বিশ্বজনমত যত বিরুদ্ধে যাচ্ছে তত বেশি বর্বর হয়ে উঠছে ইসরায়েল। এ অবস্থায় গতকাল পর্যন্ত দুই দিনে ইসরায়েল গাজার সবচেয়ে বড় হাসপাতালে একের পর এক হামলা চালিয়েছে। পাশাপাশি আশপাশের আবাসিক এলাকা সম্পূর্ণ মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিচ্ছে। হামলার মাধ্যমে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ধ্বংস করা হচ্ছে সবকিছু। পাশাপাশি গাজা নগরী দখলের জন্য স্থল অভিযানও অব্যাহত রাখা হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে স্পর্শকাতর স্থাপনায় নতুন ধরনের বর্বরতা চালানো হচ্ছে। সূত্র : আলজাজিরা, এএফপি, রয়টার্স।
গাজার সবচেয়ে বড় হাসপাতাল আল-শিফার চিকিৎসকেরা রবিবার ইসরায়েলি হামলার ‘ভয়াবহ দৃশ্যের’ বর্ণনা দিয়েছেন। হাসপাতালের চিকিৎসা পরিচালক হাসান আল-শাইর বলেন, কঠোর পরিস্থিতি ও আতঙ্কের মধ্যেই চিকিৎসক ও চিকিৎসাকর্মীরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে অন্তত ১০০ রোগীকে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। হাসপাতালে রোগীর চাপে জীবন রক্ষাকারী ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জামের ঘাটতি দেখা দিয়েছে।
প্যালেস্টিনিয়ান সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটসের গবেষকেরা নিশ্চিত করেছেন, হামলার ক্ষেত্রে ইসরায়েল এমন দাহ্য অস্ত্র ব্যবহার করছে, যা নির্দিষ্ট একটি এলাকা পুড়িয়ে দিতে সক্ষম। সেনারা হাসপাতালের চারপাশে বিস্ফোরকবাহী গাড়িও মোতায়েন করেছে। ফিলিস্তিন সংবাদ সংস্থা ওয়াফাকে চিকিৎসা-সংশ্লিষ্ট এক সূত্র জানিয়েছে, ইসরায়েলি সেনারা আল-হেলু হাসপাতালেও বোমা হামলা চালিয়েছে। সেখানে ক্যানসার ও নবজাতক বিভাগে অপরিপক্ব অবস্থায় জন্ম নেওয়া ১২টি শিশু চিকিৎসাধীন। চিকিৎসাকর্মীরা ওয়াফা সংবাদ সংস্থাকে বলেছেন, আল-হেলু হাসপাতালে ৯০ জনের বেশি চিকিৎসক, নার্স ও রোগী আটকে আছেন। ইসরায়েলি ট্যাংক হাসপাতালের চারপাশে অবস্থান নিয়েছে। ঢোকা ও বের হওয়ার পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, ইসরায়েলি সেনারা গত রবিবার মক্কা টাওয়ার নামের একটি বহুতল ভবনে বোমাবর্ষণ করেছে। এর আগে রেমাল ও সাবরা অঞ্চলের বাসিন্দাদের নিরাপদ এলাকা ছেড়ে দিতে সতর্ক করা হয়েছিল। সাম্প্রতিক সপ্তাহে গাজা নগরীর অন্তত ৫০টি বহুতল ভবন ধ্বংস করেছে ইসরায়েল। সংবাদ সূত্রগুলো জানায়, ব্যাপক ও বেপরোয়াভাবে হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। ভারী গোলাবারুদ, ড্রোন এবং বোমা ব্যবহার করে ভবনের ভিত্তি পর্যন্ত ধ্বংস করা হচ্ছে।
অস্ত্র নিষেধাজ্ঞার দাবিতে ব্রিটিশ লেবার পার্টিতে ভোট : গাজায় গণহত্যার স্বীকৃতি ও ইসরায়েলের ওপর নিষেধাজ্ঞার দাবিতে নিজ দলে ভোটের আয়োজন করবে যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন লেবার পার্টি। রবিবার থেকে লিভারপুলে পার্টির বার্ষিক সম্মেলন শুরু হয়েছে। সম্মেলনে লেবার পার্টির প্রতিনিধিরা গাজায় গণহত্যার স্বীকৃতির পাশাপাশি ইসরায়েলের ওপর পুরোপুরি অস্ত্র নিষেধাজ্ঞার ওপর ভোট দিচ্ছেন। প্রসঙ্গত, ফিলিস্তিনকে স্বাধীন দেশ হিসেবে যুক্তরাজ্যের স্বীকৃতির পর ক্ষমতাসীন দলটির এই বার্ষিক সম্মেলন আয়োজন করা হয়েছে। খবরে বলা হয়, প্রতিনিধি ভোটে যদি তাদের প্রস্তাবটি পাস হয় তাহলে লেবার পার্টি জাতিসংঘের গাজা গণহত্যা সংক্রান্ত প্রতিবেদনটি আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করবে। এর ফলে ইসরায়েলের ওপর সর্বাত্মক অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার বিষয়টিও দলীয়ভাবে গ্রহণ করা যাবে। পিএসসির পরিচালক বেন জামাল মনে করেন, প্রস্তাবটি যদি পাস হয় তাহলে লেবার পার্টির পক্ষ থেকে সরকারের নীতি পরিবর্তনে চাপ দেওয়া যাবে।