সিলেটের চিহ্নিত ‘রেড জোন’গুলোকে নতুন লকডাউন করা নিয়ে অনেক জলঘোলা করা হয়েছে। হয়েছে বৈঠকের পর বৈঠক। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জেলা মাল্টিসেক্টরাল কমিটি কেনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি। বিভিন্ন অজুহাতে কমিটির নেতৃবৃন্দ সরে এসেছেন লকডাউনের সিদ্ধান্ত থেকে। সর্বশেষ পাওয়া আভাস মতে, সিলেটে নতুন করে লকডাউনের সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ।
সংক্রমণ অত্যধিক হওয়ায় করোনার রেড জোন বা বিপজ্জনক এলাকার মধ্যে পড়েছে সিলেটের সিংহভাগ এলাকা। সরকারি সিদ্ধান্ত অনুসারে, এসব এলাকা কঠোর লকডাউনের আওতায় আনার কথা। কিন্তু সিলেটে সেই লকডাউন এখন আর না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
এদিকে, সিলেটে লকডাউন নিয়ে দায়িত্বশীলদের কাছ থেকে মিলছে ভিন্ন বক্তব্য। কেউ বলছেন, লকডাউনের সিদ্ধান্তের জন্য তারা অপেক্ষায়। কেউ বলছেন, লকডাউনের বিষয়ে সিদ্ধান্তই হয়নি। আবার কেউ বলছেন, অর্থ-বছরের শেষ সময়ের কারণে লকডাউনের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসা হয়েছে!
জানা গেছে, গত এক মাস ধরে সিলেটে ভয়ানকভাবে করোনার সংক্রমণ বাড়ছে। বিশেষ করে গেল তিন সপ্তাহে আক্রান্তের সংখ্যা বিপজ্জনক পর্যায়ের। বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। এমন পরিস্থিতিতে সরকারি সিদ্ধান্ত অনুসারে সিলেটকে রেড, ইয়েলো ও গ্রিন জোনে ভাগ করার পথে হাঁটে প্রশাসন। এ লক্ষ্যে করোনা প্রতিরোধে জেলা প্রশাসনের মাল্টিসেক্টরাল কমিটি একাধিকবার সভাও করেছে। আর সিলেট মহানগর ও জেলাকে জোনভিত্তিক ভাগ করে সিভিল সার্জন কার্যালয়।
তথ্যানুসারে, গত সপ্তাহের সোমবার সিলেটকে রেড, ইয়েলো ও গ্রিন জোনে ভাগ করার কাজ শেষ করে সিভিল সার্জন কার্যালয়। পরদিন মঙ্গলবার সকালে সিলেট সার্কিট হাউজে করোনা প্রতিরোধে জেলা প্রশাসনের মাল্টিসেক্টরাল কমিটির সভা হয়।
সভা শেষে সিভিল সার্জন ডা. প্রেমানন্দ মন্ডল বৃহস্পতিবার থেকে সিলেটের রেড জোনগুলোতে কঠোর লকডাউন হচ্ছে বলে জানান।
তিনি ওইদিন সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা প্রশাসনের সংশ্লিষ্টদের নিয়ে একটি সভা করে লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
বৃহস্পতিবার থেকে তা কার্যকর হবে। বর্তমানে সিলেট নগরীর উত্তর সুরমায় তথা ১ থেকে ২৪ নম্বর ওয়ার্ডগুলোতে করোনাক্রান্ত রোগী বেশি থাকায় এসব এলাকায় রেড জোন বেশি হয়েছে। সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মোট ১৯টি ওয়ার্ডকে রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করেছি। এর মধ্যে দক্ষিণ সুরমায় শুধু ২৭ নম্বর ওয়ার্ড রেড জোনে। রেড জোন চিহ্নিত ওয়ার্ডগুলো স্বাভাবিকভাবেই লকডাউনের আওতায় থাকবে।’
সিভিল সার্জন প্রেমানন্দ মন্ডল আরও বলেন, ‘উপজেলা নিয়েও আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। উপজেলা পর্যায়ের রেড জোনগুলোও লকডাউনের আওতায় আসবে। উপজেলার তথ্য বৃহস্পতিবার জানানো হবে।’
সিভিল সার্জন বৃহস্পতিবার থেকে সিলেটে লকডাউনের তথ্য দিলেও ওই দিন রাতে সিটি কর্পোরেশন শনিবার থেকে লকডাউনের সিদ্ধান্ত নেয়। মঙ্গলবার রাতে নগরভবনে সভা হয়। মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ও সিভিল সার্জন ছাড়াও কাউন্সিলররা ছিলেন সভায়। কাউন্সিলরদের মতামতের ভিত্তিতে শনিবার (২০ জুন) থেকে লকডাউনে যাওয়ার কথা জানান মেয়র।
এ প্রসঙ্গে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘বৃহস্পতিবার থেকে সিলেট নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২৪টিতে লকডাউনের কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু নগরবাসীর সুবিধার্থে সময় আরও দুই দিন বৃদ্ধি করে শনিবার থেকে লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিতে সিভিল সার্জনের কাছে সুপারিশ করা হয়। এখন সিভিল সার্জন অফিস থেকে সিদ্ধান্ত জানানো হলে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের কাছে চিঠি পাঠানো হবে। লকডাউন বাস্তবায়নেও সব ধরনের উদ্যোগ নেয়া হবে।’
এই যখন অবস্থা, তখন সিলেটের জেলা প্রশাসক বললেন, তিনি লকডাউনের ব্যাপারে কিছুই জানেন না।
গত বুধবার জেলা প্রশাসক এম. কাজী এমদাদুল ইসলাম বলেন, ‘লকডাউনের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এখনো জোনিং নিয়ে কাজ চলছে। জোনিংয়ের কাজ শেষ হলে তা সিভিল সার্জনের মাধ্যমে ঢাকায় পাঠানো হবে। টেকনিক্যাল টিম তা দেখে অনুমোদন দেবে। এরপর রেড জোনে করণীয় নির্ধারণ করা হবে।’
কিন্তু সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. প্রেমানন্দ মন্ডল লকডাউন নিয়ে আজ রবিবার ভিন্ন কথা বলেছেন। তিনি আজ দুপুরে বলেন, লকডাউনের বিষয়ে আমি তেমন কিছু জানি না। এটি প্রশাসনের বিষয়, তারা যদি লকডাউন দেয় তখন জানতে পারবো।
শেষে তিনি যোগ করেন, তবে আমার মনে হয় সিলেটে আর নতুন করে লকডাউনের সম্ভাবনা কম।
এর আগে গত বুধবার তিনি বলেছিলেন, ‘এখন অর্থবছরের শেষ সময়। এখন ব্যাংকিং কার্যক্রম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ব্যাংকিং লেনদেনের কথা চিন্তা করে এই মূহুর্তে লকডাউন দেয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসা হয়েছে।’
অন্যদিকে গত বুধবার ফের সভা করেছে জেলা প্রশাসনের মাল্টিসেক্টরাল কমিটি। সে সভায় সিভিল সার্জন কার্যালয়ের করা জোনভিত্তিক তালিকায় ‘ত্রুটি’ পাওয়া গেছে। তাই রেড, ইয়েলো আর গ্রিন জোনে ভাগ করা তালিকা গ্রহণ করা হয়নি। এ তালিকা এখন নতুন করে তৈরি করবে সিভিল সার্জন কার্যালয়। তাদের সহায়তা করবে পুলিশ প্রশাসন।
লকডাউনে সর্বশেষ ও সার্বিক বিষয়ে জানতে সিলেট জেলা প্রশাসক ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলেও কেউ রিসিভ করেননি।
তবে সিলেট সিটি কর্পোরেশন এলাকার রেড জোনে লকডাউনের সিদ্ধান্তে বিষয়ে জানতে চাইলে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. জাহিদুল ইসলাম আজ দুপুরে সিলেটভিউ-কে বলেন, আমরাতো প্রস্তুত ছিলাম (গতকাল) শনিবার থেকে সিলেটে লকডাউন দেয়ার জন্য। কিন্তু বিষয়টি শেষ পর্যন্ত চূড়ান্ত হয়নি।
তিনি বলেন, সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে নতুনভাবে জোনিং করে দেয়া হয়েছে। আমরা তা ঢাকায় পাঠিয়েছি। এখন স্বাস্থ্যবিভাগ যদি অনুমোদন দিয়ে লকডাউনের নির্দেশ দেয় তবে তা বাস্তবায়নে আমরা উদ্যোগী হবো। তবে সিলেটে আগে এ বিষয়ে যেরকম তোড়জোড় ছিলো সেটি এখন আর নেই।
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত