বৈশাখের প্রথম দশ দিন শেষ। হবিগঞ্জের হাওরগুলোতে এখন চলছে ধান কাটার ধুম। তবে শ্রমিক সংকট থাকার কারণে সঠিক সময়ে গোলায় ধান তোলা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়।
স্থানীয় শ্রমিকদের দিয়ে এবার হাওরের ধান কাটা শুরু হলেও গুণতে হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা। একটা সময় ধানের বিনিময়ে ধান কাটা হলেও এখন চিত্র পাল্টে গেছে। নগদ টাকার বিনিময়ে বেশি টাকা দিয়ে কাটা হচ্ছে হাওরের ধান। তবে স্থানীয় শ্রমিকের সংখ্যা কম হওয়ায় বিপাকে পড়তে হচ্ছে সাধারণ কৃষকদের। এছাড়াও ঝড় শিলা বৃষ্টি ও আকষ্মিক বন্যার আশঙ্কা তো থাকছেই। ইতোমধ্যে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর বৃষ্টির কারণে জেলার প্রায় শতাধিক হেক্টর বোরো জমির ধান তলিয়ে গেছে।
হবিগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, জেলায় এ বছর বোরো ধানের আবাদ হয়েছে ১ লাখ ২২ হাজার ৩৭০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে হাওরে আবাদ হয় ৪৬ হাজার ৯৩০ হেক্টর এবং উঁচু জমিতে আবাদ হয় ৭৫ হাজার ৪৪০ হেক্টর। ইতোমধ্যে হাওরে কাটা হয়েছে মাত্র ৪৫ শতাংশ জমির ধান। আর উঁচু জমিতে কাটা হয়েছে ৬ শতাংশ ধান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বৈশাখের শুরুতেই জেলার লাখাই উপজেলায় বানের পানি হানা দেয়। ভারতে ভাড়ি বৃষ্টিপাতের কারণে উজান থেকে নেমে আসা ঢলে ধলেশ্বরী ও কালনী নদীতে পানি বৃদ্ধি পায়। এতে ওই উপজেলার হাওরে পানি প্রবেশ করে বোরো ধান তলিয়ে যেতে থাকে। লাখাই সদর ইউনিয়নের শিবপুর, সুজনপুর, বারচর, মাদনা, সন্তোষপুর, কামালপুর, রবিরকোণা, নোয়াগাও হাওরে প্রায় শতাধিক হেক্টর বোরো জমি পুরোপুরি তলিয়ে যায়। আংশিক তলিয়ে যায় আরো প্রায় ২০০ হেক্টর জমির ধান।
বানিয়াচং উপজেলার মুরাদপুর গ্রামের কৃষক ছানাউর রহমান চৌধুরী জানান, অন্যান্য বছর ধানের মাধ্যমে হাওরের জমি কাটা হতো। কিন্তু এবার নগদ টাকা দিয়ে ধান কাটতে হচ্ছে। তারপরও একদিন শ্রমিক মিললে ৪/৫ দিন মিলে না। শ্রমিক সংকট থাকার কারণে তাদের কাছ থেকে এক সপ্তাহ আগ থেকে যোগাযোগ করতে হয়। শ্রমিকদের চাহিদা মতো টাকা না দিলে তারা ধান কেটে দিচ্ছে না।
সুবিদপুর গ্রামের কৃষক নলীনি কান্ত রায় জানান, বিগত বছরগুলোতে উত্তরাঞ্চল থেকে বিপুল পরিমান শ্রমিক আসতো ধান কাটার জন্য। কিন্তু গত দুইএক বছর যাবত শ্রমিকের আসার সংখ্যা একেবারে কমে গেছে। তাই স্থানীয় শ্রমিকরা আমাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের মাধ্যমে ধান কাটছে।
লাখাই শিবপুর গ্রামের আব্দুল ওয়াহেদ মিয়া বলেন, একেতো জমি পানিতে তলিয়ে গেছে, তারপর শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। এখন সরকার যদি আমাদের সহযোগিতা করে তবেই পরিবার নিয়ে চলতে পারবো, অন্যথায় করুণ জীবনযাপন করতে হবে আমাদের।
তবে এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (উদ্যান) কৃষিবিদ নয়ন মনি সূত্র ধর বলেন, শ্রমিকের মূল্য কিছুটা বেড়েছে এটা সত্য। কিন্তু হাওরে তেমন শ্রমিক সংকট নেই।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে হারের নিচু এলাকার বেশিরভাগ জমির ধান কাটা শেষ হয়েছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যে নিচু হাওর এলাকার ধান কাটা শেষ হয়ে যাবে। আর এতে করে পানিতে তলিয়ে যাওয়ার কোন আশঙ্কা থাকবে না।
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত