সাভারে এক ভুয়া ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায় মনতাজুল ইসলাম (৩১) নামে মশক নিবারণ দপ্তরের এক কর্মীর মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে। সোমবার সকালে সাভার পৌর এলাকার উত্তর রাজাশন মহল্লার মন্ডল ফার্মেসীতে এ ঘটনা ঘটে। নিহত যুবক ঢাকা মশক নিবারণ দপ্তরে চাকরি করতেন। ঘটনার পর নিহতের মরদেহ নিয়ে স্থানীয়রা ওই ফার্মেসীর সামনে অবস্থান নেয়।
অভিযুক্ত ডাক্তার কিছুদিন আগেও রাজমিস্ত্রীর কাজ করতেন বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। ঘটনার পর ভুয়া ডাক্তার তার ফার্মেসীতে তালা ঝুলিয়ে পালিয়ে গেছেন। এ ঘটনার পরে ওই ভুয়া ডাক্তারের গ্রেফতার দাবিতে উত্তর রাজাশন এলাকায় বিক্ষোভ করে এলাকাবাসী।
নিহতের বাবা মোজাহার আলী বলেন, তারা তাদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সাভার পৌর এলাকার উত্তর রাজাশন মহল্লায় সলু মিয়ার বাড়িতে ভাড়া থাকেন। রবিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে তার ছেলে মনতাজুল ইসলামের বুকে প্রচন্ড ব্যথা শুরু হয়। এ সময় তারা মনতাজুলকে বাড়ির পাশে মন্ডল ফার্মেসীতে নিয়ে গেলে ভুয়া ডাক্তার তার ছেলের শরীরে ইনজেকশন পুশ করেন ও বিভিন্ন ব্যথার ওষুধ খাওয়ার জন্য দেন। ব্যথার ওষুধ খাওয়ার পর ছেলেকে বাড়ি নিয়ে আসেন পরিবারের সদস্যরা। এর এক ঘন্টা পর আবারও বুকে প্রচন্ড যন্ত্রনা শুরু হলে তাকে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে বলেন। তবে নিহতের পরিবার হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ না নিয়েই ছেলেকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে আসেন।
এদিকে বাড়িতে আসার পর আবারও আগের চিকিৎসকের দেওয়া ওষুধ সেবন করাতে থাকলে রবিবার সকালে পুনরায় প্রচন্ড ব্যথা শুরু হয়ে যুবকের মৃত্যু হয়। খবর পেয়ে সাভার মডেল থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে।
নিহতের বাবা মোজাহার অভিযোগ করে বলেন, তার ছেলে সম্পূর্ণ সুস্থ ছিলেন। ভুয়া ডাক্তারের ভুল চিকিৎসার কারনেই তার ছেলের মৃত্যু হয়েছে।
স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করেন, শহিদুল ইসলাম একজন রাজমিস্ত্রী ছিলেন। গত কয়েক মাস আগে সে উত্তর রাজাশন এলাকায় একটি ফার্মেসী চালু করে ডাক্তারি শুরু করেন।
এদিকে ভুয়া ডাক্তারের পাশাপাশি ওই রোগীর মৃত্যুর জন্য পরিবারের লোকজনের অবহেলাকেও দায়ী করেছেন স্থানীয় অনেকে। তাদের মতে ভুয়া ডাক্তার জেনেও মানুষ কেন তার কাছে রোগী নিয়ে গেল? এছাড়া হাসপাতাল থেকে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়ার কথা বলা হলেও তারা সেটা না শুনে ভুয়া ডাক্তারের দেওয়া ওষুধই সেবন করান।
এ ব্যাপারে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার আমজাদ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, রাজমিন্ত্রী কীভাবে ডাক্তার হয় আমার জানা নেই। বিষয়টি খতিয়ে দেখে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে এ ধরণের ব্যাপারে সাধারণ মানুষকেও সচেতন হতে হবে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ফার্মেসী ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের সাভার উপজেলার সভাপতি ডা. জাহাঙ্গীর হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, মন্ডল ফার্মেসীর মালিক শহিদুল ইাসলামের কোন ড্রাগ লাইসেন্স নেই। এমনকি সে কোন এমবিবিএস ডাক্তারও না। ইনজেকশন পুশ করার কোন অনুমোদন তার নেই।
জয়নাল আবেদিন নামের স্থানীয় এক ব্যবসায়ী অভিযোগ করে বলেন, গত কয়েকমাস আগে তিনি আমার বাড়িতে রাজমিস্ত্রীর কাজ করেছে। হঠাৎ করেই কয়েকদিন যাবৎ ফার্মেসী খুলে নামের আগে বসিয়েছেন ডাক্তার। এ ধরনের ভুয়া ডাক্তারের ইনজেকশনে রোগী মারা যাবে এটাইতো স্বাভাবিক।
এ ব্যাপারে সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম কামরুজ্জামান বলেন, তদন্ত করে ওই ভুয়া ডাক্তারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নিহতের লাশটি উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় সাভার মডেল থানায় একটি মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। এছাড়াও অভিযুক্ত ডাক্তারকে গ্রেফতারের জন্য পুলিশ পাঠানো হয়েছে।
বিডি-প্রতিদিন/এস আহমেদ