বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক বাণিজ্যপথ স্ট্রেইট অব হরমুজ বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইরান। রবিবার (২২ জুন) দেশটির পার্লামেন্ট এই সিদ্ধান্তে সায় দিয়েছে, যা বাস্তবায়নের জন্য সুপ্রিম কাউন্সিলের চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। ইতোমধ্যেই এই খবরে বিশ্ববাজারে তেলের দাম লাফিয়ে বেড়েছে।
হরমুজ প্রণালী দিয়ে প্রতিদিন বিশ্বব্যাপী ব্যবহৃত মোট তেলের ২০ শতাংশ পরিবাহিত হয়, যার মূল্য প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার। ইরানের সিদ্ধান্তের ফলে সোমবার ব্রেন্ট ক্রুডের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৭.৩৬ ডলার প্রতি ব্যারেল এবং ডব্লিউটিআই তেলের দাম বেড়েছে ৭৪.১৫ ডলার, যা গত কিছু দিনের মধ্যে সর্বোচ্চ।
বিশ্বের তেলনির্ভর দেশগুলো যেমন চীন, ভারত এবং পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলো এই ঘটনার সরাসরি অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখোমুখি হতে পারে। এদিকে, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও চীনকে আহ্বান জানিয়েছেন যেন তারা ইরানকে এই সিদ্ধান্ত থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করে।
কেন গুরুত্বপূর্ণ এই ছোট্ট জলপথ?
স্ট্রেইট অব হরমুজের দৈর্ঘ্য মাত্র ৩৩ কিলোমিটার হলেও এটি অতি গুরুত্বপূর্ণ। এখান দিয়ে দৈনিক ১৭-২০ মিলিয়ন ব্যারেল অপরিশোধিত তেল এবং বিপুল পরিমাণ প্রাকৃতিক গ্যাস রপ্তানি হয়। ফলে, এই পথ বন্ধ হলে বিশ্বব্যাপী জ্বালানির সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতি গুরুতরভাবে প্রভাবিত হবে।
ইরান কীভাবে রোধ করতে পারে?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরান সমুদ্রের খনির বিস্ফোরক, ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, ড্রোন বা দ্রুতগতির নৌকা দিয়ে এই প্রণালীতে নৌ-পরিবহন ব্যাহত করতে পারে। তবে, মার্কিন পঞ্চম নৌবহরসহ আন্তর্জাতিক নৌ জোটগুলো দ্রুত এই বাধা দূর করতে সক্ষম।
অতীতেও কি কখনও বন্ধ হয়েছে হরমুজ?
না। ১৯৮০-৮৮ সালের ইরান-ইরাক যুদ্ধের সময় ইরান প্রণালীতে খনি পুঁতে জাহাজ চলাচল ব্যাহত করার চেষ্টা করলেও সম্পূর্ণভাবে এই পথ বন্ধ করতে পারেনি। কারণ, এই পথ ইরানের তেল রপ্তানির প্রধান রুটও বটে।
এবার ভিন্ন কী?
এবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ফোর্ডো, নাটাঞ্জ ও ইসফাহানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালানোর পর ইরান এই সিদ্ধান্ত নিল। ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডসের কমান্ডার এমেইল কোসারি বলেছেন, ‘‘আমরা যুক্তরাষ্ট্রের হামলার জবাবে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত।’’
ভবিষ্যৎ কী?
বিশ্ব বাজার ও জ্বালানিখাতে অস্থিরতা বাড়বে নিশ্চিত। বিকল্প রুটের অভাবে বিশ্ব তেলের সরবরাহ ও দাম আরও বাড়তে পারে। ইতোমধ্যে উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলো বিকল্প ব্যবস্থা নিয়ে ভাবতে শুরু করেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরান নিজেও এই পথ বন্ধের কারণে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে পারে। তবে রাজনৈতিক ও সামরিক চাপ প্রয়োগের কৌশল হিসেবে এ সিদ্ধান্ত ব্যবহার করতে পারে তেহরান।
সূত্র: জে হিলটন, গালফ নিউজ
বিডি প্রতিদিন/আশিক