ভিসার নিয়মে বড় পরিবর্তন এনেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। এই পদক্ষেপের প্রধান উদ্দেশ্য হলো বিশ্বজুড়ে থাকা মেধাবী মানুষ, বিশেষজ্ঞ এবং ব্যবসায়ীদের আমিরাতের প্রতি আকর্ষিত করা। বিশেষ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, প্রযুক্তি, পর্যটন ও বিনোদন খাতকে চাঙ্গা করাই এর মূল লক্ষ্য। আমিরাতের পরিচয়, নাগরিকত্ব, শুল্ক ও বন্দর নিরাপত্তা বিভাগ (আইসিপি) নতুন চারটি ভিজিট ভিসা চালু করছে। এর পাশাপাশি পরিবর্তন করা হয়েছে বেশ কিছু পুরনো ভিসার মেয়াদ, শর্ত ও নিয়মও।
দেশটির ফেডারেল অথরিটি ফর আইডেন্টিটি, সিটিজেনশিপ, কাস্টমস অ্যান্ড পোর্ট সিকিউরিটি (আইসিপি)-এর এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, দেশটির প্রবেশ ভিসা নীতিমালায় গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন ও নতুন সংযোজনের অংশ হিসেবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বিশ্বের প্রতি সংযুক্ত আরব আমিরাতের উন্মুক্ত দৃষ্টিভঙ্গি এবং প্রযুক্তি—বিশেষ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, বিনোদন এবং পর্যটন খাতে প্রতিভা, দক্ষতা ও উদ্যোক্তাদের আকৃষ্ট করার প্রচেষ্টারই অংশ এই পদক্ষেপ।
আইসিপির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সুহাইল সাঈদ আল খাইলি জানিয়েছেন, স্থানীয় থেকে আন্তর্জাতিক— সব স্তরের বর্তমান ও ভবিষ্যতের পরিস্থিতি বিশ্লেষণ এই পরিবর্তন আনা হয়েছে। নতুন এই ভিসাগুলোর প্রতিটির জন্য নির্ধারিত সময়সীমা ও শর্তাবলী নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ থাকবে, যা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেওয়া হবে।
ভিসার নিয়মে বড়সড় পরিবর্তন
এই নতুন নিয়মকানুনগুলো এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যেন যারা আমিরাতে থাকতে, কাজ করতে বা ব্যবসা করতে চান তাদের জন্য সবকিছু সহজ হয়। এর ফলে মানুষের জীবনযাত্রার মান বাড়বে, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার হবে এবং দেশটি বিশ্ব দরবারে আরও এগিয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
নতুন চার ভিজিট ভিসা
১. কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) বিশেষজ্ঞদের জন্য: প্রযুক্তিভিত্তিক প্রতিষ্ঠানের স্পন্সর পেলে এ খাতের বিশেষজ্ঞরা একক বা একাধিকবার ভ্রমণের জন্য নির্দিষ্ট সময়ের ভিসা পাবেন।
২. বিনোদন ভিসা: যারা বিনোদনের জন্য আমিরাত ভ্রমণ করবেন তারা এই ভিসা পাবেন।
৩. অনুষ্ঠান ভিসা: উৎসব, প্রদর্শনী, সম্মেলন বা সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক, খেলাধুলা সংক্রান্ত যেকোনো ধরনের অনুষ্ঠানে অংশ নিতে এই ভিসা দেওয়া হবে। তবে অনুষ্ঠানের আয়োজক (সরকারি বা বেসরকারি) প্রতিষ্ঠানের চিঠি লাগবে।
