ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালামের বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্যসহ নানাবিধ দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে ক্যাম্পাসে আসে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) প্রতিনিধি দল। তদন্ত শেষে যথাসময়ে সংশ্লিষ্ট দফতরে প্রতিবেদন জমা দেবেন বলে জানিয়েছেন কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. আবু তাহের।
সোমবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তারা কার্যক্রম শুরু করেন। দিনব্যাপী সরেজমিনে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দফতর ও সংগঠনের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন তারা। এছাড়া প্রয়োজনীয় বিভিন্ন নথিপত্র সংগ্রহ ও যাচাই-বাছাই করেন। পরে বিকেল সোয়া চারটার দিকে তারা ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন।
ক্যাম্পাস সূত্রে জানা গেছে, ইউজিসির তদন্ত দল পৃথকভাবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, বিভিন্ন অনুষদীয় ডিন, বিভাগীয় প্রধান, রেজিস্ট্রার, প্রকল্প পরিচালক, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক, অর্থ ও হিসাব বিভাগের পরিচালক, সাবেক ও বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী, বর্তমান ও সাবেক শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পদক, সাবেক প্রক্টর, ছাত্র উপদেষ্টা, পরিবহন প্রশাসকসহ অভিযোগ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দফতর প্রধানের সঙ্গে কথা বলেন।
এর আগে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত নিয়োগ বাণিজ্য, চাকরির প্রশ্ন ফাঁস ও দুর্নীতি সংক্রান্ত উপাচার্যের অন্তত ১৪টি অডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। অডিও ফাঁসের পর তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ও প্রগতিশীল শিক্ষক সংগঠন শাপলা ফোরাম প্রধানমন্ত্রীসহ শিক্ষা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দফতরে চিঠি পাঠান। এর প্রেক্ষিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে গত পহেলা নভেম্বর উপাচার্যের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ তদন্তে তিন সদস্যের একটি কমিটি করে ইউজিসি।
এ কমিটিতে ইউজিসি’র সদস্য অধ্যাপক ড. আবু তাহেরকে আহ্বায়ক এবং সদস্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক ফজলুর রহমান এবং সদস্য-সচিব ইউজিসি’র একই বিভাগের উপ-পরিচালক ইউসুফ আলী খান। কমিটিকে যথা দ্রুত সম্ভব কমিশন কর্তৃপক্ষের নিকট সুপারিশ সম্বলিত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়। তদন্তের স্বার্থে কমিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের যে কোনো নথি ও আনুষঙ্গিক কাগজপত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে পারবে এবং প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট যে কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ করার ক্ষমতা দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে শাপলা ফোরামের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমান বলেন, ‘বর্তমান উপাচার্যের বিরুদ্ধে নিয়োগ, আর্থিক, মেগাপ্রকল্পে দুর্নীতিসহ নানাবিধ অভিযোগের বিষয়ে আমার কাছে জানতে চেয়েছেন। আমার জায়গা থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছি। বর্তমান প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়কে ব্যাক্তিগত সম্পদের মতো ব্যবহার করছে, যা অনভিপ্রেত।’
শিক্ষক সমিতির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ও শাপলা ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক ড. মামুনুর রহমান বলেন, ‘উপাচার্যের অডিও ফাঁসসহ বিভিন্ন অভিযোগের তদন্ত করছে ইউজিসি। এর আগে শিক্ষক সমিতি ও শাপলা ফোরাম থেকে তদন্তের দাবি জানানো হয়েছিল। আমাদের সাক্ষাৎকার নিয়েছে। তাদের কাছে কিছু ডকুমেন্ট ছিল। আমাদের থেকেও কিছু ডকুমেন্ট সংগ্রহ করেছে’
তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. আবু তাহের বলেন, ‘আমরা অভিযোগ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দফতরে কথা বলেছি। কিছু ডকুমেন্ট আমরা তাদের কাছ থেকে পেয়েছি। তারা আরও কিছু ডকুমেন্ট পাঠাবে। তদন্ত শেষে যথাসময়ে সংশ্লিষ্ট দফতরে আমরা জমা দেব।'
বিডি প্রতিদিন/হিমেল