ঘূর্ণিঝড় ফণী’র আক্রমণ আশঙ্কায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড ও সমুদ্রের মাছধরার ট্রলার ও অন্যান্য নৌযানগুলোর মালিকপক্ষ সতর্কতা অবলম্বন ও প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে। বন্দরের মূল জেটি থেকে সব জাহাজ বহির্নোঙরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদফতর চট্টগ্রাম বন্দরকে ৬ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। এছাড়া সীতাকুণ্ড উপজেলার বিভিন্ন শিপইয়ার্ডে ভাঙার জন্য বিচিং করা (কূলে ভেড়ানো) জাহাজগুলোতে পাথর বা পানি ঢুকিয়ে রাখার নির্দেশনা দিয়েছে নৌ বাণিজ্য দফতর।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার অসংখ্য নৌকা ও ট্রলার নগরের ফিশারি ঘাটসহ চট্টগ্রামের উপকূলবর্তী বিভিন্ন নিরাপদ পোতাশ্রয়ে অবস্থান নিয়েছে। এর আগে আবহাওয়া অধিদফতরের পক্ষ থেকে বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে দ্রুত নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়।
চট্টগ্রাম বন্দর সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে বন্দরের জেটিগুলো জাহাজশূন্য করার প্রক্রিয়া শুরু হয়। পাশাপাশি কি গ্যান্ট্রি ক্রেন, শোর ক্রেন, আরটিজি, স্ট্র্যাডেল ক্যারিয়ারসহ সব ধরনের কনটেইনার ও কার্গো হ্যান্ডলিং ইক্যুইপমেন্ট বুম আপ করে অ্যাংকর করার প্রস্তুতি নিয়েছে। ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানলে যাতে আমদানি-রফতানি পণ্যভর্তি কনটেইনারের ক্ষয়ক্ষতি না হয় সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, আবহাওয়া অধিদফতরের সতর্ক সংকেতের ওপর ভিত্তি করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ অভ্যন্তরীণ ‘অ্যালার্ট-৩’ জারি করেছে। ফলে চট্টগ্রাম বন্দরের সব জেটি ও বহির্নোঙরে পণ্য বা কনটেইনার হ্যান্ডলিং বন্ধ রয়েছে। বন্দরে নতুন করে কোনো লরি, ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ উপকূলে আঘাত হানার আশঙ্কায় সীতাকুণ্ড উপজেলার বিভিন্ন শিপইয়ার্ডে ভাঙার জন্য বিচিং করা জাহাজগুলোতে পাথর বা পানি ঢুকিয়ে রাখার নির্দেশনা দিয়েছে নৌ বাণিজ্য দফতর। বুধবার দফতরের প্রিন্সিপাল অফিসার নৌ প্রকৌশলী সাজিদ হোসেন এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে এ নির্দেশনা দেন।
এদিকে নিরাপদ আশ্রয়ে ফিরতে শুরু করেছেন বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার ট্রলার ও নৌকা। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণপূর্ব বঙ্গোপসাগর এলাকায় সৃষ্টি হওয়া ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ সামান্য উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে। এটি আরও ঘণীভূত হয়ে উত্তর/উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হতে পারে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৬০ কিলোমিটার যা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছে সাগর বিক্ষুব্ধ অবস্থায় রয়েছে।
এজন্য মোংলা ও পায়রা বন্দরকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখানোর পাশাপাশি চট্টগ্রাম বন্দরে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। এটি আরও ঘণীভূত ও উত্তর/উত্তর-পূর্বদিকে অগ্রসর হয়ে আজ বিকেলের দিকে ভারতের উড়িষ্যা উপকূলে অতিক্রম করতে পারে। সন্ধ্যা নাগাদ উড়িষ্যা-পশ্চিমবঙ্গ উপকূল হয়ে বাংলাদেশে পৌঁছাতে পারে।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার