রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে ঘিরে প্রতিনিয়তই শব্দ দূষণের মাত্রা বাড়ছে। শব্দ ও বায়ু দূষণের কারণে প্রকৃতি ও মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। প্রকৃতি ও মানুষকে বাঁচাতে পরিবেশ অধিদপ্তর কাজ করলেও এই দুইটি দূষণ রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না।
পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, মানুষ সাধারণত ৩০ থেকে ৪০ ডেসিবেল শব্দে কথা বলে। ৭০ ডেসিবেল পর্যন্ত শব্দ মানুষের কান গ্রহণ করতে পারে। ৮০ ডেসিবেলের বেশি গেলেই ক্ষতি শুরু হয়। বর্তমানে রসিক নির্বাচনকে ঘিরে বিভিন্ন প্রার্থীর প্রচারণার শব্দ ৮০ ডেসিবল ছাড়িয়ে গেছে। তবে পরিবেশ অধিদপ্তর বলছে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হবে।
জানা গেছে, বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-এর ক্ষমতাবলে শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা-২০০৬ প্রণয়ন করা হয়। বিধিমালার আওতায় নীরব, আবাসিক, মিশ্র, বাণিজ্যিক ও শিল্প এলাকা চিহ্নিত করে শব্দের মানমাত্রা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। আইন অমান্য করলে প্রথমবার অপরাধের জন্য এক মাস কারাদণ্ড বা অনধিক পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয়দণ্ড এবং পরবর্তী অপরাধের জন্য ছয় মাস কারাদণ্ড বা অনধিক ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু এই আইন বাস্তবায়নের কোনো পদক্ষেপ নেই।
এদিকে রংপুরে বায়ুদূষণের উৎসগুলা সম্পর্কে জানা গেছে, জীবাশ্ম জ্বালানি, শিল্পকারখানা, দহন, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, ঘন ঘন রাস্তা খনন, ড্রেনের ময়লা রাস্তার পাশে উঠিয়ে রাখা, যানবাহন থেকে নির্গত বিভিন্ন ধরনের পার্টিকুলেট ম্যাটার, ধূলিকণা, সীসা, কার্বন, কার্বন মনোক্সাইড, সালফার অক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইডসমূহ এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড প্রতিনিয়তই দূষিত করছে বায়ু। চিকিৎসকদের মতে, বার্য়দূষণের ফলে নাক মুখ জ্বালাপোড়া করা, মাথা ঝিম ঝিম করা, মাথা ব্যথা, বমি বমি ভাবসহ নানান রোগ দেহে বাসা বাধতে পারে।
জানা গেছে, রংপুর সিটি করপোরেশন ৩৩ ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত। এর মধ্যে পুরনো ১৫টি ওয়ার্ডে বর্জ্য অপসারণের ব্যবস্থা রয়েছে। এই ১৫টি ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকায় প্রতিদিন ১০০ টন বর্জ্য উৎপন্ন হয়। এর মধ্যে ৬০ থেকে ৭০ টন বর্জ্য অপসারণ করা সম্ভব হয়। বাকি ৩০ থেকে ৩৫ মেটিক টন বর্জ্য অপসারণ করা সম্ভব হয় না। ফলে এসব বর্জ্য পচে-গলে দুর্গন্ধ বাতাসে মিশে মারাত্মক বাযূ দুষণ করছে। এসব বর্জ্য হোটেল ও রেস্টুরেন্টের আবর্জনা, শিল্প কারখানা থেকে উৎপাদিত আবর্জনা, রান্নাঘরের পরিত্যক্ত আবর্জনা, হাটবাজারের পচনশীল শাকসবজি, কসাইখানার রক্ত অন্যতম উৎস। যেখানে-সেখানে ময়লা-আবর্জনা উন্মুক্তভাবে ফেলে রাখায় বাতাস ও মাটি দূষিত হচ্ছে। অপরিকল্পিতভাবে বর্জ্যের ফলে আশপাশে দুর্গন্ধের পাশাপাশি দেখা যায় মশা, মাছি ও পোকামাকড়ের মাত্রাতিরিক্ত উপদ্রব। বর্ষা মৌসুমে বর্জ্যগুলোর অবস্থা হয় আরও ভয়াবহ। এছাড়া নগরীতে প্রতিদিন আড়াই টনের ওপর ক্লিনিক্যাল বর্জ্য উৎপন্ন হয়। এসব বর্জ্যের সামান্যই অপসরারণ করা হয়। ক্লিনিক্যাল বর্জ্য মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে জনজীবনে।
প্লাস্টিক ও পলিথিনে দূষণ নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে কথা হলেও এর দূষণ রোধ করা সম্ভব হয়নি। প্রতিনিয়ত রংপুরসহ আশপাশ এলাকায় লাখ লাখ পলিথিনের ব্যাগ ব্যবহার হচ্ছে। মাঝে মধ্যে অভিযান চললে প্লাস্টিক ও পলিথিনের ব্যবসা বন্ধ করা যায়নি। পলিথিনে ব্যবহার বন্ধ করতে হলে পাট, কাগজ, কাপড়ের ব্যাগ ব্যবহারে ক্রেতা ও ভোক্তাদের মাঝে সচেনতা সৃষ্টি করতে হবে বলে মনে করছেন সচেতন মহল। নদীতে বর্ষা মৌসুমে সময়মতো বর্জ্য অপসারণ না করায় বর্জ্যসমূহে দ্রুত পচন প্রক্রিয়া শুরু হয়। রংপুর সিটি করপোরেশনের ৬টি নদ-নদীসহ জেলায় ৫০টির বেশি নদীতে পচা বর্জ্য থেকে তরল, দুর্গন্ধযুক্ত রস তৈরি হয়ে পানি বাহিত রোগ বাড়াচ্ছে। এছাড়া ইটভাটা, অবাধে সরকারি-বেসরকারি গাছ কেটে পরিবেশের ক্ষতি করা হচ্ছে।
রংপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক সৈয়দ ফরহাদ হোসেন বলেন, শব্দ ও বায়ু দূষণের বিষয়ে জনগণকে সচেতন করা হচ্ছে। এছাড়া শব্দ দূষণের বিষয়টিও গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে।
বিডি প্রতিদিন/এমআই