৭ আগস্ট, ২০১৯ ১৮:১৩

সেই মনাই ত্রিপুরায় উড়লো জাতীয় পতাকা

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

সেই মনাই ত্রিপুরায় উড়লো জাতীয় পতাকা

অজ্ঞাত রোগেই আক্রান্ত হয়ে একই পরিবারের তিনজনসহ মারা যায় চার শিশু। ছিল না বিদ্যুৎ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। কখনো উড়েনি গর্বের লাল-সবুজের জাতীয় পতাকা। মোবাইলে চার্জ দিতে হতো টাকা দিয়ে। আধুনিক নয়, সাধারণ নাগরিক জীবনেরও ছোঁয়া ছিল না। ছিল অসম্ভব রকমের অসচেতন।  

প্রধান সড়ক থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার পথ থাকলেও ছিল না কোনো সড়ক। এমন একটি অজপাড়া গাঁ ছিল চট্টগ্রামের হাটহাজারীর ফরহাদাবাদ ইউনিয়নের মনাই ত্রিপুরা পাড়া।  

এমন অজপাড়া গাঁয়ে শতাব্দীকাল ধরে বাস করে আসা মনাই ত্রিপুরা পাড়ার বাসিন্দাদের জন্য প্রথমবারের মত নির্মিত হলো স্কুল। বুধবার থেকে এ স্কুলে শুরু হয় আনুষ্ঠানিক পাঠদান। জাতীয় পতাকাকে সম্মান জানানোর মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় দিনের প্রথম পাঠদান। 

হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে নির্মিত স্কুলটি যাত্রা করে ২৬ জন শিক্ষার্থী এবং একজন শিক্ষক দিয়ে। মন্দিরভিত্তিক স্কুল শিক্ষা কার্যক্রম চালু করতে তৈরি করা হয়েছে টিনশেড ঘর, ব্যবস্থা করা হয়েছে সৌর বিদ্যুতের।   

হাটহাজারী উপজেলার নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ রুহুল আমীন বলেন, ‘অনাদিকাল ধরে ত্রিপুরা পাড়ায় মানুষের বাস থাকলেও ছিল না কোনো সুযোগ-সুবিধা। প্রথমবারের মত একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করে সেখানে উড়ানো হলো আমাদের জাতীয় পতাকা। ২৬ জন ছাত্রছাত্রী এবং একজন শিক্ষক নিয়ে যাত্রা করা স্কুলে বাংলা, গণিত, ইংরেজি এবং ধর্ম বিষয়ে পাঠদান করা হচ্ছে। এখান থেকেই পরবর্তীতে পার্শ্ববর্তী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠানো হবে। শিশুদের শিক্ষায় আগ্রহী করে তুলতে এবং অভিভাবকদের সচেতন করতেই এই উদ্যোগ। পর্যায়ক্রমে এ স্কুলের কার্যক্রম আরও সামনের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে।’

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, হাটহাজারী উপজেলার এক নম্বর ফরহাদাবাদ এলাকার মনাই ত্রিপুরা পাড়ায় ২০১৮ সালের ২৬ আগস্ট অজ্ঞাত রোগে চার শিশু মারা যায়। এরপর থেকে পল্লীটি আলোচনায় আসে। বের হয় সেখানে নাগরিক জীবন বলতে কিছু না থাকার নানা তথ্য। অজপাড়া গাঁয়ের এ পল্লীতে ৫৫টি পরিবারে বাস করে ৩৭৫ জন মানুষ। সেখানে ছিল না বিদ্যুৎ। মোবাইলে চার্জ দিতে হয় প্রতি ঘণ্টা পাঁচ টাকা করে। তবে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে দেওয়া হয়েছে সৌর বিদ্যুৎ। ত্রিপুরা পল্লীতে দেওয়া হয় তিনটি বাতি এবং একটি মোবাইলে চার্জ দেয়ার পয়েন্ট। পুরো পল্লীতে মাত্র একটি চায়ের দোকান আছে, সেখানেও লাগনো হয়েছে সোলার বাতি।

জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের প্রায় ৩ লাখ ৭০ টাকা ব্যায়ে প্রধান সড়ক থেকে প্রায় দুই কিলোমিটারের আইলকে উন্নীত করা হয়েছে ১৫ ফুট প্রস্থের কাঁচা সড়কে, তৈরি হয়েছে আটটি কালভার্ট ও আটটি সেমিপাকা বাথরুম। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ৯ লাখ ৬০ হাজার টাকা অর্থায়নে স্থাপন করা হয়েছে তিনটি গভীর নলকূপ। 


বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর