সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নদ-নদীতে দ্রুত পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন হাওরের কয়েকটি ফসলরক্ষা বাঁধ ধসে পড়েছে। গত শনিবার সকালে টাঙ্গুয়া হাওরের নজর খালি বাধ ভেঙে প্রায় সাড়ে ৫০০ বিঘা বোর ফসল তলিয়ে গেছে।
ঐদিন রাতেই টাঙ্গুয়া হাওরের পার্শ্ববর্তী মাটিয়ান হাওরের আনন্দনগর পংখির খাল ফসলরক্ষা বাঁধে ফাটল দেখা দেয়। পরে রাতদিন পরিশ্রম করে কোদাল দিয়ে মাটি কেটে স্বেচ্ছাশ্রমে কৃষকরা কোনো রকম বাঁধটি রক্ষা করেন।
মাটিয়ান হাওরের আনন্দনগর পঙ্খির খালের ফসলরক্ষা বাঁধটি রবিবার সকালে পরিদর্শন করেন সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার।
এসময় জেলা প্রশাসকের কাছে কৃষকরা অভিযোগ করে জানান, ফসলরক্ষা বাঁধে যথা সময়ে মাটির কাজ না করা, মাটি ধুরমোজ, বাঁশ, বস্তা না দেয়ার কারণে সামান্য বৃষ্টিতে বাঁধের মাটি ধসে পড়ছে। আর এক এক করে হুমকিতে পড়ছে বৃহৎ মাটিয়ান, শনিসহ সবক’টি হাওরের বোর ফসলরক্ষা বাঁধ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মাটিয়ান হাওরের বোয়াল মারা ক্লোজার বাঁধ, কাউকান্দি আলমখালি, বড়দল মেশিন বাড়ি, ঠাকাঠুকিয়া কেন্দুয়া নদীর মুখ, শনির হাওরের নান্টুখালি, সাহেব নগর বাধগুলোতে নামমাত্র বাঁশ বস্তা দেওয়া আছে, আবার কোনটিতে মাটি ছাড়া কোন কিছুই নেই। একদিকে পাহাড়ি ঢলে নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে, অন্যদিকে বাঁধগুলো হুমকিতে পড়ছে। হাওর পাড়ের কৃষকরা এখন রাত জেগে বাঁধ পাহারা দিচ্ছেন, যখনেই বাঁধের অবস্থা খারাপ দেখছেন তখনেই মসজিদের মাইক দিয়ে ঘোষণা দেয়া হচ্ছে দ্রুত বাঁধে গিয়ে কোদাল, বাঁশ নিয়ে বাঁধ রক্ষার জন্য।
মাটিয়ান হাওরের ৪৪ নং প্রকল্প আনন্দ নগর পঙ্খির কাল বাধ এর প্রকল্প সভাপতি ঝিলিম মিয়া বলেন, বাঁধে শুধু মাটির কাজ ধরা। তারপরেও নিজ উদ্যোগে বাঁশ কোটা দিয়ে বাঁধটি রক্ষার জন্য চেষ্টা করছি।
মাটিয়ান হাওর পাড়ের কৃষক মঙ্গল মিয়া বলেন, হাওড়ের সবগুলো গুরুত্বপূর্ণ বাঁধে বাঁশ বস্তা দিয়ে বাঁধ না দিলে যে কোন সময় বাঁধ ভেঙে ফসলের হানি হতে পারে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড উপ-সহকারী কর্মকর্তা (তাহিরপুর দাযিত্বপ্রাপ্ত) আসাদুজ্জামন বলেন, বাঁধে শুধু মাটির কাজ ধরা রয়েছে। এখন নদীতে পানি আসায় বাঁধগুলো উপর বেশি চাপ পড়ছে।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রায়হান কবির বলেন, ফাটল দেয়া বাঁধগুলোতে জরুরি ভিত্তিতে বাঁশ বস্তা দিয়ে মেরামত করা হচ্ছে। বৃষ্টি ও পানি নদীতে বৃদ্ধি না পেলে কোন সমস্যা হবে না বলে তিনি জানান।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, হাওরের বাঁধগুলোর বর্তমান অবস্থা দেখতে হাওর পরিদর্শন করেছি। যে বাঁধগুলো দুর্বল রয়েছে বা বৃষ্টিতে ধেবে গেছে সে বাধগুলোর পিআইসিদের বলেছি দ্রুত বাশ, বস্তা দিয়ে বাঁধ রক্ষা করতে। যারা বাঁধ মেরামত করবে না তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত