আশুলিয়ায় অপহরণের এক মাসেও পোশাককর্মী সালমা আক্তার মিতু (২৫) ও ছেলে তামিমকে (৪) উদ্ধার করতে পারেনি থানা পুলিশ। এদিকে স্ত্রী-সন্তান হারিয়ে পোশাক শ্রমিক মিজানুর রহমান (২৭) আশুলিয়া থানা গেটে পাগলের মতো সহযোগিতার আশ্বাসে ঘুরছেন।
গত ৯ এপ্রিল আশুলিয়ার নরসিংহপুর একটি পোশাক কারখানায় ইউনিট-৪ বি, লাইন-৬৭, আইডি নং ১৭৬২৫ কর্মস্থলে সকাল ৮টায় প্রবেশ করে আর বাসায় ফিরেনি সালমা। সঙ্গে ওই কারখানার চাইল্ড কেয়ারে ছিল তার শিশু পুত্র তামিম। দুপুরে খাবারের জন্য নরসিংহপুর বুড়িপাড়া এলাকার রুহুল সরকারের ভাড়াকৃত বাসায়ও ফেরেনি তিনি। ঘটনার একদিন পর স্বামী মিজানুর রহমান অনেক খোঁজাখুঁজির পর আশুলিয়া থানায় একটি সাধারণ ডায়রী করেন (জিডি নং-৮৩৪)।
অপহৃত মিতু বরগুনা সদর থানার লেমুয়া এলাকার লাল মিয়া মৃধার মেয়ে। সে তার স্বামী মিজানুর রহমানের সাথে আশুলিয়ার নরসিংহপুর বুড়িপাড়া এলাকার রুহুল সরকারের বাড়িতে ভাড়া থেকে হা-মীম গ্রুপে চাকুরি করতো। স্বামী মিজানুর রহমান শরীয়তপুর জেলার গোসাইরহাট এলাকার আদম আলীর ছেলে। সে আশুলিয়ার ইটখোলা এলাকার ট্রাউজার লাইনস লি. নামে একটি পোশাক কারখানার সুপারভাইজার।
এ ব্যাপারে পোশাক শ্রমিক মিজানুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ২০১১ সালে হা-মীম গ্রুপে চাকুরি করার সুবাদে একই ফ্লোরের অপারেটর মিতুর সাথে তার পরিচয় এবং বিয়ে হয়। ২০১৪ সালে তাদের পুত্র সন্তান তামিমের জন্ম হয়। অত্যন্ত সুখের সংসার ছিল তাদের। হঠাৎ ঘটনার দিন তিনি অফিসে ডিউটি করার সময় দুপুর ২টায় হা-মীম গ্রুপের মিতুর ফ্লোরের কিরণ নামে এক লাইনচীপ মোবাইলে তাকে জানান, মিতু ডিউটিতে দুপুরের খাবারের পর কাজে যোগদান করেনি। তাদের চাইল্ড কেয়ারেও তার শিশুপুত্র নেই। এছাড়া মিতুর মোবাইল নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।
মিতুর বান্ধবী পোশাককর্মী রাশেদাকে জিজ্ঞেস করলে সে কোন কিছুই না জানিয়ে ওই কারখানার ৬৩ নং লাইনের অপারেটর চাকুরি ছেড়ে অন্য কারখানায় চাকুরি নেন। তার রহস্যজনক আচরণে সন্দেহ হয়। এদিকে ঘটনার ৭/৮দিন পর একটি মোবাইল নম্বর থেকে ফোন দিয়ে ১ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। না দিলে স্ত্রী-পুত্র কাউকেই পাওয়া যাবে না বলে হুমকি দেওয়া হয়। তাদের কিডনি বিক্রি করে টাকা আদায় করা হবে বলে জানানো হয়।
তিনি আরো বলেন, থানায় জিডি করা সত্ত্বেও থানা পুলিশ কোন ব্যবস্থাই গ্রহণ করেনি। এদিকে মিতুর খোঁজে তিনি তার শ্বশুর বাড়ি বরগুনা জেলার লেমুয়া গিয়েও কোন সন্ধান পাননি। মিতুর পিতা-মাতাও ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বিভিন্ন স্থানে সন্ধানে নেমেছেন। ঘটনার প্রায় একমাস হলেও এখন পর্যন্ত মিতু ও তার শিশু পুত্র তামিমের কোন সন্ধান না পেয়ে পথে পথে ঘুরছেন মিজান।
বাংলাদেশ সেন্টার ফর ওয়ার্কার সলিডারিটির নির্বাহী পরিচালক কল্পনা আকতার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, কর্মস্থলে সকালে কাজে প্রবেশ করে আর বাসায় ফিরেনি। সঙ্গে ওই কারখানার চাইল্ড কেয়ারে ছিল তার শিশু পুত্র। কারখানার আশে পাশে সিসিটিভি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ দেখে তদন্ত করা উচিত পুলিশের।
আশুলিয়ার থানার এসআই রুহুল আমিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, থানায় সাধারণ ডায়েরী হওয়ার পর সালমার মোবাইল ফোনে কললিষ্ট আনা হয়েছে। তদন্ত করা হচ্ছে, আর মুক্তিপনের বিষয়টি তদন্ত চলছে।
আশুলিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুল আউয়াল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আশুলিয়ার থানার একটি নিখোঁজে সাধারণ ডায়েরী হয়েছে, একমাস ধরে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পুলিশ কাজ করছে। খুব শিগগিরই মা ও সন্তানের সন্ধান পাওয়া যাবে ।
বিডি প্রতিদিন/৯ মে ২০১৮/হিমেল