চলচ্চিত্র মানুষের সুস্থ বিনোদনের অন্যতম প্রধান মাধ্যম। চলচ্চিত্র, নাটকের চরিত্রগুলোকে মানুষ অনুসরণ করে এবং বিশেষত: তরুণরা এর দ্বারা প্রভাবিত হয়। নির্মাতা, শিল্পী, কলা-কূশলীদেরকে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশ্লিষ্ট ধারা, বিধি মেনে চলচ্চিত্র নির্মাণ ও প্রচার করা অত্যন্ত জরুরি। বিএফডিসি ও চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডসহ সংশ্লিষ্টদের বিষয়টি আমলে নিয়ে কাজ করতে হবে। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন লঙ্ঘণ করে নির্মিত ও বির্তকিত চলচ্চিত্র, নাটক ও কলা-কূশলীদেরকে জাতীয় পুরস্কার দেওয়া অনুচিৎ।
বুধবার বিকেলে এফডিসিতে “চলচ্চিত্রে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নে করণীয়” শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এ মন্তব্য করেন। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন, চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি, চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি এবং দি ইউনিয়নের সহায়তায় উক্ত সেমিনার আয়োজন করে মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থা (মানস)।
সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: মকবুল হোসেন, পিএএ। সাম্প্রতিক সময়ে জনপ্রিয়তা পাওয়া ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলোতে প্রচারিত নাটক, সিনেমা, ওয়েব সিরিজগুলোতে আইন লঙ্ঘণ করে প্রতিনিয়ত ধূমপানের দৃশ্য প্রচার করা হচ্ছে- অভিযোগ করা হলে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। তিনি আরো বলেন, তামাকের পেছনে শক্তিশালী প্রতিপক্ষ রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে লড়তে সকলকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।
বিশেষ অতিথি’র বক্তব্যে জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল’র সমন্বয়কারী (অতিরিক্ত সচিব) হোসেন আলী খোন্দকার বলেন, তামাক/ধূমপানের কোন ভালো দিক নেই। সুতরাং, জাতির স্বার্থে আইন ও বিধি মেনে চলচ্চিত্রে ধূমপানের দৃশ্য বন্ধ করা অত্যন্ত জরুরি। এতে রাষ্ট্রীয় আইন প্রতিপালনের পাশপাশি প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুত ‘তামাকমুক্ত বাংলাদেশ’ বাস্তবায়ন সহজ হবে।
সভাপতির বক্তব্যে মানস সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্বা প্রফেসর ড. অরূপরতন চৌধুরী বলেন, মানুষের আচরণগত পরিবর্তনে চলচ্চিত্র গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। চলচ্চিত্রের চরিত্রের দ্বারা নেতিবাচক দৃশ্য প্রচার (বিশেষ করে ধূমপানের দৃশ্য) পরিহার করা উচিৎ। কেননা, ধূমপানের মাধ্যমেই অন্যতম সামাজিক সমস্যা ‘মাদকাসক্তি’ শুরু হয়। মাদকাসক্তদের মধ্যে ৯৮% ধূমপায়ী। চলচ্চিত্রের মাধ্যমে আগামী প্রজন্ম যেন তামাক ও অন্যান্য নেশায় আসক্ত না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা জরুরী। ওয়েব সিরিজের প্রতি তরুণদের আগ্রহ বেশি বিধায় এগুলো আইনের আওতায় আনতে হবে। তরুণদের নেশার জগতে ধাবিত করার মহোৎসব থামাতে হবে।
চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি’র সভাপতি চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, এমনভাবে চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে হবে যেন মানুষ ক্ষতিকর নেশায় আসক্ত না হয়। এর ক্ষতির দিক বেশি প্রচার করতে হবে। তামাক নিয়ন্ত্রণ করা গেলে মাদক নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।
দি ইউনিয়নের কারিগরী পরামর্শক এড. সৈয়দ মাহবুবুল আলম গবেষণার তথ্য তুলে ধরে বলেন, চলচ্চিত্রে ধূমপানের দৃশ্য যুবদের উপর নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে। চলচ্চিত্রে ধূমপানের দৃশ্য প্রদর্শনের জন্য তামাক কোম্পানির দ্বারা বিপুল অর্থ ব্যয় করার উদাহরণ রয়েছে। যা পরোক্ষভাবে তামাক কোম্পানির এক ধরনের প্রচারণা কৌশল। ২০০৪ ও ২০০৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত হিন্দি চলচ্চিত্রের ৮৯% চলচ্চিত্রে তামাকের ব্যবহার দেখানো হয়েছে। ৬৭% চলচ্চিত্রে প্রধান চরিত্রকে ধূমপান করতে দেখা গেছে। ৪১% চলচ্চিত্রে তামাকের ব্র্যান্ড দেখানো হয়েছে। আমাদের দেশেও পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, ২০১৭ সালে দীপংকর দীপন পরিচালিত ‘ঢাকা অ্যাটাক’ চলচ্চিত্র চলচ্চিত্র নির্মানে তামাক কোম্পানি সহায়তা করে। এছাড়াও অসংখ্য চলচ্চিত্র, নাটক, ওয়েব সিরজ তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনটি লঙ্ঘণের ফলে বিতর্কিত।
মানস এর প্রকল্প কর্মকর্তা মো. আবু রায়হান এর সঞ্চালনায় সভায় আরো বক্তব্য রাখেন বিএফডিসি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অতি: সচিব) নুজহাত ইয়াসমীন, গণযোগাযোগ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. জসীম উদ্দিন, বাংলাদেশ ফিল্ম সেন্সর বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান মুহ. সাইফুল্লাহ, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি’র সভাপতি সোহানুর রহমান সোহান, অভিনেত্রী নিপুন আক্তার, প্রত্যাশা’র সাধারণ সম্পাদক হেলাল আহমেদ প্রমূখ।
বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন, এইড ফাউন্ডেশন, ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট, গ্রামবাংলা উন্নয়ন কমিটি, চলচ্চিত্র পরিচালক, প্রযোজক, শিল্পী সমিতি’র প্রতিনিধিবৃন্দ সভায় উপস্থিত ছিলেন।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন