বরিশালে তৈরি পোশাকের প্রসিদ্ধ স্থান শত বছরের ঐতিহ্য চকবাজার। এর উত্তরদিকে প্রায় ৫০০ গজ দূরে নগরীর প্রাণকেন্দ্র সদর রোডের আধুনিক শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বহুতল শপিং মল 'ফাতেমা সেন্টার'। ঢিল ছোড়া দূরত্বে একই পোশাকের মূল্যে রয়েছে হাজার টাকা তফাৎ।
চকবাজারের হাজার টাকার পোশাকটি ফাতেমা সেন্টারে বিক্রি হচ্ছে আগুন দামে। এছাড়া তৈরি পোশাকে নির্ধারিত মূল্য তালিকা লিখে একদামে বিক্রির প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে নগরীর প্রায় সবগুলো বিপণী বিতান প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে।
প্রতি বছর একই অভিযোগ থাকলেও ঈদ বাজারে ক্রেতার কমতি নেই। হার-জিত যাই হোক না কেন, ঈদে চাই নতুন পোশাক। তাই ৭ থেকে ১০ রমজানের পর থেকেই ঈদের পোশাক বাজারে ছুটতে শুরু করেছে বিভিন্ন শ্রেণি পোশার মানুষ।
বিশেষ করে ১৫ রমজানের পর থেকে পোশাকের বাজারে নেমেছে ক্রেতার ঢল। জুন মাসের শুরুর দিকে সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবীরা বেতন পাওয়ায় প্রিয়জনদের জন্য পোশাক কিনতে উপচে পড়া ভীড় দেখা যাচ্ছে পোশাক বাজারে।
নগরীর চকবাজার, কাঠপট্টি, হেমায়েত উদ্দিন রোড, ফজলুল হক এভিনিউ এবং সদর রোডের বিবির পুকুরপাড় এলাকাতেই মূলত গড়ে উঠেছে তৈরি পোশাক, থান কাপড়, শাড়ি ও জুতা বিক্রির মার্কেট ও শপিং মলগুলো। তাই এই সড়কগুলোতেই জম-জমাট ঈদ বাজার। সকাল ১০টা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত যানজট লেগে থাকে সড়কগুলোতে। ঈদ বাজারে ক্রেতাদের সুবিধার্থে চকবাজার এলাকায় যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ১৫ রমজানের পর থেকে।
চকবাজারে 'তাইতী মৌ পয়েন্ট' নামে তৈরি পোশাক বিক্রি প্রতিষ্ঠানের অন্যতম কর্ণধার চাঁনমিয়া বলেন, নগরীর বিভিন্ন স্থানে অনেক বিপণী বিতান গড়ে উঠলেও এখন পর্যন্ত ক্রেতাদের আস্থা ঐতিহ্যবাহী চকবাজার। আশপাশের জেলা থেকেও স্বচ্ছল পরিবারের লোকজন ঈদ বাজার করতে আসেন বরিশালের চকবাজারে।
চাঁন মিয়া এবারের ঈদ বাজার সম্পর্কে বলেন, ঈদের বাজারে প্রধান আকর্ষণ তরুণ-তরুণীদের পোশাক। গত কয়েক বছর ধরে ভারতীয় টিভি সিরিয়াল কিংবা কোন টিভি নায়িকার নামানুযায়ী নির্দিষ্ট একটি পোশাক ঈদ বাজার মাত করে। এবছরও বরিশালের ঈদ বাজারে মেয়েদের পোশাকের চাহিদার শীর্ষে 'জলি ফ্রক'। ভারতীয় টিভি চ্যানেলের 'ভক্ত গোবিন্দ' সিরিয়ালের নামানুসারে এই পোশাকটির নামকরণ করা হয়েছে।
এরপরেই রয়েছে 'পাংচ ফ্রক'। এটিও ভারতীয় একটি টিভি চ্যানেলের সিরিয়ালের নাম। জলি ফ্রকের দাম সর্বনিম্ন ১১০০ থেকে সর্বোচ্চ ১৮০০ টাকা। পাংচ ফ্রকের দাম সর্বনিম্ন ২৫০০ থেকে সর্বোচ্চ সাড়ে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত।
চকবাজারে ঈদ বাজার করতে আসা নগরীর কাশীপুর এলাকার বাসিন্দা শিক্ষিকা রুমা বেগম বলেন, চকবাজারের চেয়ে একই পোশাক ফাতেমা সেন্টারে এক থেকে দেড় হাজার টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
ফাতেমা সেন্টারের চন্দ্রবিন্দু নামে একটি প্রতিষ্ঠানের একজন বিক্রেতা জানান, তাদের প্রতিষ্ঠানে পাংচ ফ্রকের দাম সর্বনিম্ন ৩ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৩৮ হাজার টাকা পর্যন্ত রয়েছে। ফাতেমা সেন্টারে মেয়েদের পোশাক বিক্রির অপর একটি প্রতিষ্ঠান 'অঙ্গ সাঁজ'।
চকবাজার ও ফাতেমা সেন্টারে একই পোশাকের ভিন্ন দাম প্রসংঙ্গে অঙ্গ সাঁজের ব্যবস্থাপক সজিব বলেন, পোশাক দেখতে এক রকম হলেও এর মধ্যে গুণগত পার্থক্য রয়েছে।
তবে চকবাজারের একাধিক ব্যবসায়ী ভিন্নমত পোষণ করে বলেন, ফাতেমা সেন্টারে দোকানের পজিশন ও ভাড়াসহ আনুষাঙ্গিক ব্যয় চকবাজারে চেয়ে অনেক বেশি হওয়ায় তাদের অনেক বেশি মুনাফা করতে হয়।
নগরীর ফজলুল হক এভিনিউর পোশাক বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান 'উৎসব' এর শাকিল মাহমুদ বলেন, এবার গরমের মধ্যে ঈদ হওয়ায় ছেলেদের পোশাকের ক্ষেত্রে ঢিলে-ঢালা শার্ট এবং বাহারি রংয়ের পাঞ্জাবিকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। বিগত কয়েক বছর ধরে ছেলেদের শার্টের ক্ষেত্রে চীন ও ভারতের তৈরি শার্টের আধিক্য থাকলেও এবছর দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো বাজারে মানসন্মত পোশাক সরবরাহ করেছে। গুণে ও মানে দেশীয় পোশাক ভালো হওয়ায় ছেলেরা দেশীয় পোষাকের দিকে ঝুঁকছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
দোকানিরা জানান, ঈদের বেচাকেনা পুরোদুমে শুরু হয়েছে। এখন থেকে চাঁদ রাত পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলবে বেচাকেনা। ঈদ বাজারের নিরাপত্তায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সজাগ দৃষ্টি থাকায় এখন পর্যন্ত বরিশালের ঈদ বাজারে কোন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেনি।
বরিশাল মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (কোতয়ালী) শাহনাজ পারভীন বলেন, বরিশালের ঈদ বাজারের ক্রেতা-বিক্রেতার নিরাপত্তায় পোশাকধারীর পাশাপাশি সাদা পোশাকে বিপুল সংখ্যক পুলিশ দায়িত্ব পালন করছে। এছাড়া ইভটিজিং রোধে পুলিশের নারী সদস্যরা সাদা পোশাকে টহল দিচ্ছে। কেউ আইনের ব্যতয় ঘটালেই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিডি প্রতিদিন/০৭ জুন ২০১৮/আরাফাত