বৃহস্পতিবার, ২০ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

বাসযোগ্য শহর গড়তে ঢাকামুখী মানুষের স্রোত কমাতে হবে

গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাসযোগ্য শহর গড়তে ঢাকামুখী মানুষের স্রোত কমাতে হবে

রাজধানীর ব্যস্ততম বাংলামোটর সড়কের একপাশ জুড়ে গতকাল ছিল তীব্র যানজট -বাংলাদেশ প্রতিদিন

রাজধানীকে বাসযোগ্য শহর গড়তে হলে ঢাকামুখী মানুষের স্রোত কমাতে হবে। মানুষের এই স্রোত কমাতে ঢাকার পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোর সঙ্গে মেট্রোরেল ও দ্রুতগামী রেল, সড়ক ও নৌপথ চালুর কথা বলা হয়েছে। এসব জেলায় স্বাস্থ্য, শিক্ষা, যোগাযোগব্যবস্থার উন্নতিসহ সব সুযোগ-সুবিধা তৈরির কথা হয়েছে। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এসব উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে ঢাকামুখী মানুষের স্রোত কমবে। গতকাল রাজধানীর তেজগাঁওয়ে হোটেল হলিডে ইনে নাগরিক টেলিভিশনের উদ্যোগে ‘বাসযোগ্য ঢাকা : কতদূর?’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন। নাগরিক টিভির হেড অব নিউজ দীপ আজাদের সঞ্চালনায় গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান মিঞা, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. শামসুল হক, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি ফজলে রেজা সুমন, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশের সভাপতি নুরুল হুদা, ড্যাপ পরিচালক আশরাফুল ইসলাম, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও স্থপতি ইকবাল হাবিব। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ‘একটি শহরকে বাসযোগ্য করতে হলে আগে জনসংখ্যার পরিকল্পনা করতে হবে। ওই শহরে কী পরিমাণ জনসংখ্যা আছে, ভবিষ্যতে কী পরিমাণ জনসংখ্যা হবে এটার সম্মক ধারণা থাকতে হবে। এই মানুষগুলোকে কী ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে সেটার পরিকল্পনা থাকতে হবে।

 আমরা বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) প্রণয়ন করেছি। এই পরিকল্পনায় নাগরিকের সব সুযোগ-সুবিধা রাখা হয়েছে।’

তিনি বলেন, মানুষ এখন ঢাকামুখী। ঢাকা শহরে আয়তনের তুলনায় জনঘনত্ব অনেক বেশি। ঢাকামুখী মানুষের স্রোত কমাতে প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে শহরের সব সুবিধা গ্রামে পৌঁছে দেওয়া হবে। তাহলে মানুষের ঢাকামুখী স্রোত কমবে।

স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, ‘ড্যাপে অনেকগুলো সুবিধার কথা বলা হয়েছে। অথচ দু-একটা বিষয় নিয়ে বেশি আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। শতভাগের মধ্যে দুই ভাগ সমস্যা থাকতেই পারে। আর বাকি ৯৮ ভাগ তো ভালো। এটা নিয়ে আলোচনা করেন। আমরা ড্যাপ গেজেট হওয়ার আগেও বলেছি, যুক্তিসংগত কোনো সমস্যা থাকলে অবশ্যই সমাধান করা হবে। এখনো বলছি, তিন মাস বা ছয় মাস অন্তর মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে সমস্যাগুলো সংশোধন করা হবে।’

এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম বলেন, ‘বিশ্বের অন্যান্য উন্নত দেশ যেভাবে তাদের শহরকে নিয়ে আগামীর কথা ভেবে পরিকল্পনা করছে, আমাদেরও তেমন আগামীর প্রজন্মের কথা ভেবে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা করতে হবে। যে দেশগুলো তাদের শহরের উন্নয়নে ফলপ্রসূ পরিকল্পনা করেছে, প্রয়োজনে নলেজ শেয়ার করে নিতে হবে তাদের কাছ থেকে।’

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান মিঞা বলেন, সুন্দর শহর গড়ার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে রাজউক। নগর পরিকল্পানা বাস্তবায়নে সবার আগে প্রয়োজন ঢাকায় আসা মানুষের স্রোত কমিয়ে আনা। ঢাকা ছাড়া অন্যান্য স্থানে শিক্ষা, চিকিৎসা, যোগাযোগব্যবস্থার আরও উন্নতি ঘটাতে পারলে ঢাকার ওপর চাপ কমবে। তখন নগর পরিকল্পনাকে আরও ভালোভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে।

তিনি বলেন, ভবনের প্ল্যান দেয় রাজউক, সে ভবন নির্মাণ করেন ইঞ্জিনিয়াররা। রাজউকের প্ল্যানবিহীন যেসব ভবন হয়েছে, সেটার জন্য রাজউক যতটুকু দায়ী ততটুকু দায়ী ইঞ্জিনিয়াররাও।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. শামসুল হক বলেন, ‘যে কোনো সিটির পরিকল্পনা এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে মেট্রোরেল খুবই গুরুত্ব বহন করে। উচ্চগতির ট্রেনকে গুরুত্ব দিলে দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ কাজে এসে নিজ বাড়িতে ফিরে যাবে। যখন এক ঘণ্টায় একটা জেলা থেকে রাজধানীতে এসে অফিস করে চলে যাওয়ার সুযোগ থাকবে তখন রাজধানীকেন্দ্রিক পরিকল্পনা, ড্যাপ সবকিছুর সুন্দর বাস্তবায়ন হবে। উচ্চগতির ট্রেনজাতীয় এমন উদ্যোগ আমাদের জন্য খুবই জরুরি। রাজধানীর পরিকল্পনায় এবং তা বাস্তবায়নে রাজউকের অনেক বড় ভূমিকা আছে। কাজগুলো তাদের সঠিকভাবে করতে হবে। তবে তা শুধু ভূমিকেন্দ্রিক উন্নয়ন নিয়ে নয়, সার্বিক দিকেই উন্নয়ন হতে হবে।’

ড্যাপ পরিচালক আশরাফুল ইসলাম বলেন, ড্যাপের নতুন শহরের পরিকল্পনা যেমন রয়েছে, তেমনি পুরনো শহরকেও যেন সুন্দরভাবে ঢেলে সাজানো যায় তার সঠিক পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ড্যাপ বাস্তবায়ন হলে সার্বিক দিক থেকে সবাই উপকৃত হবে। ড্যাপে ট্রানজিট ওরিয়েন্ট ডেভেলপমেন্ট সম্পর্কিত পরিকল্পনাকে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, যার মাধ্যমে সার্বিক পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটবে। ফ্লোর এরিয়ার রেশিও নিয়ে যে কথা বলা হচ্ছে, সেখানে প্রশস্ত রাস্তা বাস্তবায়নকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর