উপমহাদেশের অন্যতম প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে আবারও ডিম ছেড়েছে মা মাছ। গত কয়েক দিনের ভারী বর্ষণ, পাহাড়ি ঢল ও মেঘলা আকাশের কারণে হালদায় বেড়েছে মা মাছের আনাগোনা। ফলে তৈরি হয়েছে অনুকূল পরিবেশ। দ্বিতীয় দফায় ডিম ছাড়ে মা মাছ। সংগ্রহকারীরা মেতে উঠেছে ডিম সংগ্রহে। আবারও নৌকা ভাসিয়েছেন নদীতে। আজ বিকালের জোয়ারে তারা দ্বিতীয়বারের মত ডিম আহরণ করে।
জানা যায়, গত ২৬ মে রাতে নমুনা ডিম ও ২৭ মে রাতে পূর্ণাঙ্গ রূপে ডিম ছাড়ে মা মাছ। গত বৃহস্পতিবার রাতভর হালদা নদীর হাটহাজারী ও রাউজান উপজেলার ৩৮৩টি নৌকায় ৮০০ ডিম সংগ্রহকারী ডিম সংগ্রহ করে। তখন সবাই মিলে সাড়ে ৬ হাজার কেজি ডিম সংগ্রহ করা হয়। তবে গত বছরের তুলনায় ডিম সংগ্রহ কম হওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়েন সংগ্রহকারীরা। তাছাড়া লবণাক্ত পানি ও হ্যাচারি অব্যবস্থাপনায় নষ্ট হয় ডিম। সকাল থেকে আজিমের ঘাট, নাপিতের ঘোনা মাছুয়া ঘোনা, নয়াহাট, কাগতিয়া, উত্তর মাদার্শাসহ বিভিন্নস্থানে মাছের আনাগোনা বাড়ায় ডিম আহরণকারীরা নৌকা নিয়ে আবারও নদীতে নেমে পড়েন।
ডিম সংগ্রহকারী কামাল উদ্দিন সওদাগর বলেন, বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢল থাকায় গত মঙ্গলবার থেকে হালদায় মা মাছের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। তাই আমরা ডিম আহরণের নানা উপকরণ নিয়ে প্রস্তুতি নিয়ে রাখি। বিকালে জোয়ারের সময় আবারও ডিম সংগ্রহ করি।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হালদা রিভার রিচার্স ল্যাবরেটরির সমন্বয়ক অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, হালদা নদীতে এ মৌসুমে দ্বিতীয়বারের মত ব্রুড মাছ ডিম ছেড়েছে। ডিম সংগ্রহকারীরা উৎসবমুখর পরিবেশে নতুন উৎসাহ নিয়ে নদী থেকে ডিম সংগ্রহে নামেন। গত কয়েকদিনের বৃষ্টি ও পাহাড়ের ঢল ডিম সংগ্রহকারীদের মুখে নতুন করে হাসি ফুটিয়েছে।
হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রুহুল আমিন বলেন, ‘গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে হালদায় মা মাছের আনাগোনা বাড়ছে। তাই বুধবার সকাল থেকেই আমরা নদীর বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিন পরিদর্শন ও তদারকির মধ্যে রেখেছি। সংগ্রহকারীরা আবারও ডিম সংগ্রহ করেন।
জানা যায়, চট্টগ্রামের হাটহাজারী, রাউজান ও ফটিকছড়ি উপজেলার প্রায় ৯৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এলাকাজুড়ে হালদা নদীর অবস্থান। প্রতি বছর এপ্রিল থেকে জুন মাসের মধ্যে পূর্ণিমা-অমাবস্যার তিথিতে বজ্রসহ বৃষ্টি হলে পাহাড়ি ঢল নামে হালদা নদীতে। তখনই তাপমাত্রা অনুকূলে থাকলে ডিম ছাড়ে কার্প জাতীয় মাছ। এবার পূর্ণিমা তিথি থাকলেও বর্ষণ এবং পাহাড়ি ঢল ছাড়াই মা মাছ ডিম ছেড়ে দিয়েছে। প্রথম দফায় মিলেনি আশানুরূপ ডিম।
জেলা মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত বছর হালদা নদীতে রেকর্ড পরিমাণ ডিম সংগ্রহ করা হয়েছিল- ২৫ হাজার ৫৩৬ কেজি। ২০১৯ সালে সংগ্রহ করা হয় প্রায় সাত হাজার কেজি, ২০১৮ সালে সংগ্রহ করা হয় ২২ হাজার ৬৮০ কেজি, ২০১৭ সালে মাত্র ১ হাজার ৬৮০ কেজি, ২০১৬ সালে ৭৩৫ (নমুনা ডিম) কেজি, ২০১৫ সালে ২ হাজার ৮০০ কেজি এবং ২০১৪ সালে ১৬ হাজার ৫০০ কেজি।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার