমাদের রয়েছে তিনটি স্কুল। আমরা তিনটি স্কুল থেকে নিয়মিত জার্নাল বের করছি, যা আগে নিয়মিত প্রকাশিত হতো না। প্রয়োজনে সময়ে সময়ে আমরা স্পেশাল ইস্যু বের করার উদ্যোগ নিয়েছি, যা আগে কখনো করা হতো না। কিছুদিন আগে আমরা কোভিড-১৯ নামে একটি স্পেশাল ইস্যু বের করেছি। স্পেশাল ইস্যুটিতে রয়েছে মোট ২৪টি গবেষণাপত্র, তাতে ভারত, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের (ফাইজার) গবেষকদের সাথে সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের শিক্ষক/গবেষকগণ স্থান করে নিতে সক্ষম হয়েছেন।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে আইসিসিআইটি আন্তর্জাতিক কনফারেন্স-য়ে ৩৪৭টি গবেষণাপত্র জমা পড়ে, সেখানে সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাই সবচেয়ে বেশি গবেষণাপত্র জমা দিয়েছিল। তিন বছর আগে একনেক-য়ের এক প্রতিবেদনে ঘোষণা করা হয়, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবকে মোকাবেলা করতে সরকার ৯টি প্রতিষ্ঠানকে ৯টি স্পেশালাইজ্ড ল্যাব করে দিবে যেখানে চলবে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা ও রোবোটিক্স-য়ের উপর গবেষণা। বিষয়টির গুরুত্ব বুঝে, আমরা সরকারের অনুদানের উপর নির্ভর না করে, তাৎক্ষণিকভাবে একটি গবেষণা কেন্দ্র খুলে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা ও রোবোটিক্স-য়ের উপর প্রাথমিক গবেষণা কর্মকাণ্ড শুরু করি। অন্যদিকে আমাদের ফার্মেসি বিভাগকে আমরা বলে থাকি গবেষণা বিভাগ, কেননা এই বিভাগের প্রতিটি শিক্ষকই গবেষক। শিক্ষার্থীরাও শিক্ষকদের সাথে নিয়মিত গবেষণা করে।
আরও উল্লেখ করা যেতে পারে, সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান, যাকে বলা হয় ইনস্টিটিউট অব রিসার্চ এন্ড ট্রেনিং। প্রতিষ্ঠানটি প্রধানতঃ ৫টি কাজ করে থাকে- যথা, (১) গবেষণা পদ্ধতির উপর প্রশিক্ষণ, (২) গবেষণা ইন্সট্রুমেন্ট-য়ের উপর প্রয়োজন অনুসারে নিয়মিত প্র্যাকটিস ও প্রশিক্ষণ, (৩) বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব অর্থায়নে গবেষণা কার্যক্রম, (৪) সিনিয়র শিক্ষকগণ জুনিয়র শিক্ষকদের নিয়ে মাসিক রিসার্চ আড্ডা, (৫) ‘রিসার্চ ফর অল’ মিশন নিয়ে কাজ করা। এই ভাবেই সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয় দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে গবেষণা কার্যক্রম।
বছরের হিসেবে (ইউজিসি বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী), আমরা গবেষণা-প্রবন্ধ প্রকাশনার ক্ষেত্রে দেশের নামজাদা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অতিক্রম করতে সক্ষম হয়েছি। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ যেখানে গত বছর শিক্ষক-প্রতি ১.৫-২.০টি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছে, সেখানে, আমরা সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশ করেছি শিক্ষক প্রতি প্রায় ২.৫টি, অর্থাৎ গত দু’বছরে সব ক’টি বিশ্ববিদ্যালয়কে আমরা গবেষণাপত্রে ছাড়িয়ে যেতে সক্ষম হয়েছি। গবেষণায় র্যাংকিং-য়ে সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয় যে ১ম স্থান অধিকার করবে, তা ছিল অনেকটাই নিশ্চিত।
পরিশেষে বলা যায়, নানাবিধ পদক্ষেপ নেয়ার ফলে সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাপক আকারে গবেষণা সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। সিমাগো মূল্যায়নে বিশ্ববিদ্যালয় যে ১ম স্থান দখল করেছে, এটা স্বয়ংক্রিয়ভাবে হয়নি। এটা বিশ্ববিদ্যালয়টি অর্জন করেছে। এটা শিক্ষক ও গবেষকদের পরিশ্রমের ফসল।
লেখক: উপাচার্য, সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়