৪. ক্রুজ জাহাজ কর্মীদের ভিসা: ক্রুজ জাহাজে যারা পর্যটকদের নিয়ে আসেন, তাদের জন্য একাধিকবার প্রবেশের সুযোগসহ ভিসা দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে লাইসেন্সপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানকে জামিনদার হতে হবে এবং ভ্রমণের বিস্তারিত পরিকল্পনা জমা দিতে হবে।
অন্যান্য ভিসার পরিবর্তন
মালবাহী ট্রাক চালকের ভিসা: একক বা একাধিকবার আমিরাতে আসার জন্য এই ভিসা দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে মাল পরিবহন ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠানকে স্পন্সর করতে হবে। এক্ষেত্রে অর্থের নিশ্চয়তা, নির্দিষ্ট ফি এবং স্বাস্থ্য বীমা থাকতে হবে।
রিলেটিভ অ্যান্ড ফ্রেন্ড ভিসা: খুব কাছের আত্মীয়দের আনার জন্য যিনি জামিনদার হবেন, তার মাসিক আয় কমপক্ষে ৪ হাজার দিরহাম হতে হবে। দূরআত্মীয়দের ক্ষেত্রে মাসিক আয় কমপক্ষে ৮ হাজার দিরহাম হতে হবে। বন্ধুকে আমিরাতে আনার জন্য জামিনদারের মাসিক আয় কমপক্ষে ১৫ হাজার দিরহাম হতে হবে।
ব্যবসা স্থাপনের ভিসা: যারা এখানে এসে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তৈরি করতে চান, তাদের এখন তাদের প্রস্তাবিত ব্যবসার ধরন অনুযায়ী আর্থিক সামর্থ্য প্রমাণ করতে হবে। অথবা দেশের বাইরে তাদের একই ধরনের ব্যবসার অভিজ্ঞতা বা প্রতিষ্ঠান থাকতে হবে।
বিশেষ ও মানবিক ক্ষেত্রে
মানবিক আবেদন: মানবিক কারণে ভিসা দেওয়া হবে এক বছরের জন্য। তবে যে দেশগুলো যুদ্ধ, দুর্যোগ বা রাজনৈতিক অস্থিরতার শিকার, সেখানকার বিদেশিদের ক্ষেত্রে মহাপরিচালক চাইলে জামিনদার ছাড়াই বসবাসের অনুমতি দিতে বা তা নবায়ন করতে পারেন। তবে কেউ এ অনুমতি নিয়ে আমিরাত ছেড়ে চলে গেলে তা বাতিল হয়ে যাবে।
স্বামীহারা বা বিবাহবিচ্ছেদ হওয়া বিদেশি নারীদের আবাসন: এই নতুন নিয়মে স্বামী মারা গেলে বা বিবাহবিচ্ছেদ হলে বিদেশি নারীরা স্পন্সর ছাড়াই বসবাসের সুযোগ পাবেন। স্বামী আমিরাতের নাগরিক হলে তার মৃত্যু বা বিচ্ছেদের ৬ মাসের মধ্যে সন্তানহীন স্ত্রীরা এই সুবিধা পাবেন।
বিদেশি স্বামীর ক্ষেত্রেও, মৃত্যু বা বিচ্ছেদের ৬ মাসের মধ্যে যে স্ত্রী সন্তানদের তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব নেবেন, তিনি এই সুবিধা পাবেন। তবে তাকে অবশ্যই আমিরাতের ভেতরে থাকতে হবে এবং বিচ্ছেদ বা মৃত্যুর সময় স্বামীকেই স্পন্সর হতে হবে।
যদি মা তার সন্তানদের নিয়ে থাকার জন্য জামিনদার হতে চান, তবে তাকে অবশ্যই সন্তানদের আইনগত তত্ত্বাবধায়ক হতে হবে।
এই সব ক্ষেত্রে আর্থিক সক্ষমতা ও থাকার উপযুক্ত জায়গার শর্ত পূরণ করতে হবে। উপযুক্ত কারণ দেখালে এই ভিসার মেয়াদ বাড়ানো যেতে পারে। সূত্র: গালফ নিউজ ও খালিজ টাইমস।
বিডি-প্রতিদিন/শআ