রেলওয়ে স্টেশনসহ চট্টগ্রামের রেলের সরকারি বাসা, অফিস বিভিন্ন স্থাপনায় লবনাক্ত ও বিষাক্ত পানি ব্যবহার করছে প্রতিনিয়িত। এসব পানি দুষণের উদ্যোগ না নেয়ায় দিন দিন বেড়েই চলেছে সমস্যা। চট্টগ্রাম রেল স্টেশনে প্রতিদিনেই বিভিন্ন ট্রেনের হাজার হাজার যাত্রীরাও এসব লবনাক্ত পানি পান করতে হচ্ছে নিয়মিত। এসব পানি থেকে বিভিন্ন ধরণের রোগে আক্রান্ত হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা।
অন্যদিকে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে নানাবিধভাবে ট্রেন যাত্রী ও দর্শনীয় স্থানে ঘুরতে আসা সাধারণ মানুষদের হয়রানী ও প্রকাশ্যে চাদাঁবাজি করছেন টিকেট কালেক্টররা (টিসি)। ভ্রমনকারিদের হয়রানী ও চাদাঁবাজির কারণে ইতিমধ্যে ইসলামুল হক (টিসি গ্রেড-২) নামের একজন টিসিকে অফিসিয়ালভাবে বুক অফ করা হলেও কর্মকর্তাদের রহস্যজনক কারণে কোন প্রকার তদন্ত কমিটি এবং আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বলে অভিযোগকারির অভিযোগ। তাছাড়া এসব টিসিরা টিকেট কালোবাজারিদের সাথে আতাঁত করে নানাবিধ অপকর্মের সাথে লিপ্ত থাকেন প্রতিনিয়ত। রেলের কর্তাদের কড়া নিরাপত্তার কারণে স্টেশনের ভিতরে অনিয়ম ও টিকেট কালোবাজি করতে না পাড়লেও টিসিসহ অন্যরা স্টেশনের বাইরে সিন্ডিকেট করে প্রতিদিন হাজার হাজার টাকা চাদাঁবাজি করছেন বলে নির্মল কান্তি বিশ্বাসসহ একাধিক যাত্রীর অভিযোগ।
নির্মল কান্তি দাশ নামের একজন ব্যক্তি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বরাবরে লিখিত অভিযোগে বলেন, চট্টগ্রাম রেলষ্টেশনে ভাতিজার পাত্রী দেখা উপলক্ষে নতুন স্টেশন এলাকায় অবস্থান করছি। এসময় রেলের স্টাফ টিসি গ্রেড-২ ইসলামুল হক হঠ্যাৎ এসে ১ হাজার টাকা চাদাঁ দাবি করে। পরে রেলের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারি আত্বীয় পরিচয় দেয়ার পরও তিনি ধমক দিয়ে বললেন রেলেই এ পদ্ধতি চালু করেছে। যেহেতু আপনি পরিচয় দিয়েছেন, কিছু টাকা কম দেন। পরে পাত্র-পাত্রী দেখাতে আসা আত্বীয়-স্বজনদের সামনেই অপমানের সাথে ৪’শ টাকা দিয়ে একটি রশিদ নিলাম। সেটি হলো দোহাজারি-চট্টগ্রাম রুটে চলাচলরত ১১২নং ডাউন ট্রেনের ১২০ টাকা মূল্যের ইফএটি ফরম (নং-৩৩১৫০৬)। তিনি বলেন, অভিযোগের প্রেক্ষিতে সিসিএম দপ্তর উক্ত টিসিকে নামে মাত্র বুক অফ (নং-৫৪.০১.১৫০০.১০৭.১৮.০০২.০৯) করা হয়।
তিনি বলেন, অভিযুক্ত ব্যক্তি টিকেট কালোবাজিতে জড়িত থাকারও অভিযোগ আছে। বর্তমানে কৌশলে উর্ধতন কর্মকর্তা ও শ্রমিক সংগঠনের নেতারা নানাবিধভাবে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে বাঁচানোর জন্য জোড় তদবির করছেন বলে জানা গেছে। এমন ঘটনা ঘটলে ট্রেন যাত্রী ও আমাদের মতো সাধারণ মানুষ প্রতিনিয়িত অসহায় হয়ে পড়বে বলে জানান তিনি। তবে স্টেশনের সুপেয় পানিতে রয়েছে মারাত্মক লবনাক্ত। এ পানিসহ নানাবিধ সমস্যার সংকট থেকে দ্রুত যাত্রীদের মুক্ত না করলে আরো প্রকট আকার ধারণ হবে বলে জানান তিনি।
তবে ঘটনার সতত্য স্বীকার করে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনের ম্যানেজার আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমাদের একজন টিসির সাথে এক ব্যক্তির সমস্যা হয়েছে। এ বিষয়ে অফিসে তলব করা হয়েছে টিসিকে। বাকি কি শাস্তি দেয়া হয়েছে সে বিষয়ে বিস্তারিত জানিনা। তবে স্টেশনে পানির সমস্যা অনেক বেশী। অনেকদিন ধরেই এসব সমস্যা লেগেই আছে। দ্রুত সমাধান হচ্ছে বলেও জানান উর্ধতন কর্মকর্তারা।
পূর্বাঞ্চলের প্রধান মেডিক্যাল অফিসার ডা. ইমতিয়াজ বলেন, রেলের হাসপাতালে পানি সংকটের কারণে রোগীদের বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। তাছাড়া একাধিকবার চিঠি ও মৌখিকভাবে বলেছি। এটি আমাদের জাতীয় সমস্যার মতো তৈরি হচ্ছে। তবে এটি দ্রুত সমাধানের জন্য কাজ চলছে বলে জানা গেছে।
ট্রেন যাত্রী ও রেলওয়ের নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, মারাত্মক পানি সংকটে ভূগছেন রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বাসা, অফিস ভবন ও বিভিন্ন স্থাপনাসহ ৫০ হাজার মানুষ। রয়েছে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে হাজার হাজার ট্রেন যাত্রীও। রেলওয়ের ওয়ার্কশপ-মার্শালিং ইয়ার্ডে পানি সংকটে ট্রেন পরিচর্যা করতে অসুবিধার সৃষ্টির পাশাপাশি রেলওয়ে হাসপাতাল, বর্তমানে রেলের আবাসিক এলাকাগুলোতে পরিবেশিত পানি রক্ষণাবেক্ষনের অভাবে পানি দূষিত করে রাখায় নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর এবং লবনাক্ত পানি সরবরাহ করা হচ্ছে আবাসিকের বাসিন্দাদের মাঝে। এতে অনেকেই বাহির থেকে পানি কিনে খাচ্ছেন। তাছাড়া রেলের পাম্প নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি ভূগর্ভস্থ পানির অভাবে ব্যহত হচ্ছে ওয়ার্কশপ-সহ মার্শালিং ইয়ার্ডের কর্মকান্ড। ওয়াশপিটে প্রয়োজনের সময় পানি না পাওয়ায় নির্ধারিত সময়ে রেক ও ইঞ্জিন সরবরাহে বিলম্ব হওয়ায় নির্ধারিত সময়ে ট্রেন পরিচালনা ব্যাঘাত ঘটছে। নামে মাত্র যেসব পানি পাওয়া যাচ্ছে সেগুলোও লবনাক্ত পানি। পানি সংকট ও অনিয়ম দূর্নীতির প্রতিবাদে শ্রমিক লীগ নেতা সিরাজুল ইসলামের নেতৃত্বে রেলের শ্রমিক সংগঠন বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশও করেছেন সিআরবি এলাকায়। তবে রেলে পানি সংকটের চাহিদার বিপরিতে ঘাটতিকৃত পানি চট্টগ্রাম ওয়াসা হতে সরবরাহ নেয়া বিষয়ে গত ৯ আগস্ট পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান স্বাক্ষরিত একটি চিঠিও রেলের মহাপরিচালক (ডিজি) বরাবরে দেয়া হয়েছে। গত কয়েক মাস ধরে সিআরবি এলাকা সংলগ্ন গোয়াল পাড়া পানির পাম্প নষ্ট থাকায় পূর্বাঞ্চলের রেলওয়ে সদরদফতরের নিয়মিত কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটছে।
এছাড়াও সিআরসি সংলগ্ন রেলওয়ে হাসপাতালের সেবা কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে। রেলের মালিকানাধীন ফয়স’ লেকের পানি দিয়ে পূর্বাঞ্চল রেলের আবাসিক এলাকাগুলোতে পানি সরবরাহ করা হলেও ইজারা গ্রহীতা কনকর্ড গ্রুপ লেকের পানি দূষিত করে রাখায় অনিয়মিতভাবে নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পানি সরবরাহ করা হচ্ছে আবাসিকের বাসিন্দাদের। তাছাড়া পূর্বাঞ্চলের প্রধান বৈদ্যুতিক কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেনের বাংলোতে সাবলেট ভাড়া দিয়ে বিদ্যুৎ ও পানি অপচয় করছে। একইভাবে তার (আনোয়ার হোসেন) বিরুদ্ধে বিদ্যুৎ বিভাগে কোটি টাকার টেন্ডার জালিয়াতির অভিযোগে দুদক ও রেল প্রশাসনের পৃথক দুটি তদন্ত কমিটিও করেছে। এ তদন্ত থেকে রক্ষার জন্য দুদকের সেই কর্মকর্তা তার পরিচিত ও তদন্ত কর্মকর্তারা কিছুই করবেন না বলে রেল অঙ্গণে সবার মুখে মুখে আলোচনা আছে বলেও নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।
বিডি-প্রতিদিন/ সালাহ উদ্দীন