৫ জুন, ২০২০ ২১:৫৮

করোনার ‘ঝুঁকিতে’ চসিকের কাউন্সিলর প্রার্থীরাও

সাইদুল ইসলাম, চট্টগ্রাম

করোনার ‘ঝুঁকিতে’ চসিকের কাউন্সিলর প্রার্থীরাও

প্রতীকী ছবি

করোনা পরিস্থিতি জেনেও এলাকার মানুষের সেবায় নিয়োজিত ছিলেন সবসময়। জনপ্রতিনিধি হিসেবে করোনায় অসহায় সাধারণ মানুষদের পাশে দাড়াঁলেন। একজন প্রার্থী হওয়ার পাশাপাশি নিয়মিত ভোটারদের খোজঁ-খবরও নিচ্ছেন সবসময়। বর্তমান পরিস্থিতিতেও নানাভাবে করোনা আতংক ও ঝুঁকির মধ্যেও চসিকের কাউন্সিলর প্রার্থীরা মাঠে কাজ করছেন অনেকেই। এতে বর্তমান কাউন্সিলর এবং সংরক্ষিত মহিলা আসনের কাউন্সিলর প্রার্থীসহ তিনজন করোনায় মারা গেছেন। 

অন্যদিকে, বর্তমান কাউন্সিলর হাসান মুরাদ বিপ্লবসহ পরিবার ছাড়াও বর্তমান কাউন্সিলর এবং অধিকাংশ কাউন্সিলর প্রার্থী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। অনেকেই বলছেন, যতটুকু সম্ভব দূরত্ব বজায় রেখেই কাজ করে যেতে হবে। এতে অনেকেই মাঠে আছেন, আবার অনেকেই নেই। তবুও আক্রান্ত হলেও মাঠে থাকবেন বলে জানান বর্তমান কাউন্সিলরসহ অনেক কাউন্সিলর প্রার্থী।  

নির্বাচন কমিশন ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, করোনা পরিস্থিতির কারণে স্থগিত হওয়া গত ২৯ মার্চ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) নির্বাচনে নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডে সংরক্ষিত আসনে ৫৬ জন এবং সাধারণ ওয়ার্ডে (পুরুষ) ১৬১ জন কাউন্সিলর প্রার্থী ছিলেন। এর মধ্যে মেয়র পদেও ছিলেন আওয়ামীলী-বিএনপিসহ ৬ জন প্রার্থী। নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রার্থীরা ব্যাপক প্রচার-প্রচারণাও চালিয়েছেন। 

হঠাৎ করোনা পরিস্থিতির অবনতির দিকে গেলে নির্বাচন কমিশন চসিক নির্বাচন স্থগিত করে দেন। এরপর থেকেই সাধারণ ভোটাররাসহ গরীব-অসহায় মানুষদের পাশে ছিলেন স্ব স্ব ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলরসহ অধিকাংশ কাউন্সিলর প্রার্থী। দিন যতই বাড়ছে চট্টগ্রামে আক্রান্তও বাড়ছে। 

এতে সাধারণ মানুষের সেবা করতে গিয়ে বর্তমান কাউন্সিলরসহ তিনজন প্রার্থী নানা উপসর্গ নিয়ে মারা গেলেন। দেশের করোনা পরিস্থিতিতে আক্রান্ত হয়ে দুইজন কাউন্সিলর প্রার্থী ও অন্যজন সংরক্ষিত আসনের মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থী মারা গেছেন। তারা হলেন কাউন্সিলর প্রার্থী হাসান মুরাদ, বর্তমান কাউন্সিলর মাজহারুল ইসলাম চৌধুরী ও বিএনপির মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থী শাহেদা বেগম। 

আক্রান্ত হয়েছেন বেশ কয়েকজন কাউন্সিলরও। আক্রান্তদের মধ্যে রয়েছেন ৩৩ ওয়ার্ডের পরিবারের সদস্যরাসহ হাসান মুরাদ বিপ্লব, ৩৭ নং ওয়ার্ডের শফিউল আলম, মোরশেদ আকতার, মোরশেদ হোসেন, ২০ দেয়ান বাজার ওয়ার্ডের প্রার্থী রফিকুল ইসলাম বাপ্পীসহ আরো বেশ কয়েকজন।

কাউন্সিলর প্রার্থীদের নিহত পরিবারের সদস্যরা বলছেন, ঝুঁকি নিয়েও এলাকার গরীব অসহায়দের পাশে থেকে নিয়মিত ত্রাণ সামগ্রীসহ নানাবিধ খোজঁ খবর নিতেন এবং দুরত্ব বজায় রাখতে গিয়ে কতটুকু রাখা যায় একজন জনপ্রতিনিধি। কোন না কোনাভাবেই কারো ছোঁয়া লেগেই আক্রান্ত হয়ে পড়েন।

চসিকের ৭ পশ্চিম ষোলশহর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী ও বর্তমান কাউন্সিলর মো. মোবারক আলী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচন স্থগিত হলেও প্রার্থীরা প্রতিটি ওয়ার্ডেই কাজ করে যাচ্ছেন। এতে বিশেষ করে বর্তমান কাউন্সিলররা স্ব স্ব ওয়ার্ডেই নিয়মিত কাজ করতে হচ্ছে। প্রতিটি এলাকায় গরীব-অসহায় মানুষদের পাশে থেকেই নিয়মিত সরকারি ও ব্যক্তিগতভাবে ত্রাণ সামগ্রী ও করোনায় নিরাপত্তাজণিত জিনিসপত্রগুলো সরবরাহ করা হচ্ছে। এতে করে অনেকেই ইতিমধ্যে আক্রান্ত হয়েছেন এবং বর্তমান কাউন্সিলরসহ প্রার্থী মারা গেছেন। 

তিনি আরও জানান, তবে  ঝুঁকির মধ্যেও সতর্কতার সাথে মাঠে কাজ করছি। তাছাড়া গরীব-অসহায় মানুষের নিত্যপণ্য না দিলে এসব দুঃসময়ে কিভাবে বেচে থাকবেন। চেষ্টা করছি অবহেলীত মানুষসহ সকলে শ্রেনীর মানুষের পাশে থেকেই কাজ করার জন্য। একই কথা বললেন ৬ নং পূর্ব ষোলশহর ওয়াের্ডর বর্তমান কাউন্সিলর মো. আশরাফুল আলমও।

নগর বিএনপির দপ্তর সম্পাদক ইদ্রিস আলী বলেন, করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও এসব জনপ্রতিনিধিরা সাধারণ মানুষের পাশে থেকেই কাজ করেছেন। কোন এক সময় নিজের অজান্তে এই করোনাভাইসে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। একটু অসুস্থ বোধ করায় স্বাভাবিক চিকিৎসা শুরু করেন তিনি। পরে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। তবে বিএনপির পক্ষ থেকে শোকও জানানো হয়েছে।

চসিক সূত্রে জানা গেছে, গত ২৬ মে চসিকের ৩০ নম্বর পূর্ব মাদারবাড়ি ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর মাজহারুল ইসলাম চৌধুরী (৫২)  চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। আক্রান্ত হয়ে ঢাকার আনোয়ার খান মর্ডান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তিনি নগরীর সদরঘাট থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। গত ২৮ এপ্রিল চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বাকলিয়া এলাকার ১৭, ১৮ ও ১৯ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থী শাহেদা বেগমও (৫৫) করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। তিনি নগর বিএনপির সদস্য ও নগর মহিলা দলের সহ-সভাপতি ছিলেন।

 

বিডি-প্রতিদিন/সিফাত আব্দুল্লাহ

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর