মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন গাজা যুদ্ধ বন্ধের জন্য ২১ দফার একটি নতুন পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে। মার্কিন দাবি মতে, এই পরিকল্পনার মূল লক্ষ্য হলো সেখানে সব ধরনের সামরিক অভিযান অবিলম্বে বন্ধ করা এবং যুদ্ধবিরতি কার্যকর করা। পরিকল্পনা অনুযায়ী, যুদ্ধ যে অবস্থায় আছে সেখানেই থেমে যাবে।
প্রথম ধাপেই জিম্মি মুক্তি। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, যুদ্ধবিরতি কার্যকরের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে জীবিত ২০ ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দিতে হবে। এর পাশাপাশি ২৪ জন জিম্মির মরদেহ হস্তান্তর করতে হবে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, হামাসের যাবতীয় আক্রমণাত্মক অস্ত্র ধ্বংস করা হবে। যারা 'শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে প্রতিশ্রুতি' দেবে, তাদের ক্ষমা করে দেওয়ার প্রস্তাবও করা হয়েছে। আর হামাসের যেসব সদস্য গাজা ছাড়তে চাইবেন, তাদের নিরাপদে অন্য দেশে যেতে সহায়তা করা হবে।
পরিকল্পনায় আরও নির্দিষ্ট করে বলা হয়েছে সব ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার পর যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ২৫০ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেবে ইসরায়েল। পাশাপাশি ৭ অক্টোবরের পর আটক ১ হাজার ৭০০ গাজাবাসীকেও ছেড়ে দেওয়া হবে। এছাড়া ইসরায়েলি জিম্মিদের প্রতি মরদেহ ফেরত দেওয়ার বিনিময়ে ১৫ জন করে গাজাবাসীর মরদেহ ফেরত দেবে ইসরায়েল।
এই চুক্তি গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে গাজা উপত্যকায় পূর্ণমাত্রায় সহায়তা পাঠানো হবে। এর মধ্যে থাকবে অবকাঠামো পুনর্গঠন (পানি, বিদ্যুৎ, নর্দমা), হাসপাতাল ও বেকারি পুনর্গঠন এবং ধ্বংসস্তূপ সরাতে ও রাস্তা খোলার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম পাঠানো। ত্রাণ প্রবেশ ও বিতরণ দুই পক্ষের কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ ছাড়াই জাতিসংঘ ও তার সংস্থাগুলোর মাধ্যমে করা হবে।
পরিকল্পনায় গাজাবাসীকে চলে যেতে বাধ্য করা হবে না এবং যারা ছেড়ে যাবে, তারা ফেরত আসার অধিকার রাখবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে ‘যোগ্য ফিলিস্তিনি এবং আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের’ তৈরি ‘অস্থায়ী অন্তর্বর্তী শাসনের’ কথা বলা হয়েছে। যারা গাজার ‘দৈনন্দিন’ জনসেবা পরিচালনা করবে। একইসঙ্গে পশ্চিম তীরভিত্তিক ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ অভ্যন্তরীণ সংস্কার বাস্তবায়ন করবে।
নিরাপত্তার জন্য, একটি অস্থায়ী আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা রক্ষাকারী বাহিনী (স্টাবিলাইজেশন ফোর্স) গঠনের জন্য আরব এবং আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করবে যুক্তরাষ্ট্র। এই বাহিনী অবিলম্বে গাজায় মোতায়েন করা হবে এবং নিরাপত্তা তদারকি করবে, যতক্ষণ না একটি ফিলিস্তিনি বাহিনী প্রস্তুত হয়।
পরিকল্পনায় আরও বলা হয়েছে, ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী গাজার যেসব অঞ্চল দখল করছে, তা ধাপে ধাপে হস্তান্তর করবে। শেষ পর্যন্ত শুধু ‘সীমান্ত উপস্থিতি’ ছাড়া ইসরায়েলের সেনাদের গাজা থেকে সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহার করা হবে। এছাড়া নথিতে গাজা দখল বা গাজার কোনো অংশ ইসরায়েল দখল করবে না তার প্রতিশ্রুতি এবং কাতারে আর কোনো হামলা চালাবে না সে বিষয়টিও নতুন করে যুক্ত করা হয়েছে।
তবে ইসরায়েল বা হামাস, কোনো পক্ষই এখনো এই প্রস্তাবিত পরিকল্পনায় সম্মত হয়নি। মার্কিন কর্মকর্তারা আঞ্চলিক ও মিত্র দেশগুলোর কর্মকর্তাদের সঙ্গে এটি নিয়ে আলোচনা করেছেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আজ সোমবার হোয়াইট হাউসে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠকের সময় প্রস্তাবটি গ্রহণ করতে তাঁকে চাপ দেবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সূত্র: ওয়াশিংটন পোস্ট
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল