গর্ভধারিণী মায়ের আতঙ্ক তারই নাড়ি ছেড়া ধন। বিশ্ব মা দিবসে সব সন্তানরা যখন মায়ের ত্যাগ, নিঃস্বার্থ ভালোবাসাকে বিশেষভাবে স্মরণ করে, ঠিক এই সময়ে এক অভাগিনী মা তার তার বখে যাওয়া সন্তানের নির্যাতন থেকে বাঁচার আকুতি জানিয়েছেন।
তিনি কোনো উপায় না পেয়ে দ্বারস্থ হয়েছেন থানা-পুলিশের কাছে। তবে ছেলে গ্রেফতার না হওয়ায় মায়ের মুহূর্ত কাটছে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায়। ঘটনাটি রাজধানীর গ্রিন রোডের সরকারি আবাসিক এলাকার।
জানা গেছে, সরকারি কর্মকর্তা মেয়ের নামে বরাদ্ধকৃত একটি সরকারি ডরমেটরীতে ছেলে খান মিল্লাত হোসেনকে (২৫) নিয়ে থাকেন নুরুন্নাহার রুনু (৫১)। তার গ্রামের বাড়ি বাগেরহাটে। স্বামী কয়েক বছর আগে মারা যায়। মেয়ে লেখাপড়া শিখে ভালো চাকরি করলে দু’সন্তানের মধ্যে ছেলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেই উচ্ছন্নে যায়। জড়িয়ে পড়ে মাদক সেবন-ব্যবসাসহ নানা অপরাধে। মাঝেমাঝেই মাদকের টাকার জন্য হামলে পড়ে অভাগিনী মায়ের উপর। ভাংচুর করে ঘরের সব দামি আসবাবপত্র।
গত ৭ মে মধ্য রাতে মা রুনুকে মাদকের টাকার জন্য মেরে রক্তাক্ত করে মিল্লাত। আর সহ্য না করতে পেরে ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তার পরামর্শে পরদিন দুপুরে কলাবাগান থানায় ছেলের নামে মামলা করেন মা। মামলা নং ০১/৪৬।
বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন অভাগিনী মা। একপর্যায়ে নিজেকে সামলে নিয়ে বলেন,গত ৭ মে মধ্যরাতে মাদক কেনার টাকার জন্য প্রথমে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে, এরপর আমাকে কাঠের একটি লাঠি দিয়ে মারধর করে। আমি মাথায় এবং কানে আঘাত পাই। আমি মেঝেতে পড়ে গেলে আমাকে লাথি মেরে ঘর থেকে জিনিসপত্র ও নগদ টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়। ভবিষ্যতে মাদকের টাকা না পেলে সে আমাকে আবার জানে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে গেছে।’
তিনি আরও বলেন, মিল্লাত অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করে। এরপর থেকেই সে বখে যায়। পাড়ার বিভিন্ন খারাপ ছেলেদের সঙ্গে মিশে মাদক সেবন করে। সে মাদকের টাকার জন্য প্রায়েই ঘরে ভাংচুর ও আমাকে মারধর করে। তাকে ভালো করার জন্য বহুবার চেষ্টা করা হয়েছে। রিহ্যাবে নেয়া হয়েছে। কিন্তু তাকে ভালো করা যায়নি। ২০১৭ সালে ওর বাবা মারা যাবার পর থেকে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে।
ওই রাতের বর্ণনা দিতে গিয়ে অভাগিনী মা বলছিলেন, আমি ভেবেছিলাম ওই রাতে আমাকে খুনই করে ফেলবে। প্রায় দুই ঘণ্টা আমাকে বেদম পেটাতে থাকে। একপর্যায়ে রাত পৌনে একটার দিকে বাথরুমে যাবার কথা বলে দরজা খুলে দৌড়ে নিচে যাই। নিচ তলার ফ্ল্যাটের লোকজন পুলিশকে খবর দেয়।
ওই মা বলছিলেন, মৃত্যুর আগেই আমি আজরাইলকে দেখেছি। এরপর থেকে আমি এক মুহূর্তও ঘুমাতে পারিনি। মনে হয় এই বুঝি জানালার গ্রিল কেটে বাসায় ঢুকে আমার খাটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে মিল্লাত। যেদিন মামলা করেছি, সেদিন সন্ধ্যায় এসেই হুমিকি দিয়ে গেছে, আামকে আবার এসে খুন করবে।’
এ বিষয়ে কলাবাগান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পরিতোষ চন্দ্র বলেন, ওই ছেলেকে গ্রেফতার করতে আমরা একাধিকবার অভিযান চালিয়েছি। আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন