চট্টগ্রামে গতকাল মঙ্গলবার শেষ রাতে শুরু হয় মুষলধারে বৃষ্টি। রাতের ভারী বর্ষণে জমে যায় হাঁটুজল। নিম্নাঞ্চলে থৈ থৈ করছে পানি। তৈরি হয় চরম জলাবদ্ধতা। অল্প বৃষ্টিতে ডুবে যায় নগরের নিম্নাঞ্চল। কোথাও হাঁটুপানি, কোথাও কোমর পানি। ডুবে যায় দোকানপাট, মার্কেট। দুর্ভোগে পড়েন কর্মস্থলগামী সাধারণ মানুষ। সকালের দিকে সড়কে কম থাকে গণপরিবহন। গণপরিবহন কম থাকায় ভোগান্তিতে পড়তে হয় যাত্রীদের। পানি বন্দী হয়ে অনেকেই বাসা থেকেও বের হতে পারেননি।
নগরবাসীর অভিযোগ, জলাবদ্ধতা আমাদের কপালের লিখন। অথচ এ নিয়ে কত প্রকল্প, কত পরিকল্পনা এবং নীতিনির্ধারকদের কত নীতিবাক্য শুনি। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না। বৃষ্টি মানেই জলাবদ্ধতা, আমাদের দুর্ভোগ। তাই এখন বৃষ্টি হলেই আমরা মনে করি অন্তহীন কষ্ট, সীমাহীন দুর্ভোগের মুখোমুখি হওয়া। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় নগরের নীতিনির্ধারকরা সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করেন না। তারা জনগণের প্রতি একটু আন্তরিক হলে, একটু দায়বদ্ধ থাকলে যুগের পর যুগ আমাদের এ অসহনীয় দুর্ভোগ সহ্য করতে হত না।
পতেঙ্গার আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, আজ বুধবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে ৩৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকায় এই বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এ বৃষ্টি আরও দুই দিন অব্যাহত থাকতে পারে।
আজ বুধবার নগরের বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আগ্রাবাদ সিডিএ, বহদ্দারহাট, কাপাসগোলা, বাদুরতলা, মুরাদপুর, ষোলশহর দুই নম্বর গেইট, প্রবর্তক মোড়, চকবাজার, বাকলিয়াসহ বিভিন্ন এলাকার নিম্নাঞ্চল ডুবে যায়। এ যান চলাচলে তৈরি হয় প্রতিবন্ধকতা। অফিসগামীরা কেউ পায়ে হেঁটে, কেউ রিকশায় অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে গন্তব্যে গেছেন। তবে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন কর্মজীবী নারীরা। গার্মেন্ট কর্মী জাহান আখতার বলেন, অফিসে যাওয়ার জন্য সেই কখন বের হয়েছি। কিন্তু রাস্তায় এসে কোনো যানবাহন পাচ্ছি না। সড়কে সড়কে পানি। ফলে চলছে না যানবাহন। রিকশা ভাড়াও দ্বিগুণ। কিন্তু অফিসে তো যেতেই হবে।
চসিকের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি কাউন্সিলর মো. মোবারক আলী বলেন, নগরের নালা-নর্দমায় পলিথিনসহ বিভিন্নভাবে প্রতিবন্ধকতার কারণে পানি জমেছে। তবে জমে যাওয়া পানি দ্রুত সরেও গেছে। তাছাড়া চসিকের কর্মীরা প্রতিবন্ধকতা অপসারণে কাজ করছে। দুপুরের আগেই প্রায় সব এলাকা থেকে পানি নেমে যায়।
জানা যায়, নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে তিন সংস্থার চারটি প্রকল্পের কাজ চলছে। এর মধ্যে দুটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সিডিএ, একটি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এবং একটি পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। চউক বাস্তবায়ন করছে ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সংস্কার ও সম্প্রসারণ এবং উন্নয়ন’ শীর্ষক ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকার মেগা প্রকল্প এবং দুই হাজার ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়ন করছে চাক্তাই-কালুরঘাট মেরিনার্স সড়ক প্রকল্প।
চসিক বাস্তবায়ন করছে ১২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘বহদ্দার হাট-বারৈপাড়া থেকে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত নতুন খাল খনন প্রকল্প। তাছাড়া ১৬০০ কোটি টাকা ব্যয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড বাস্তবায়ন করছে একটি প্রকল্প। তবে প্রকল্পগুলোর এখনও চলমান।
বিডি প্রতিদিন/আবু জাফর