বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরু হওয়ার পর থেকে নাগরিক সচেতনতায় মাঠে নেমেছে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ। প্রথমে হ্যান্ড স্যানিটাইজার, সাবান ও মাস্ক বিতরণ করে সংগঠনের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা। পরবর্তীতে লকডাউন শুরু হওয়ার পর থেকে কর্মহীন, ছিন্নমূল, অসহায় মানুষের খাদ্য সহায়তার হাত বাড়িয়ে সংগঠনের দিয়েছে নেতাকর্মীরা। এর পাশাপাশি ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস, ফ্রি সবজি দোকান খুলেছেন তারা।
যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ ও সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন নিখিলের নির্দেশে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর শুরু থেকে তৎপর ছিল যুবলীগের নেতাকর্মী। আজ পর্যন্ত এই কার্যক্রম চলমান রেখেছে তারা। এদিকে বসে নেই জেলা-মহানগর ও উপজেলার নেতারাও। তারা যার যার সাধ্য অনুযায়ী অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন।
যুবলীগ সূত্র জানায়, করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার পর থেকেই ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের নেতাকমীরা মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, এন্টিসেপটিক সাবান বিতরণ শুরু করে। এরপর লকডাউন শুরু হওয়ার পর থেকে কর্মহীন মানুষগুলোর পাশে খাদ্য সহায়তা নিয়ে দাঁড়ায়। একইভাবে ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের নেতাকর্মীরা করোনা প্রতিরোধ সামগ্রী বিতরণের পাশাপাশি খাদ্যসামগ্রী বিতরণ অব্যাহত রেখেছেন। খুলেছেন ফ্রি সবজি দোকান। সবজি দোকানে যে যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু বিনামূল্যে নিয়ে যাচ্ছেন।
কেন্দ্রীয় যুবলীগের উদ্যোগে দুটি ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস শুরু করা হয়েছে। করোনার প্রভাব যতদিন থাকবে ততদিন এই সার্ভিস দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।
যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মো. মাইনুল হোসেন খান নিখিল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া রোধে সবকিছু বন্ধ থাকায় নিম্নআয়ের মানুষেরা সবচেয়ে বেশি কষ্টে পড়েছেন। দেশে লাখ লাখ মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। তারা এখন পরিবার-পরিজন নিয়ে দুই বেলার খাবার জোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছেন। আমরা অসহায় এইসব মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য প্রতিটি সাংগঠনিক ইউনিটকে আহ্বান জানিয়েছি।
যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মো. মাইনুল হোসেন খান নিখিল নিজেও হতদরিদ্র, দিনমজুরদের খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করে যাচ্ছেন। এ পর্যন্ত প্রায় ৫ হাজার পরিবারকে নিজস্ব তহবিল থেকে সহায়তা করেছেন।
ঢাকা মহানগর এর রোগীদের যাতায়াতের সংকট বিবেচনা করে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ দুটি এ্যাম্বুলেন্স ঢাকা মহানগরে ২৪ ঘন্টা ফ্রি সার্ভিস চালু করেছে। সেবা নিতে সার্বক্ষণিক (০১৭১২০৪১০০৮ ও ০১৭২০৩৮২৫৩৭) মোবাইল নাম্বারে যোগাযোগ করলেই রোগীর বাড়ি চলে যাচ্ছে ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স।
উত্তর যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জাকির হোসেন খাঁন বাবুল ও সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন কর্মহীন প্রায় ৪০০০ পরিবারের মাঝে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য বিতরণ করেছেন। এদিকে দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ভারপ্রাপ্ত মাইন উদ্দিন রানা, সাধারণ সম্পাদক ভারপ্রাপ্ত রেজাউল করিম রেজার নেতৃত্বে রাজধানীর সবুজবাগ, গেন্ডারিয়া ও কদমতলী থানার বিভিন্ন ওয়ার্ডের অসহায় ও দরিদ্র পরিবারের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে।
যুবলীগের দক্ষিণের সহ-সভাপতি মোরসালিন আহমেদ, জাফর আহমেদ, সাংগঠনিক সম্পাদক মাকসুদুর রহমান মাকসুদ, গাজী সরোয়ার বাবুসহ অনেকেই ব্যক্তিগত তহবিল থেকেও কর্মহীন, ছিন্নমূল অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন।
দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ভারপ্রাপ্ত মাইন উদ্দিন রানা ও সাধারণ সম্পাদক ভারপ্রাপ্ত রেজাউল করিম রেজা জানান, কেন্দ্রের নির্দেশে আমরা সাধ্যমতো গরীব-অসহায় দুঃখী কর্মহীন মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি। অনেকেই আছেন যারা লোকলজ্জার ভয়ে খাবার চাইতে পারেন না। আমরা তাদের বাড়ি বাড়ি খাবার পৌঁছে দিচ্ছি।
রেজা আরও জানান, সংগঠনের পাশাপাশি আমি ব্যক্তিগতভাবেও রাতের আঁধারে মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর খোঁজখবর নিচ্ছি। সাধ্যমতো খাবার পৌঁছে দিচ্ছি। এছাড়া জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বাড়িতে বাড়িতে উপহার সামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছি।
সাংগঠনিক সম্পাদক মাকসুদুর রহমান মাকসুদ বলেন, রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা বিত্তবানদের অসহায় মানুষের পাশে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা সেই কাজটি করছি।
আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক গাজী সরোয়ার হোসেন বাবু বলেন, লকডাউন শুরু থেকেই আমার নিজ এলাকায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে খাদ্যসামগ্রী দিচ্ছি। যতদিন প্রয়োজন তদদিন সাধ্যমতো পাশে থাকার চেষ্টা করবো।
উত্তর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন বলেন, করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার পর থেকে আমরা প্রথমে সচেতনতামূলক কাজ যেমন মাস্ক, হ্যান্ডস্যানিটাইজার, প্রচারপত্র বিলি করেছি। পরে লকডাউন শুরু হওয়ার পর থেকে মানুষের মাঝে খাবার বিতরণ শুরু করেছি। সংগঠন হিসেবে প্রতিটি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে নেতাকর্মীরা মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি। আমি ব্যক্তিগতভাবেও প্রায় সাড়ে চার হাজার পরিবারকে খাবার পৌঁছে দিছি। এ কাজ অব্যাহত থাকবে। মানুষ মানুষের জন্য।
ঢাকা মহানগর উত্তরের ১৪ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগ নেতা আলমগীর হোসেন ফ্রি সবজি দোকান খুলেছেন। এতে বিভিন্ন প্রকার শাক-সবজি রেখেছেন। তিনটি ভ্যানে করে ওই দোকানের পিছনে একটা সাইনবোর্ড লেখা আছে, আমরা আমাদের সাধ্যমতো রেখেছি, আপনারা নিদিষ্ট পরিমাণ নিয়ে যান।
রাজধানীর বাইরেও দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় বাড়ি বাড়ি খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছেন যুবলীগ নেতারা। নারায়ণগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জ উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র মতিউর রহমান মতি নিজেই অটোরিকশা চালিয়ে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছেন হতদরিদ্র মানুষের বাড়ি বাড়ি। শ্রীপুর পৌরসভার মাওনা এলাকায় কর্মহীন ও অসহায় মানুষের ঘরে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিয়েছেন যুবলীগ নেতা আজিজুর রহমান জন।
গাজীপুর যুবলীগের আহ্বায়ক কামরুল আহসান রাসেল সরকার আরও ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছেন। তিনি রাতে আঁধারে বাড়ি বাড়ি গিয়ে দরজায় খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছেন।
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা