বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগে চিকিৎসক সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। প্রতিদিন সার্জারি বিভাগে প্রচুর রোগীর চাপ থাকলেও চিকিৎসক সংকটের কারণে সঠিকভাবে সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এতে বিপাকে পড়ছেন রোগী ও স্বজনরা।
দীর্ঘদিন চাহিদা দেওয়ার পরও চিকিৎসক নিয়োগ না দেওয়ায় ঝুঁকির মধ্যে আছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসকরা। একই অবস্থা মেডিসিন বিভাগেও।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, সার্জারি বিভাগে ইনডোর মেডিকেল অফিসারের ২০টি পদ রয়েছে। ওই পদের বিপরীতে মাত্র তিনজন দায়িত্ব পালন করছেন। রেজিস্ট্রারের পদও শূন্য। মেডিকেল কলেজের তিন সহকারী অধ্যাপককে দিয়ে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করানো হচ্ছে। শিক্ষানবীশ চিকিৎসকরা সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন না করলে সংকট আরও ভয়াবহ হতো।
অন্যদিকে মেডিসিন ওয়ার্ডের অবস্থাও একই রকম। তবে মেডিসিন ওয়ার্ডে সার্জারি (অস্ত্রোপচার) করতে হয় না তাই সেখানে সমস্যা চোখে পড়ে না। কিন্তু সার্জারি বিভাগে প্রতিদিন জখম ও কাটাছেঁড়া রোগীর দীর্ঘ লাইন থাকে। তাদের অনেকরই অস্ত্রোপচার করতে হয়। সড়ক দুর্ঘটনাসহ রোগীর চাপ সার্জারি বিভাগে বেশি। চিকিৎসক নিয়োগ দেয়ার জন্য একাধিকবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে চিঠি দেওয়া হলেও কার্যকর সারা পাওয়া যায়নি।
সার্জারি বিভাগের সিনিয়র চিকিৎসক নজিবুল হক অভিযোগ করেন, গত ৬ মাস ধরে হাসপাতালের সার্জারি বিভাগে চিকিৎসক সংকট চলছে। বিষয়টি পরিচালককে জানিয়েও কোন ফল পাওয়া যাচ্ছে না। বর্তমানে চার ইউনিটে ইনডোর মেডিকেল অফিসার তিনজন আছেন। তাদের মধ্যে দুইজন অন্যত্র চলে যাচ্ছেন। মাত্র একজন মেডিকেল অফিসার চার ইউনিট সামাল দেবে কিভাবে? মেডিকেল কলেজের শিক্ষকদের মূল দায়িত্ব হচ্ছে কলেজে ছাত্র পড়ানো এবং হাসপাতলে ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা নেওয়া। সাথে হাসপাতালের চিকিৎসা সেবায় সহযোগিতা দেওয়া। হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের চারটি ইউনিটে চারজন-পাঁচজন করে মেডিকেল অফিসার থাকার কথা। বর্তমানে মিড লেভেলে চিকিৎসক নেই। ইনডোর মেডিকেল অফিসারের সব পদ শূন্য রয়েছে। ৩জন সহকারী অধ্যাপক আছেন মেডিকেল কলেজে। তারা অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেন। মারামারি, সড়ক দুর্ঘটনা কিংবা নানা কারণে সার্জারি বিভাগের রোগীর চাপ থাকে। এসব রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। রোগীর চাপ অনুযায়ী সেবা দিতে ব্যর্থ হলে নানা সমস্যায় পড়তে হয়।
সার্জারি বিভাগের এক চিকিৎসক বলেন, দুপুর আড়াইটার পর সার্জারি বিভাগের ৪ ইউনিট দেখার কথা আউটডোর মেডিকেল অফিসারদের। কিন্তু সার্জারি ওয়ার্ডের চার ইউনিটে আউটডোর মেডিকেল অফিসার আছেন একজন। একার পক্ষে ৪ ইউনিটের রোগীর চাপ সামাল দেওয়া সম্ভব নয়। ছয় মাস ধরে শূন্য পদ পূরণে বারবার পরিচালকে জানানো হয়েছে। কিন্ত তিনি কোন উদ্যোগ নিচ্ছেন না।
শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. বাকির হোসেন বলেন, চিকিৎসকের শূন্য পদ পূরণের জন্য ঢাকায় একাধিকবার চিঠি দেওয়া হয়েছে। যার প্রেক্ষিতে ১৫জন চিকিৎসক দেওয়া হয়েছে। তবে সর্জারি বিভাগটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেখানে চার ইউনিটে রেজিষ্ট্রার নেই, মেডিকেল অফিসারও নেই। ওই বিভাগ বন্ধ হওয়ার অবস্থা। নতুন চিকিৎসক দিলেই হবে না। অভিজ্ঞ চিকিৎসক না পেলে সমস্যা কাটিয়ে ওঠা কঠিন হবে। হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডের অবস্থাও একই রকম স্বীকার করে পরিচালক বলেন, সার্জারি এবং মেডিসিন বিভাগ বাদে অন্য বিভাগগুলোর অবস্থা ভালো। দ্রুত সার্জারি বিভাগের সংকট দূর করতে অভ্যন্তরীণভাবেও চিকিৎসক সমন্বয় করার উদ্যোগ নেয়ার কথা বলেন তিনি।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল