২০ জানুয়ারি, ২০২০ ১৩:২৫
নতুন আইন কার্যকরের পর আড়াই মাস ধরে মামলা বন্ধ

হাতের ইশারা আর বাঁশি বাজিয়ে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানোর চেষ্টা ট্রাফিক পুলিশের

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল

হাতের ইশারা আর বাঁশি বাজিয়ে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানোর চেষ্টা ট্রাফিক পুলিশের

প্রতীকী ছবি

নতুন সড়ক নিরাপত্তা আইন করা হয়েছে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানোর জন্য। কিন্তু বরিশালে হয়েছে উল্টোটা। গত পহেলা নভেম্বর থেকে সরকার নতুন সড়ক নিরাপত্তা আইন কার্যকরের ঘোষণা দেওয়ার পর থেকে বরিশালের সড়কে বিশৃঙ্খলা আরও বেড়েছে। কারন নতুন আইনে মামলা দিতে পারছেনা বা দিচ্ছে না ট্রাফিক বিভাগ। 

মামলা কিংবা আর্থিক দণ্ড না দেওয়ায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বরিশালের অবৈধ যান ও চালকরা। তবে এখনও নতুন আইন সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃস্টির জন্য প্রচারনা চালানো হচ্ছে এবং খুব শীঘ্রই নতুন সড়ক নিরাপত্তা আইনে অবৈধ যান ও চালকের বিরুদ্ধে মামলাসহ আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের উপ-কমিশনার মো. খাইরুল আলম। 

মেট্রোপলিটনের ট্রাফিক বিভাগ সূত্র জানায়, গত বছরের পহেলা জানুয়ারী থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ১০ মাসে অবৈধ যান ও চালকদের বিরুদ্ধে ৩১ হাজার ৩৫০টি মামলা করেছে ট্রাফিক বিভাগ। এই মামলার বিপরীতে জরিমানা আদায় হয়েছে ২ কোটি ২৩ লাখ টাকা। গত বছরের প্রথম ১০ মাসে ট্রাফিক আইনে গড়ে মামলা হয়েছে ৩ হাজার ১৩৫টি এবং জরিমানা আদায় হয়েছে ২২ লাখ ৩০ হাজার টাকা। 

কিন্তু গত বছরের পহেলা নভেম্বর প্রথম এবং পরে ৭ নভেম্বর নতুন সড়ক নিরাপত্তা আইন কার্যকরের সরকাড়ী ঘোষণার পর পাল্টে যায় দৃশ্যপট। আগে পুরনো ফরমে মামলা হলেও নতুন আইনে ওই ফরমে মামলা দেওয়া যাচ্ছিল না। এ কারণে মামলাবিহীন কেটে যায় নভেম্বর মাস। নতুন আইনানুযায়ী ফরম সরবরাহ করা হলেও ট্রাফিক সার্জেন্ট ও পরিদর্শকরা অবৈধ যান ও চালকদের বিরুদ্ধে মামলা দিচ্ছেন না। তাদের চোখের সামনে দিয়ে অবৈধ যান ও চালকরা অহরহ চলাচল করলেও নির্বাক তাকিয়ে দেখা ছাড়া কিছুই করছেন না তারা। 

নাম না প্রকাশের শর্তে বিএমপি’র একজন ট্রাফিক পরিদর্শক বলেন, তাদের চোখের সামনে দিয়ে হাজারো অবৈধ অটোরিক্সা চলছে। জেলায় অনুমোদন পাওয়া শত শত থ্রি হুইলার নগরীর মধ্যে ঢুকে যানজট সৃস্টি করছে। অনেক চালককের লাইসেন্স নেই। শিশু-কিশোররাও থ্রি হুইলার এবং হালকা যান চালাচ্ছে। অনেক যানবাহনের ফিটনেসও নেই। আবার আগে মোটরসাইকেলের রেজিস্ট্রেশন এবং হেলমেট পরিধানে কড়াকড়ি থাকলেও এখন সেসব নিয়মের বালাই নেই। কোন যান যদি ট্রাফিক পরিদর্শককেও ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় তবে তার বিরুদ্ধে ট্রাফিক আইনে ব্যবস্থা নিতে পারছেনা ট্রাফিক বিভাগ। সড়কে দাঁড়িয়ে, হাত নেড়ে এবং বাাঁশি বাজিয়ে শৃঙ্খলা রক্ষার প্রানান্তকর চেস্টা চালাচ্ছেন তারা। 

একজন ট্রাফিক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, নতুন সড়ক নিরাপত্তা আইনে হেলমেট পরিধান না করলে আর্থিক দণ্ড সর্বোচ্চ ১০ হাজার, লাইসেন্স না থাকলে সর্বোচ্চ ২৫ হাজার, ফিটনেস না থাকলে সর্বোচ্চ ২০ হাজার এবং যানটি অবৈধ হলে এর মালিককে সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা জরিমানা করার বিধান আছে। আগের আইনে অবৈধ যান আটক করে আদালতের মাধ্যমে স্ক্যাপ হিসেবে বিক্রির বিধান ছিলো। 

নতুন আইনে আর্থিক দন্ড বেশী হওয়ায় মাঠ পর্যায়ের ট্রাফিক কর্মকর্তারা ধামেলার ভয়ে মামলা দিতে কিছুটা ভয় পাচ্ছেন। এ কারনে তারা মামলা দিয়ে সড়কে শৃংখলা ফেরানোর চেয়ে যানবাহন মালিক ও চালককে সচেতন করার দিতে বেশী মনযোগী হয়েছেন। 

বিএমপি’র ট্রাফিক পরিদর্শক বিদ্যুত চন্দ্র দে জানান, নতুন আইন বাস্তবায়নের পর গত আড়াই মাসে কয়েকটি মামলা হয়েছে। চালকরা বড় ধরনের অপরাধ করলে তাকে থানায় সোপর্দ করে প্রচলতি আইনে মামলা করা হচ্ছে। নতুন আইনে মামলার ফরম প্রস্তুত হয়েছে। শীঘ্রই বরিশালে নতুন সড়ক নিরাপত্তা আইন বাস্তবায়ন করার কথা বলেন তিনি।

বিএমপি’র ট্রাফিক বিভাগের উপ-কমিশনার মো. খাইরুল আলম জানান, নতুন আইনে মামলা হচ্ছে। তবে আগের থেকে মামলার সংখ্যা কম। ট্রাফিক বিভাগ এখনও নতুন সড়ক নিরাপত্তা আইন সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃস্টির জন্য প্রচার-প্রচারনা চালাচ্ছে। শীঘ্রই কঠোরভাবে এই আইন বাস্তবায়ন করার কথা বলেন উপ-কমিশনার মো. খাইরুল আলম।

 

বিডি-প্রতিদিন/ সিফাত আব্দুল্লাহ 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর