বাবা মারা গেছেন ৪ বছর বয়সে। দাদা ও নানার বাড়ির সব সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত। অসহায় মা গরু, ছাগল, হাঁস, মুরুগি পালন ও মানুষের বাসায় কাজ করে বড় করেছেন তার দুই সন্তানকে। ছোট থেকেই মায়ের এসব কষ্ট দেখে সংসারের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন রাজশাহী কলেজে অনার্সে পড়ুয়া ছাত্র শাহীন আলম।
রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলা বেলপুকুরিয়া থানার ছত্রগাছা গ্রামের মৃত কামাল হোসেনের ছেলে শাহীন। তৃতীয় শ্রেণি থেকে ক্লাস নাইন পর্যন্ত প্রতিটি ক্লাসে প্রথম হয়েছেন। টাকার অভাবে ভালোভাবে প্রাইভেট পড়ার সুযোগ হয়নি। ক্লাস নাইনে থাকতে স্কুলের ড্রেস না পরে আসায় এক শিক্ষক বলেছিলেন ড্রেস কেনার টাকা নেই তো পড়াশুনা করার কি দরকার? ছোট থেকেই গ্রামে মানুষের জমিতে ধান লাগানো, ধান কাটা, পেঁয়াজ লাগানো, রসুন লাগানোসহ বিভিন্ন কৃষিকাজ করে পরিবার ও পড়াশনা চালিয়েছে শাহীন।
কয়েক বছর থেকে এলাকায় কৃষি জমির মালিকরা কৃষি জমি কেটে পুকুর খনন করায় কাজ কমে গেছে। তাই কাজের অভাবে উপায় না পেয়ে চার বছর থেকে চালাচ্ছেন ভ্যান গাড়ি। ছয় বছর আগে ড্রাগ কোম্পানি দরিদ্র্যতার কারণে শাহীন আলমের পরিবারকে একটি গরুর বাছুর দিয়েছিল। সেই বাছুর পালন করে বড় করে বিক্রি করে ৪০ হাজার টাকায়। পরিবারের জমানো টাকা বলতে এটাই। এর মাঝে কয়েক হাজার টাকা দিয়ে কিনে ফেলেন একটি ভ্যান গাড়ি। বানেশ্বর, পুঠিয়া, শিবপুরসহ পুঠিয়া উপজেলার বিভিন্নস্থানে নিজেই ভাড়ায় চালান। শত বাধা পেরিয়ে এসএসসি পরীক্ষায় ৪.৪৪ এবং এইচএসসি শেষ করে ৪.৪০ রেজাল্ট নিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তুতি নিতে থাকে শাহীন। কিন্তু পরিবার আর নিজের সঙ্গে পেরে উঠলেন না। কোচিং কর্তৃপক্ষের কাছে পরিবারের করুণ বিষয়ে জানালে কোচিং কর্তৃপক্ষ কিছু টাকা ছাড় দেয়। ফলে কিছু দিন কোচিং করার সৌভাগ্য হয়। কিন্তু পরিবার চালাতে অসুস্থ মায়ের ওষুধ কিনতে কোচিং ছাড়তে বাধ্য হতে হন। বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ না পেলেও দেশসেরা রাজশাহী কলেজে সুযোগ হয় তার। ভূগোলে পড়ার ইচ্ছে থাকলেও ব্যবহারিক ক্লাস বেশি থাকায় ভেবেচিন্তে ভর্তি হন ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতিতে। অনার্স প্রথম বর্ষ থেকে ভোরে ঘুম থেকে উঠে ভ্যান নিয়ে বেরিয়ে পড়ে শাহীন। হাটের দিনগুলোতে ভাড়া বেশি হয় তার।
শাহীনের হাইস্কুলের শিক্ষক ছত্রগাছা হাইস্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক সাইফুল ইসলাম জানালেন, ‘ছেলেটির বাবা ছোটকালেই মারা গেছে। সে আমার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী ছিল। ছোট থেকেই খুব মেধাবী ছিল। প্রতিটি ক্লাসে সে প্রথম থাকতো। ছোটবেলায় দেখতাম মানুষের জমিতে কাজ করে পড়াশোনা ও পরিবার চালাতে। এখন মা ও ছোট ভাইসহ পরিবারের তিনজনের সব কিছু তার কর্মেই চলছে।’
রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক হবিবুর রহমান মেধাবী শাহীনকে আর্থিক সহায়তা ও বৃত্তির ব্যবস্থা করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। সমাজের বিত্তবানদের সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
বিডি-প্রতিদিন/ সালাহ উদ্দিন