১৯ আগস্ট, ২০২২ ১৯:৫৮

‘মেসেঞ্জার চ্যাটে’র জেরে ঢাবি ছাত্রকে থানায় দিলেন হল প্রাধ্যক্ষ

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

‘মেসেঞ্জার চ্যাটে’র জেরে ঢাবি ছাত্রকে থানায় দিলেন হল প্রাধ্যক্ষ

সহপাঠীদের মেসেঞ্জার গ্রুপে করা একটি মেসেজকে ‘রাষ্ট্রবিরোধী’ আখ্যা দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষার্থীকে পুলিশে দিয়েছিলেন মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ। তবে যাচাই-বাছাই করে অভিযোগের সত্যতা না পাওয়ায় মুচলেকা নিয়ে তাকে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ। 

বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মেফতাহুল মারুফকে প্রক্টরিয়াল টিমের মাধ্যমে শাহবাগ থানায় হস্তান্তর করেন প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন। পরে মারুফের বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজ-খবর নিয়ে শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে তাকে বিভাগের শিক্ষক মো. আইনুল ইসলামের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়। 

বিষয়টি নিয়ে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মওদুত হাওলাদার সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাকে থানায় সোপার্দ করে মৌখিকভাবে আমাদের কাছে অভিযোগ করে যে, ১৭ আগস্ট তিনি তাদের ডিপার্টমেন্টের একটি মেসেঞ্জার গ্রুপে রাষ্ট্রবিরোধী চ্যাট করেন। তার ফেসবুকে জামায়াত-শিবিরের দুটি পেজে লাইক পাওয়া গেছে। তিনি কোনো অশুভ কর্মকাণ্ডে জড়িত আছেন কি না, বিষয়টি যাচাই করতে বলা হয়। আমরা যাচাই-বাছাই করে দেখেছি, এটা একটা ক্লোজড গ্রুপে তার ব্যক্তিগত মতামত ছিল। যে দুটি গ্রুপে লাইক দেওয়ার কথা বলা হয়েছে, সেখানে আমরা তার কোনো কমেন্টস-রিয়েকশন বা কর্মকাণ্ড পাইনি। তবে শিক্ষার্থী দাবি করেছেন, তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী হওয়ায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ড দেখার জন্য লাইক দিয়েছেন।’ 

‘আমরা তার পারিবারিক বিষয়ও যাচাই করেছি। সব মিলিয়ে এমন কোনো কিছু পাওয়া যায়নি, যা দ্বারা তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা বা তাকে আদালতে চালান করা করা যায়। তাই তার মুচলেকা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের জিম্মায় তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।’

জানা যায়, মারুফ তাদের ব্যাচের ‘চৌদ্দশিখা’ মেসেঞ্জার গ্রুপে কথোপকথনের পরিপ্রেক্ষিতে লেখেন- ‘সিরিজ বোমা হামলা চালাইছে জামায়াতুল মুজাহিদিন নামে একটা জঙ্গি সংগঠন বাংলা ভাইয়ের নেতৃত্বে। সেই সময় ক্ষমতায় ছিল বিএনপি জামায়াত।’ ওই হামলার জন্য বিএনপিকে দায়ী করা হলে ২০০৮ থেকে বর্তমানে গুলশানসহ সকল জঙ্গী হামলার জন্য আওয়ামী লীগকে দায়ী করেন মারুফ। এ কথোপকথনের স্ক্রিনশট জিয়া হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাসিবুল ইসলাম শান্তের কাছে পৌঁছালে শান্ত তাকে হল প্রাধ্যক্ষের কার্যালয়ে নিয়ে যান। পরে হল প্রাধ্যক্ষ প্রক্টরিয়াল টিমের মাধ্যমে তাকে শাহবাগ থানায় সোপর্দ করে। 

তবে, থানা থেকে ছাড়া পাওয়ার পর মেফতাহুল মারুফ সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, তাকে ছাত্রলীগের চাপে থানায় দিয়ে হয়রানি করা হয়েছে। মারুফ বলেন, হলের প্রাধ্যক্ষ আমাদের অভিভাবক। তিনি চাইলে বিষয়টি খতিয়ে দেখে সমাধান করতে পারতেন। কিন্তু ছাত্রলীগের কথায় তিনি সামান্য একটা বিষয় নিয়ে আমাকে পুলিশে দিয়ে হয়রানি করেছেন। আমার ক্যারিয়ারে একটা কালিমা লেপন করার চেষ্টা করেছেন। 

এ বিষয়ে হল অধ্যাপক মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘মেসেঞ্জার গ্রুপে সে যা লিখেছে, আমাদের কাছে তা রাষ্ট্রবিরোধী মনে হয়েছে। তাছাড়া জঙ্গি সংগঠনের দুটি পেইজে সে লাইক দিয়েছে। আমাদের পক্ষে যতটুকু সম্ভব আমরা যাচাই করেছি। বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ তৈরি হওয়ায় তাকে পুলিশে দেওয়া হয়েছে, যাতে অধিকতর তদন্ত করে সত্যটা উদঘাটন করা যায়।’

বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর