আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ বিএনপি কিংবা জাতীয় পার্টির কোনো প্রার্থী নয়। সিলেটে উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ এবার স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।
বিএনপি এবার উপজেলা নির্বাচন বর্জন করায় দলটির কোনো প্রার্থী নেই। দলের যেসব নেতা প্রার্থী হয়েছেন, তাদেরকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। তবে বহিষ্কৃত এসব নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেই লড়ছেন। সবমিলিয়ে বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত ৩১ জন নেতা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন। তন্মধ্যে চেয়ারম্যান পদে আছেন ১২ জন। বাকিরা ভাইস চেয়ারম্যান পদের।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের মধ্যে আছে গৃহবিবাদ। সিলেটের নির্বাচন হওয়া ১২টি উপজেলার মধ্যে অন্তত ৮টিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। কোনো কোনো উপজেলায় একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। এসব বিদ্রোহী প্রার্থীরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ফলে এবার নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিপক্ষে লড়তে হচ্ছে।
সিলেটের ১২টি উপজেলার মধ্যে বিশ্বনাথে এস এম নুনু মিয়া, বালাগঞ্জে মোস্তাকুর রহমান মফুর, জকিগঞ্জে লোকমান আহমদ চৌধুরী ও গোলাপগঞ্জে ইকবাল আহমদ চৌধুরী আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। বাকিগুলোতে দলের বিদ্রোহীরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আছেন। ৮টি উপজেলায় দলটির ১৮ জন স্বতন্ত্র থেকে প্রার্থী হয়েছেন।
সিলেট সদর উপজেলায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী আশফাক আহমদ। তার বিপক্ষে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মাঠে আছেন আওয়ামী লীগ নেতা নূরে আলম সিরাজী। দক্ষিণ সুরমায় জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য আবু জাহিদ ফের পেয়েছেন দলীয় মনোনয়ন। তার বিপক্ষে লড়ছেন জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ময়নুল ইসলাম।
ফেঞ্চুগঞ্জে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দিয়েছে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মুজিবুর রহমান জকনকে। এখানে বিদ্রোহী হিসেবে আছেন উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা নুরুল ইসলাম। বিয়ানীবাজারে নৌকার প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান খানকে চ্যালেঞ্জ করে মাঠে আছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাকির হোসেন, কার্যনির্বাহী সদস্য শামীম আহমদ ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহবায়ক আবুল কাশেম পল্লব।
কানাইঘাটে নৌকার প্রার্থী সিলেট মহানগর কৃষক লীগের সভাপতি আব্দুল মোমিন চৌধুরী। এখানে বিদ্রোহী হয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের উপপ্রচার সম্পাদক মোস্তাক আহমদ পলাশ ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আবুল খয়ের চৌধুরী। কোম্পানীগঞ্জে নৌকার মনোনয়ন পাওয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমকে বিপাকে ফেলেছেন দলের একাধিক নেতা। তাদের মধ্যে আছেন বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল বাছির, তার ছেলে পশ্চিম ইসলামপুর ইউপি আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম আহমদ, শামীমের স্ত্রী জরিনা বেগম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আপ্তাব আলী, সাংগঠনিক সম্পাদক ইয়াকুব আলী, শামসুল ইসলাম ও হাফিজ মাসুম।
জৈন্তাপুর উপজেলায় নৌকার প্রার্থী লিয়াকত আলী। তাকে অস্বস্তিতে রেখেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান কামাল আহমদ। গোয়াইনঘাট উপজেলায় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন গোলাম কিবরিয়া হেলাল। এখানে বিদ্রোহী হিসেবে আছেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুক আহমদ ও যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা গোলাপ মিয়া।
এদিকে, বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত নেতাদের মধ্যে সিলেট সদর উপজেলায় মাজহারুল ইসলাম ডালিম, দক্ষিণ সুরমায় জিল্লুর রহমান সোয়েব, বিশ্বনাথে সুহেল আহমদ চৌধুরী ও মিসবাহ উদ্দিন আহমদ, গোলাপগঞ্জে মাওলানা রশীদ আহমদ, গোয়াইনঘাটে লুৎফুল হক খোকন ও শাহ আলম স্বপন, ফেঞ্চুগঞ্জে ওয়াহিদুজ্জামান সুফী, মনির আলী নানু মিয়া ও হারুন আহমদ চৌধুরী, বালাগঞ্জে আবদাল মিয়া ও গোলাম রব্বানী চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, স্বতন্ত্র এসব প্রার্থীদের কারণে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের বিপাকে পড়তে হতে পারে। বিশেষ করে দলীয় বিদ্রোহীরাই তাদের জন্য মাথাব্যথার কারণ। কেননা এর ফলে দলের ভোট ব্যাংক ভাগ হয়ে যেতে পারে।
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা