৩০ নভেম্বর, ২০২১ ১৬:১২

জামায়াত নেতার সংবর্ধনায় অতিথি আওয়ামী লীগ নেতা!

সিলেট ব্যুরো

জামায়াত নেতার সংবর্ধনায় অতিথি আওয়ামী লীগ নেতা!

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ নেতা মাহফুজুর রহমান (লাল গোল চিহ্নিত)

তৃতীয় ধাপে অনুষ্ঠিত সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার ১নং ইসলামপুর ইউনিয়নে দলীয় প্রতীক নৌকা পেয়ে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে অংশ নেন আওয়ামী লীগের আব্দুল হেকিম। 

তার সাথে টেলিফোন প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য ও সিলেট পশ্চিম এবং সুনামগঞ্জ জেলা শিবিরের সাবেক সভাপতি সুফি আলম সোহেল। প্রায় দেড় হাজার ভোটের ব্যবধানে আওয়ামী লীগের আব্দুল হেকিমকে তিনি পরাজিত করেন। 

গত ১১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে হারিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন অ্যাডভোকেট সুফি আলম সোহেল। নির্বাচনে জয়লাভ করায় সংবর্ধনা দেয়া হয় তাকে। সেই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাহফুজুর রহমানসহ জেলা বারের সভাপতি। 

জামায়াত নেতার সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ নেতার যোগদান নিয়ে সিলেট ও সুনামগঞ্জের আওয়ামী ঘরনার রাজনীতিবিদদের মধ্যে চলছে তোলপাড়।

জানা যায়, ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আব্দুল হেকিমকে পরাজিত করে বিজয়ী হওয়ায় স্থানীয়দের উদ্যোগে সুফি আলম সোহেলকে গত শুক্রবার (২৬ নভেম্বর) বিকেলে স্থানীয় মাদ্রাসা বাজার মাঠে এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। 

অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাহফুজুর রহমান। শিবিরের সাবেক নেতার সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ নেতা অতিথি হওয়ায় সিলেট ও সুনামগঞ্জ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। 

মাহফুজুর রহমানের এমন কাণ্ডে হতভম্ব অনেকেই। ওই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সিলেট ও সুনামগঞ্জের বিভিন্ন পর্যায়ের জামায়াত ও শিবিরের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও প্রচার হলে অনেকেই বিরূপ মন্তব্য করেন। গত কয়েকদিন থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সংবর্ধনার ছবি নিয়ে সমালোচনা চলছেই।

এ বিষয়ে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান বলেন, সুফি আলম সোহেল জেলা বারের একজন সদস্য। তিনি নির্বাচনে জয়লাভ করায় তাকে সংবর্ধনা দেয়া হয়। সেই সংবর্ধনা আমি ও জেলা বারের সভাপতিসহ অন্যদের নিমন্ত্রণ করলে আমরা অনুষ্ঠানে যাই। সোহেল জেলা বারের সদস্য হিসেবেই আমি অনুষ্ঠানে গিয়েছি। অন্য কোনো কারণে নয়। 

নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান সুফি আলম সোহেল জামায়াতের দায়িত্বশীল নেতা এ বিষয়ে তিনি বলেন, সোহেলের সংবর্ধনার অনুষ্ঠানের ব্যানারে লেখা ছিল মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান। সে জামায়াত নেতা কিনা সে বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই।

ছাতক উপজেলার ১নং ইসলামপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সুফি আলম সোহেল বলেন, আমি একসময়ে শিবিরের রাজনীতি করেছি। ওই সময়ে আমি সিলেট জেলা পশ্চিমের সভাপতির দায়িত্ব পালন করি। এরপর সুনামগঞ্জ জেলা শিবিরের সভাপতি দায়িত্ব পালন করি। তবে আমি জামায়াতের কোনো পদে প্রায় ১২ বছর থেকে নেই। আমি সবসময় জনগণ মনোনীত প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়ে জয়লাভ করে আসছি।

মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান দাবি করে তিনি বলেন, আমার চাচা মখলিছুর রহমান বিএনপির রাজনীতি করতেন। তিনি যুদ্ধের সময় শাহাদৎ বরণ করেন। সেই সাথে আমার পিতা নুরুল ইসলাম সিলেট মদন মোহন কলেজের ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। যুদ্ধের সময় আমার পিতাকে রাজাকারদের সহযোগিতায় পাকিস্তানী সেনারা গুলি করে ছাতকে হত্যা করে। আমরা পরিবারের অনেক সদস্য রয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা।

এ বিষয়ে ক্ষোভ জানিয়ে ছাতক উপজেলার গনেশপুর গ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা নেছার আহমদ বলেন, আমাদের দলীয় প্রার্থী আব্দুল হেকিমকে পরাজিত হতে হয়েছে জামায়াত নেতা সুফি আলম সোহেলের কাছে। এতে করে আমরা এমনিতেই হতাশ। চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়া সোহেলের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আবার সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহফুজুর রহমান অতিথি হওয়াতে আমাদের হতাশা ও দুঃখ আরও বেড়ে গেছে। আমরা নেতাকর্মীদের মুখ দেখাতে লজ্জা পাচ্ছি। অনেকেই আমাদেরকে এ বিষয়ে ফোন দিয়েছেন।

তিনি বলেন, জামায়াতের চেয়ারম্যান সোহেলের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের পোস্টারে আওয়ামী লীগের নেতা মাহফুজকে অতিথি করা হয়। তা দেখে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের অনুরোধে তাদের পক্ষে আমি মাহফুজুর রহমানকে ফোন করে অনুরোধ করেছিলাম অনুষ্ঠানে না যেতে। কিন্তু তিনি অনুরোধ উপেক্ষা করে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। এতে এলাকার সাধারণ মানুষ হিসেবে আমরা মর্মাহত। 

তিনি যেহেতু আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল পদে রয়েছেন, বিতর্কিত এই জামায়াত নেতার সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি অতিথি হিসেবে অংশ না নিলে আমরা খুশি হতাম। এছাড়া মাহফুজুর রহমান তার বক্তব্যের শেষে জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু এবং বর্তমান সরকারের পক্ষে কোনো বক্তব্যও রাখেননি।

বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর