একটি দালাল চক্রের মাধ্যমে বাংলাদেশি সেজে রোহিঙ্গারা পাসপোর্ট করছে দীর্ঘদিন ধরেই। এই চক্রটি নানা কৌশলে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারসহ বিভিন্ন এলাকার ভুয়া ভোটার, ইউপি চেয়ারম্যান সার্টিফিকেটসহ নানাভাবে পাসপোর্ট তৈরি করছে রোহিঙ্গারা।
রোহিঙ্গাদের বিষয়ে সরকার কঠোর নজরদারিও করছে বিভিন্নভাবে। কঠোর কড়া নজরদারির মধ্যেও থেমে নেই রোহিঙ্গাদের নানা কৌশল। ভূয়া নাম ঠিকানা ব্যবহার করেই বাংলাদেশী পাসপোর্ট তৈরি করার চেষ্টা করছে তারা।
আজ বুধবার চট্টগ্রামের বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসে এক রোহিঙ্গা কৌশলে পাসপোর্ট করতে এসেই ধরা পড়েছে। কড়া নজরদারির কারণে চট্টগ্রামে গত এক সপ্তাহের নারী-পুরুষ দুই রোহিঙ্গাকে আটক করে থানা পুলিশকে হস্তান্তর করেছে চট্টগ্রাম বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা কার্যালয়ের কর্মকর্তারা। গ্রেফতারকৃতরা হলেন মো. ফয়সাল ও সুমাইয়া আক্তার নামের দুই রোহিঙ্গা।
আজ বুধবার গ্রেফতারকৃত রোহিঙ্গা মো. ফয়সালের ঠিকানা দেয়া হয়েছে সীতাকুন্ড থানার জঙ্গল লতিফপুর গ্রামের মোহাম্মদ নাসিম ও সমজিদা বেগমের পুত্র। এর আগে গত বৃহস্পতিবার রোহিঙ্গা সুমাইয়া আকতার নামে এক নারী গ্রেফতার করা হয়েছে। বাড়ি হাটহাজারীর ধলই ইউনিয়নের মো. ইলিয়াছকে বাবা পরিচয় দেওয়া হয়। সেই ঠিকানা ও পিতার নামও ভুয়া। পৃথকভাবে দুই রোহিঙ্গাকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা কার্যালয়ের পরিচালক মো. আবু সাইদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, রোহিঙ্গার বিষয়ে নজরদারিতে রয়েছি। কোনো না কোনভাবেই নানা কৌশলে পাসপোর্ট করতে আসা লোকদের যাচাই-বাচাই করা হচ্ছে। রোহিঙ্গারা যাতে পাসপোর্ট করতে না পারে সে বিষয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সতর্ক করা হয়। সরকার ও উর্ধতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনায় প্রতিনিয়ত মনিটরিং করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, পরিচয় লুকিয়ে পাসপোর্ট করাতে এসেছিলেন ফয়সাল নামের এক রোহিঙ্গা যুবক। জিজ্ঞাসাবাদে আসল পরিচয় জানা গেছে। এরপর তাকে আটক করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে বাংলাদেশি সেজে কর্মকর্তাদের বিভ্রান্ত করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতরের সরবরাহকৃত রোহিঙ্গাদের ডাটাবেজে থাকা ফিঙ্গার প্রিন্টের সঙ্গে তার ফিঙ্গার প্রিন্ট যাচাই করলে ধরা পড়ে।
তিনি আরও জানান, এর আগেও গত বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) মনসুরাবাদ বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা কার্যালয়ে পাসপোর্ট করাতে এসে সুমাইয়া আক্তার নামে এক রোহিঙ্গা নারী আটক হয়। সেই নারীও হাটহাজারীর বাসিন্দা সেজে পাসপোর্ট করাতে এসেছিলো।
পাসপোর্টে অফিস সূত্রে জানা যায়, আজ বুধবার ফয়সাল নামের এক রোহিঙ্গা পুরুষকে আটক করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তার প্রকৃত বাবার নাম হচ্ছে সোনা মিয়া, মা আনোয়ারা বেগম। রোহিঙ্গাদের রেজিট্রেশন নাম্বার ১৮৮২০১৯০৫০২১১১৫১১। এই নাম্বারের একটি কার্ডও পাওয়া গেছে।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার সুমাইয়া আক্তার নামে এক রোহিঙ্গা নারীকেও আটক করা হয়েছে। এসময় কাছে সহযোগিতার দায়ে রেজাউল হক নামের এক যুবককে গ্রেফতার করে পুলিশ। তখন এক পর্যায়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সুমাইয়া স্বীকার করেন, দেড় বছর আগে মিয়ানমার থেকে কক্সবাজার ক্যাম্পে এসেছিলেন। দেড় মাস আগে ক্যাম্প থেকে চট্টগ্রাম শহরে আসেন তিনি। রেজাউলের সহযোগিতায় পাসপোর্ট করতে আসেন। পাসপোর্টের আবেদনে হাটহাজারীর ধলই ইউনিয়নের মো. ইলিয়াছকে বাবা পরিচয় দেন। প্রকৃতপক্ষে তার বাবার নাম আবুল ফয়েজ।
বিডি প্রতিদিন/ তাফসীর আব্দুল্লাহ