উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে দোয়ানি পয়েন্টে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে তৃতীয় দফায় প্লাবিত হয়েছে লালমনিরহাটের ৫ উপজেলা নিম্নাঞ্চল। পানি প্রবেশ করায় রাস্তাঘাটে চলাচলে দুর্ভোগে পড়েছে মানুষ।
মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) দুপুর ১২টায় লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ১৭ মিটার। যা বিপদসীমার (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ১৫ মিটার) ২ সেন্টিমিটার ওপরে।
নদীপাড়ের মানুষ ও বন্যা সতর্কিকরণ কেন্দ্র জানায়, কয়েক দিনের ভারি বৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ সোমবার রাত থেকে বাড়তে থাকে।
মঙ্গলবার সকাল ৬ টা ও ৯ টায় তিস্তা নদীর ডালিয়া পয়েন্টে পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় বিপদসীমার দুই সেন্টিমিটার নিচে। দুপুর ১২টায় আরও বৃদ্ধি পেয়ে তা বিপদসীমা অতিক্রম করে দুই সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে তিস্তা নদীর উভয় পাড়ের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ডুবেছে চরাঞ্চলের রাস্তা ঘাট, আমনের খেত। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে বেশ কিছু পরিবার। এসব এলাকার মানুষ তাদের মালপত্র ও গবাদি পশুপাখি অন্যত্র সড়িয়ে নিচ্ছেন।
তিস্তার পানি বৃদ্ধির ফলে লালমনিরহাট সদর, পাটগ্রাম, হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জ, আদিতমারী উপজেলার বেশ কিছু নিম্নাঞ্চলে পানি ঢুকে পড়েছে। এর মধ্যে পাটগ্রামের দহগ্রাম, হাতীবান্ধার গড্ডিমারী, দোয়ানী, ছয়আনী, সানিয়াজান, সিঙ্গামারী, সিন্দুর্না, হলদিবাড়ী, ডাউয়াবাড়ী, কালীগঞ্জের ভোটমারী, শৈলমারী, নোহালী, আদিতমারীর মহিষখোচা, গোবর্ধন, বাহাদুরপাড়া, পলাশী এবং সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, কুলাঘাট, মোগলহাট, রাজপুর, বড়বাড়ী ও গোকুন্ডা ইউনিয়নের নিচু অঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
পানি প্রবাহ যত বাড়বে বন্যার শঙ্কা ততই বাড়বে। এতে তিস্তার বাম তীরের লালমনিরহাটে তৃতীয় দফায় বন্যার আশংকা দেখা দিয়েছে। পানির চাপের কারণে বেশ কিছু রাস্তা ও বাঁধ ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। বিশেষ করে কালীগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ ভোটমারীতে ইস্ট্রাকো সোলার প্যানেল এলাকা ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে। এ স্থানে তিস্তা নদীর মুলস্রোত ধারা বন্ধ করে সোলার প্যানেল স্থাপন করায় নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে লোকালয়ে প্রবেশ করতে রাস্তাগুলোতে চাপ পড়েছে। এটি ভেঙে গেলে নদী চলে আসবে কালীগঞ্জ উপজেলা শহরে।
স্থানীয় রেজাউল ইসলাম জানান, সোলার প্যানেলের কারণে পানির চাপ পড়ছে লোকালয়ের রাস্তা বাঁধে। এটি রক্ষা করা না হলে হাজার হাজার বসতভিটা ও ফসলি জমি নষ্ট হবে নদী চলে আসবে উপজেলা শহরে।
নিজ গড্ডিমারী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য জাকির হোসেন জানান, নিচু এলাকায় পানি ঢুকতে শুরু করেছে। পরিবারগুলো পানিবন্দি হয়ে পড়ছে। ডুবে গেছে এ এলাকার রাস্তা ঘাট। পশুপাখি শিশু বৃদ্ধ আর প্রতিবন্ধিদের নিয়ে চরম বিপাকে পড়েন পানিবন্দি পরিবারগুলো।
ফকিরপাড়ার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলা রহমান খোকন বলেন, হঠাৎ তিস্তা ও সানিয়াজান নদীর পানি বৃদ্ধি পায়। এতে সানিয়াজান ব্রিজের সামনে কচুরিপানার কারণে ওজনের ঘর বাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে। এতে রাস্তাঘাট রোপা আমন এবং মানুষের ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করে দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড লালমনিরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী শুনীল কুমার জানান, বৃষ্টি ও উজানের ঢলে তিস্তা নদীর পানি বাড়ছে। মঙ্গলবার দুপুর ব্যারাজ পয়েন্টে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে তিস্তার পানি। তিস্তা তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে। এ অবস্থা আগামী দুইদিন অব্যাহত থাকতে পারে। ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ ও রাস্তাগুলো সর্বক্ষণিক পর্যবেক্ষন করা হচ্ছে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল