র্যাব-১১ এর এক অভিযানে গ্রেফতার হয়েছে জেএমবির দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান তরিকুল ইসলাম ওরফে তারেক ওরফে বাপ্পী ওরফে সাকিব ওরফে নাজমুস সাকিব (৩০)। শুক্রবার (২৯ মার্চ) রাত সাড়ে ১১ টায় নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানাধীন ১নং লঞ্চঘাট এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাকে গ্রেফতার করে র্যাব।
এ সময় তার কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ উগ্রবাদী বই, উগ্রবাদী লিফলেট, প্রশিক্ষণ ম্যানুয়াল ও ১টি চাপাতি উদ্ধার করা হয়। শনিবার দুপুরে সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজীস্থ র্যাব-১১ এর সদর দপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-১১ এর অধিনায়ক (সিও) লেঃ কর্ণেল কাজী শামশের উদ্দিন সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
এসময়া অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থত ছিলেন র্যাব-১১ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ আলেপ উদ্দিন (পিপিএম), অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মশিউর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ জসিম উদ্দিন।
র্যাব-১১ এর অধিনায়ক জানায়, তরিকুল ইসলাম ওরফে তারেক ওরফে বাপ্পী ওরফে সাকিব ওরফে নাজমুস সাকিব ২০০৪ সালে বাগেরহাট জেলার কচুয়া থানার মাধবকাঠি আহমাদিয়া ফাজিল মাদ্রাসা হতে দাখিল, ২০০৬ সালে খুলনা সিদ্দিকীয়া কামিল মাদ্রাসা হতে আলিম, ঢাকার মদিনাতুল উলুম বালক কামিল মাদ্রাসা হতে ২০১০ সালে ফাজিল এবং ২০১৩ সালে কামিল পাশ করে। পাশাপাশি সে ২০১১ সালে আহসান উল্লাহ ইউনির্ভাসিটি সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি থেকে বিবিএ পাশ করে এবং ২০১৩ সালে এমবিএ-তে অধ্যায়নরত থাকাকালীন সময়ে জসিম উদ্দিন রাহমানির বছিলা মসজিদে বয়ান শুনতে যেত।
জসিম উদ্দিন রহমানির বয়ানের মাধ্যমে তার মাঝে উগ্রবাদী চেতনা জাগ্রত হয় বলে উল্লেখ করেন র্যাব অধিনায়ক। ঐ সময় একই মসজিদে জেএমবি নেতা আব্দুল্লাহ আল মামুনের সাথে তার পরিচয় হয়। আব্দুল্লাহ আল মামুন তৎকালিন জেএমবির দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান ছিল। তার মাধ্যমে ২০১৩ সালে সাকিব জেএমবিতে যোগদান করে। ২০১৬ সালে বাগেরহাট জেলা পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে আব্দুল্লাহ আল মামুন নিহত হলে তার স্থলে সাকিব দায়িত্ব প্রাপ্ত হয়।
সাকিব দায়িত্ব পাওয়ার পর খুলনা, বাগেরহাট, বরগুনা, পিরোজপুর, যশোরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় জেএমবির কর্মী সংখ্যা বাড়ানোর তৎপরতা অব্যহত রাখে। ইতিপূর্বে গ্রেফতারকৃত মাহবুবুর রহমান উকিল, কাইয়ুম হাওলাদার, কাউছার বিন হালিম, হামদান বিন ফিরোজ, মামদুদুর রহমান মিশু, কামরুল, ইউনুছসহ বিভিন্ন পর্যায়ের প্রায় ৫০ জন সদস্য সাকিবের মাধ্যমে জেএমবিতে যোগদেয় বলে উল্লেখ করেন সিও। যাদের অধিকাংশ সদস্যকে বিভিন্ন সময়ে আইন শৃংখলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেফতার করা হয়।
তরিকুল ইসলাম ওরফে তারেক ওরফে বাপ্পী ওরফে সাকিব ওরফে নাজমুস সাকিব প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে র্যাবকে জানায়, প্রথম পর্যায়ে সে জেএমবির সামরিক শাখার সদস্য ছিল এবং জামালপুরের যমুনা নদীর চর, আব্দুল্লাহ আল মামুনের বাসার ছাদসহ বিভিন্ন জায়গায় জেএমবির অস্ত্র প্রশিক্ষণ নিয়েছিল। ২০১৭ সালে আইন শৃংখলা বাহিনীর ব্যাপক তৎপরতা শুরু হলে সাকিব ঢাকায় এসে আত্মগোপন করে। তার দায়িত্বপূর্ণ এলাকা দক্ষিণাঞ্চলের পাশাপাশি ঢাকা ও এর আশেপাশের জেলাগুলোতে জেএমবির দাওয়াতি কাজে মনোনিবেশ করে সম্পূর্ণ নতুন ভাবে সদস্য সংগ্রহ করে সংগঠনকে পূর্ণগঠনের চেষ্টা করে। জিজ্ঞাসাবাদে সাকিব আরো জানায় যে, সে জেএমবিকে পূর্ণগঠিত করার জন্য অস্ত্র সংগ্রহের প্রচেষ্টা অব্যহত রেখেছে এবং জামালপুর জেলার যমুনা নদীর চরে জেএমবির নতুন ১টি প্রশিক্ষণ শিবির খোলার কথা ছিল।
তার বিরুদ্ধে বাগেরহাটে কচুয়া থানায় ১টি, ঢাকার যাত্রাবাড়ী থানায় ১টি, নরসিংদী সদর থানায় ১টি, নারায়ণগঞ্জ জেলার বিভিন্ন থানায় ৫টি মামলা রয়েছে। গ্রেফতারকৃত আসামীর বিরুদ্ধে আইনানুগ কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানায় র্যাব-১১ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ আলেপ উদ্দিন (পিপিএম)।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল