সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কল্যাণমূলক সংগঠন অফিসার্স ক্লাব ঢাকার নির্বাহী কমিটির নির্বাচন আগামীকাল শুক্রবার (২৩ ফেব্রুয়ারি)।
১৯৬৭ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে ব্যাপক সুনাম ও সুখ্যাতি কুড়িয়েছে ক্লাবটি। এই ক্লাবের সদস্যদের অনেকেই বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের ক্যাডার কর্মকর্তা এবং সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে কর্মরত। সবমিলিয়ে ক্লাবের সদস্য সংখ্যা প্রায় সাত হাজারের বেশি। তাদের মধ্যে অবসরপ্রাপ্তরাও আছেন। নিয়মিত সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে সংগঠনটি সর্বদা এগিয়ে।
এবার অফিসার্স ক্লাব ঢাকার নির্বাহী কমিটির নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৯ জন, সাধারণ সম্পাদক পদে দুইজন, যুগ্ম সম্পাদক পদে ছয়জন, কোষাধ্যক্ষ পদে দুই জন, সদস্য পদে ৪১ জন সদস্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আর এই নির্বাচনকে ঘিরে ক্লাব প্রাঙ্গণে উত্সবমুখর পরিবেশে চলছে নির্বাচনী আমেজ ও প্রচারণা।
প্রার্থীরা ক্লাবের সদস্যদের কাছে তাদের নিজেদের জন্য ভোট ও দোয়া চাইছেন।
নির্বাহী কমিটির নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক পদে দুইজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। জনপ্রিয়তা, প্রচারণার কারণে সদস্যদের মধ্যে বিশেষভাবে আলোচনায় আছেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব ও বর্তমানে ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মেজবাহ উদ্দিন। ক্লাবকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন তিনি।
সংশ্লিষ্টরা জানান, মেজবাহ উদ্দিন ক্লাবের দায়িত্ব গ্রহণের সময় ক্লাবের দেনা ছিল চার কোটি টাকা। তার কর্মপরিকল্পনায় ঢাকার এই ক্লাবটি আজ সম্পূর্ণ দায়-দেনা মুক্ত হয়েছে। শুধু তাই নয়, এখন এই ক্লাবের রয়েছে সাত কোটির টাকার নিজস্ব তহবিল।
জানা গেছে, অফিসার্স ক্লাব, ঢাকা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে পৌর কর পরিশোধ হয়নি। তবে মেজবাহ উদ্দিনের ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় পৌর কর অনেকাংশে হ্রাস করে ক্লাবটি পৌরকর পরিশোধ করার ব্যবস্থা নিয়েছে। এমনকি নিজস্ব তহবিল থাকায় নির্ভার এগিয়ে চলেছে সংগঠনটির সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড।
করোনাকালে জনসেবার প্রচেষ্টায় মেজবাহ উদ্দিন তার নিজ উদ্যোগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহযোগিতায় ক্লাব প্রাঙ্গণে করোনা টেস্টবুথ স্থাপন করেছিলেন। ক্লাবের সদস্য ছাড়াও সাত হাজারের বেশি সরকারি কর্মকর্তা উপকৃত হয়েছিলেন। বৈশ্বিক মহামারির কঠিন সময়ে ৯৬ জন চিকিৎসকের সহযোগিতায় টেলিমেডিসিনের ব্যবস্থা করেছিলেন তিনি। এ ছাড়া ছিল করোনার টিকা গ্রহণের ব্যবস্থা।
বর্তমান সাধারণ সম্পাদকের একক প্রচেষ্টা ও আন্তরিকতায় অফিসার্স ক্লাব ঢাকা করোনা মোকাবিলার মতো স্বাস্থসেবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পেরেছে। তার এই অনন্য ভূমিকার জন্য রোটারি ইন্টারন্যাশনাল মেজবাহ উদ্দিনকে কভিড নাইনটিন হিরো অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত করে।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, অফিসার্স ক্লাব ঢাকায় ১২ তলা ভবনের দুটি দৃষ্টিনন্দন কমপ্লেক্স নির্মিত হচ্ছে। মেজবাহ উদ্দিন দায়িত্বভার গ্রহণের আগে নতুন ক্লাব ভবনের ফ্লোর এরিয়া ছিল সাড়ে তিন লাখ বর্গফুট এবং এর প্রাক্কলিত মূল্য প্রায় ২২৮ কোটি টাকা। পরবর্তিতে তিনি দায়িত্বভার গ্রহণের পর ফ্লোর এরিয়া বেড়ে দাঁড়ায় সাড়ে পাঁচ লক্ষ বর্গফুট। এর প্রাক্কলিত মূল্য ৪৫০ কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্টরা আরো জানান, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব থাকাকালীন মেজবাহ উদ্দিন তিন কোটি টাকা বরাদ্দে একটি টেনিস মাঠের উন্নয়ন করেন। ঢাকা জেলা পরিষদের সহযোগিতায় অর্ধকোটি টাকা ব্যয়ে ক্লাব ভবনের চার তলায় তিনি নির্মাণ করেন ক্যামেলিয়া গ্রিনহাউজ। গণপূর্ত অধিদপ্তরের সহযোগিতায় ক্লাব ভবনের নিচ তলায় প্রতিবন্ধী ও বয়স্ক সদস্যদের র্যাম্প নির্মাণ করেন তিনি। ভবন নির্মাণের সময় যাতে খেলাধুলায় ব্যাঘাত না ঘটে, সেজন্য তিনি অস্থায়ী শেড নির্মাণ, সুইমিং পুল, ব্যাডমিন্টন, টেবিল টেনিস এবং জিমনেশিয়ান ইত্যাদি ব্যবস্থা সচল রেখেছিলেন।
মেজবাহ উদ্দিন বলেন, করোনাপরবর্তী সময়ে ক্লাবের আর্থিক অনটন প্রকট আকার ধারণ করেছিল। এমন প্রেক্ষাপটে দেশের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর স্পন্সর সংগ্রহের চেষ্টা করেছি। ফলে ক্লাব লাভবান হয়েছে। ফিরে এসেছে স্বচ্ছলতা।
নানা সেবামূলক কাজে নিজেকে সংযুক্ত রাখায় মেজবাজ উদ্দিনের জনপ্রিয়তাও অনেক। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গত নির্বাচনে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি, তা বাস্তবায়নে সবসময় সচেষ্ট থেকেছি। আর্থিক অনিয়ম দূর করতে সবার সহযোগিতায় একটি জবাবদিহিমূলক ক্লাব প্রতিষ্ঠায় আন্তরিকভাবে চেষ্টা করেছি।
আগামী নির্বাচনে বিজয়ী হলে পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে মেজবাহ উদ্দিন বলেন, নতুন ভবনের একটি ফ্লোরে সম্পূর্ণভাবে পরিপূর্ণ স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র স্থাপন করব। একাধিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বসার ব্যবস্থাসহ নামমাত্র মূল্যে বিভিন্ন পরীক্ষার জন্য ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ফিজিওথেরাপি সেন্টার স্থাপন করব।
মেজবাহ উদ্দিন জানান, আবার নির্বাচিত হলে তিনি নতুন ভবনে পুরুষ, নারী ও বাচ্চাদের জন্য তিনটি আলাদা সুইমিংপুল, চারটি ব্যাডমিন্টন কোর্ট, চারটি টেবিল টেনিস কোর্ট, বিলিয়ার্ড কক্ষ, দুটি ইয়োগা কক্ষ, তাস ও দাবা কক্ষ, ১২শ আসনবিশিষ্ট অডিটোরিয়াম, আলাদা সেমিনার কক্ষ স্থাপন করবেন। তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য মুক্তিযোদ্ধা কর্নার, সিনিয়র সিটিজেনদের জন্য ক্যাফেটেরিয়া ও লাউঞ্জ, সিনেপ্লেক্স পুরুষ ও নারীদের জন্য বিউটি পার্লার, উইমেন্স কর্নার, কিডস জোন, গ্রোসারি শপ, মেডিসিন কর্নার ও সেলুন ও লন্ড্রি স্থাপন করবেন।
সদস্য ও অতিথিদের গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য আন্ডারগ্রাউন্ডে ৪৫০টি গাড়ি পার্কিং ব্যবস্থা রাখতে চান মেজবাহ উদ্দিন। নির্মল চিত্ত বিনোদন ও স্মার্ট ক্লাব প্রবর্তনে তিনি সবার সহযোগিতা কামনা করেছেন।
সাধারণ সম্পাদক পদে মেজবাহ উদ্দিন ছাড়াও কোষাধ্যক্ষ পদে যুগ্ম সচিব মাসুম পাটোয়ারি এবং যুগ্ম সম্পাদক পদে রথিন্দ্রনাথ দত্ত বিশেষ আলোচনায় আছেন।
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