বুধবার, ৩০ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

ভেনামি চিংড়িতে সম্ভাবনা

সামছুজ্জামান শাহীন, খুলনা

ভেনামি চিংড়িতে সম্ভাবনা

খুলনায় পাইকগাছা লোনাপানি কেন্দ্রের চারটি পুকুরে সাড়ে সাত লাখ ভেনামি চিংড়ির পোনা অবমুক্ত করা হয় গত ৩১ মার্চ। ৮৬ দিনের ব্যবধানে (২৬ জুন) প্রতিটি চিংড়ির গড় ওজন হয়েছে প্রায় ১৯ গ্রাম। ১১০ দিন পর এই চিংড়ি সংগ্রহ করা হলে প্রতিটির গড় ওজন ২৫ থেকে ২৮ গ্রাম পর্যন্ত হবে। যা স্বাভাবিক গলদা ও বাগদার উৎপাদনের প্রায় তিনগুণ। বাংলাদেশে পরীক্ষামূলক ভেনামি চাষে জড়িত মৎস্য কর্মকর্তারা এ তথ্য জানিয়েছেন। জানা যায়, দীর্ঘদিন ‘নিষিদ্ধ’ থাকার পর অবশেষে উচ্চফলনশীল জাতের ভেনামি চিংড়ি পরীক্ষামূলক চাষ শুরু হয়েছে। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সুশীলন ও এমইউ সি ফুডস যৌথ উদ্যোগে পাইকগাছায় এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। বাংলাদেশ মৎস্য অধিদফতর ও বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই) অধীনে পরীক্ষামূলক ভেনামি চিংড়ি চাষ অনুমোদন করা হয়েছে। বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট এস হুমায়ুন কবির জানান, ২০০৫ সাল থেকে ভেনামি চাষ ও রপ্তানির দাবি জানিয়েছেন রপ্তানিকারকরা। কিন্তু হাইব্রিড ভেনামি চাষে বাগদা ও গলদার চাষে ক্ষতি, মড়ক হতে পারে ও পরিবেশে ক্ষতির আশঙ্কায় অনুমতি দেওয়া হয়নি।

পরে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে সরকার পরীক্ষামূলকভাবে বিদেশি এই চিংড়ি চাষের অনুমতি দেয়। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে থাইল্যান্ড থেকে পোনা আনতে কিছুটা দেরি হয়েছে। চলতি বছরে এই জাতের চিংড়ির পরীক্ষামূলক চাষ শুরু হয়।

পরীক্ষামূলক ভেনামি চাষে পরামর্শক, মৎস্য পরিদর্শন ও মাননিয়ন্ত্রণ খুলনার সাবেক উপ-পরিচালক প্রফুল্ল কুমার সরকার জানান, যে চারটি পুকুরে ভেনামি চাষ হচ্ছে তা এ চিংড়ি চাষে আদর্শ (স্কয়ার মাপের) নয়। তার ওপর পানির গভীরতা ছিল তুলনামূলক কম (৪-৫ ফুট) এবং দীর্ঘ খরায় পানিতে অধিক তাপমাত্রা ৩৪-৩৫ ডিগ্রি ছিল। সাধারণত ৩২ ডিগ্রির বেশি তাপমাত্রা হলে ভেনামি চিংড়ি খাদ্য গ্রহণ বন্ধ করে দেয়। তবে এ প্রতিকূলতা কাটিয়ে ৮৬তম দিনে চিংড়ির গড় ওজন হয়েছে ১৯-২০ গ্রাম। আলাদাভাবে কোনোটির ওজন ৩০ গ্রাম পর্যন্ত হয়েছে। যা এই জাতের চিংড়ি চাষের সম্ভাবনা বাড়াচ্ছে।

জানা যায়, সাড়ে তিন মাসের মধ্যে ভেনামি চিংড়ি পাওয়া গেলে বছরে কমপক্ষে তিনবার এই চিংড়ি চাষ করা যাবে। যেখানে একই পুকুরে বছরে একবারের বেশি বাগদা বা গলদা চিংড়ি চাষ করা যায় না। ফলে স্বাভাবিকভাবে ভেনামি চাষে উৎপাদন হবে তিনগুণ। এতে উৎপাদন খরচ কমবে ও চাষি অধিক লাভবান হবে। একই সঙ্গে বিশ্ববাজারে কম মূল্যে চিংড়ি সরবরাহ করে বাজার দখলে রাখা যাবে।

মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, ১১০ দিনে সাড়ে ৭ লাখ পোনা থেকে প্রায় ১৬ মেট্রিক টন চিংড়ি উৎপাদিত হবে, যার বাজার মূল্য প্রায় ৬৫-৭০ লাখ টাকা। পোনা আমদানি, খাদ্য ও শ্রমিকসহ উৎপাদনে খরচ হবে ৪০ লাখ টাকা। ফলে খরচ বাদে ২০-২৫ লাখ টাকা লাভ হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

এদিকে পরীক্ষামূলক চাষে প্রাথমিক সাফল্য পাওয়ায় দক্ষিণাঞ্চলে জোনভিত্তিক ভেনামির উৎপাদনের দাবি জানিয়েছেন রপ্তানিকারকরা। তাদের মতে, এতে নির্দিষ্ট একটি এলাকায় ভেনামি চাষের প্রভাব, পরবর্তী ধাপে উৎপাদন ও পরিবেশের ক্ষতি সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর