সিসার বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত বাংলাদেশের সাড়ে ৩ কোটি শিশু। লিড অ্যাসিড ব্যাটারি রিসাইক্লিং, টারমারিক ও রং কারখানা এবং প্রয়োজনীয় দ্রব্য পেনসিল, কালি, খেলনা বা গহনাসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যে ব্যবহৃত সিসা থেকে ছড়াচ্ছে এ বিষক্রিয়া। গতকাল রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে আয়োজিত এক সেমিনারে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।
সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান, বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি শেলডন ইয়েট প্রমুখ। গবেষণা বলছে, বড়দের তুলনায় শিশুদের শরীরে সিসার প্রভাব বেশি। শিশুদের রক্তে সিসা মিশে গিয়ে সারা জীবনের জন্য স্নায়বিক, মানসিক ও শারীরিক প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়তে হচ্ছে। মস্তিষ্ক আক্রান্ত হচ্ছে, স্মরণশক্তি কমছে, অনেক ক্ষেত্রে কোমায় চলে যাচ্ছে শিশুরা।
সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের চারটি জেলার শিশুদের রক্তে সিসার উপস্থিতি এবং তার মধ্যে ৬৫ শতাংশের রক্তে সিসার পরিমাণ যুক্তরাষ্ট্রের সিডিসির নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে বেশি। ইউনিসেফের উদ্যোগে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআর, আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র (আইসিডিডিআরবি) সম্প্রতি এ গবেষণা পরিচালনা করে। আইইডিসিআরের গবেষক নওরোজ আফরিন গবেষণার তথ্য তুলে ধরে বলেন, টাঙ্গাইল, খুলনা, সিলেট, পটুয়াখালী এ চার জেলায় পরীক্ষা করা হয়েছে। এ চার জেলার পরীক্ষিত ৯৮০ শিশুর সবারই রক্তে সিসার উপস্থিতি মিলেছে। এর মধ্যে ৬৫ শতাংশ শিশুরই রক্তে সিসার মাত্রা যুক্তরাষ্ট্রের সিডিসি নির্ধারিত মাত্রা থেকে ৩ দশমিক ৫ মাইক্রো গ্রাম বেশি। এর মধ্যে ২৪ মাস থেকে ৪৮ মাস বয়সী শিশুদের শতভাগের শরীরেই সিসার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। আইসিডিডিআরবির করা গবেষণার তথ্য বলছে, ঢাকার ৫০০ শিশুর রক্ত পরীক্ষায় সবার শরীরেই সিসার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। গবেষকরা বলছেন, ছোটবেলায় সিসার প্রভাব বুদ্ধিমত্তা কমায়, মনোযোগের ঘাটতি তৈরি করে, লেখাপড়ায় দুর্বল করে, যা ভবিষ্যতে অনেক আগ্রাসী করে তোলে।
