বুধবার, ৩ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

‘গরিবের সংসদ সদস্য’ ওহাবকে দেওয়া প্লট কেড়ে নিল চউক

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও হাটহাজারী আসনের দুই বারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য এম আবদুল ওহাবের জন্য বরাদ্দ দেওয়া প্লট কেড়ে নিল চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক)। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে দেওয়া এ প্লট ফিরে পেতে দ্বারে দ্বারে ঘুরছে ওহাবের পরিবার।

প্রয়াত এম আবদুল ওহাব মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রামের অন্যতম সংগঠক ছিলেন। ছিলেন ১৯৭০ এবং ১৯৭৩ সালে হাটহাজারী আসন থেকে নির্বাচিত জাতীয় সংসদ সদস্য। তিনি দায়িত্ব পালন করেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষসহ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে। নির্লোভ ও সৎ হওয়ার কারণে প্রয়াত এ সংসদ সদস্য চট্টগ্রামে ‘গরিবের সংসদ সদস্য’ হিসেবেই অধিক পরিচিত ছিলেন।

এম আবদুল ওহাবের প্লট বরাদ্দ বাতিল করার কথা শুনে অবাক হয়েছেন চউকে সদ্য যোগদান করা চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ। তিনি বলেন, ‘চউক একজন মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক সংসদ সদস্যের প্লট বরাদ্দ বাতিল করেছে তা শুনে অবাক লাগছে। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’

জানা যায়, সাবেক সংসদ সদস্য এম আবদুল ওহাব সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকলেও চট্টগ্রাম নগরীর কোথাও নিজের কোনো প্লট বা ফ্ল্যাট ছিল না । তাই ২০১১ সালের শুরুতে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে একটি প্লট বা ফ্ল্যাটের জন্য আবেদন করেন তিনি। এ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে একই বছরের ২০ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয় চউককে। এ নির্দেশনা পেয়ে ২০১১ সালের ২২ সেপ্টেম্বর এম আবদুল ওহাবের অনুকূলে ৪ কাঠার একটি প্লট বরাদ্দ দেয়। যা চউকের ৩৯৬তম সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়। বরাদ্দপত্র পাওয়ার পর কয়েক দফায় লভ্যাংশসহ চউকের অনুকূলে ১১ লাখ ৩৪ হাজার টাকা জমা করেন। এরই মধ্যে এম আবদুল ওহাব মারা যান। পরে তার স্ত্রী-সন্তানরা ওই প্লট বরাদ্দ পাওয়ার জন্য ২২ মার্চ ২০১৩ সালের চউক চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন করেন। এ আবেদন করার পর ২০১৪ সালের ৩ জুন প্লট বরাদ্দের বিষয়ে একটি চিঠি দেয় এম আবদুল ওহাবের পরিবারের কাছে। ওই চিঠিতে চউকের পক্ষ থেকে বলা হয়, সরকারি নীতিমালা পরিপন্থীভাবে ২৭টি বরাদ্দ দেওয়া প্লট বাতিল করা হয়েছে। যার মধ্যে এম আবদুল ওহাবের প্লটও রয়েছে। যদিও পরে অন্যদের প্লট ফিরিয়ে দিলেও ওহাব পরিবারকে বিমুখ করে চউক।

এম আবদুল ওহাবের বড় ছেলে জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘প্লট বরাদ্দ বাতিল করার পর আমার পরিবারের পক্ষ থেকে তৎকালীন চেয়ারম্যান আবদুচ ছালামসহ চউকের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তারা এ বিষয়ে কোনো উত্তর না দিয়ে উল্টো রুঢ় আচরণ করেছেন।’

তিনি বলেন, ‘আমার বাবা (ওহাব) হাটহাজারী আসন থেকে দুইবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য। ছিলেন চউক চেয়ারম্যান এবং চট্টগ্রাম জেলা বোর্ড কাউন্সির। তিনি ওই সময় চাইলে অসংখ্য প্লট ও ফ্ল্যাট করতে পারতেন। কিন্তু তিনি এতটাই সৎ ছিলেন, চট্টগ্রাম শহরে এক বর্গফুট জমি নেননি ক্ষমতার অপব্যবহার করে। শেষ বয়সে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে চউক অনন্যা আবাসিক এলাকায় ৪ কাঠা জমি বরাদ্দ পান। কিন্তু সেটাই কেড়ে নিল চউক। এর প্রতিকার চাই।

সর্বশেষ খবর