বৃহস্পতিবার, ৩০ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

বাগেরহাটে চুরির অপবাদ দিয়ে যুবককে নির্যাতন, ভিডিও ভাইরাল

বাগেরহাট প্রতিনিধি

বাগেরহাটের রামপালে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক চুরির অপবাদ দিয়ে শেখ আবদুল্লাহ (২৫) নামের এক যুবককে আটকে রেখে অমানুষিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় মামলা দায়ের হয়েছে। মামলার প্রধান আসামি শেখ হাসান আলীকে বুধবার দিবাগত রাত ২টার দিকে ব্রি-চাকশ্রী থেকে গ্রেফতার করেছে রামপাল থানা পুলিশ। গত মঙ্গলবার রাতে শেখ হাসান আলীসহ চারজনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা তিন থেকে চারজনকে আসামি করে নির্যাতনের শিকার শেখ আবদুল্লাহর মা খালেদা বেগম বাদী হয়ে রামপাল থানায় মামলা দায়ের করেন। রামপাল থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সামছুদ্দিন গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

জানা যায়, ২৩ মার্চ দুপুরে ইজিবাইকে বাগেরহাট আসার পথে রামপাল উপজেলার চাকশ্রী থেকে জোরপূর্বক শেখ আবদুল্লাহকে তুলে নিয়ে যায় ব্রি-চাকশ্রীর শেখ হাসান আলী, ইউপি চেয়ারম্যান ফকির আবদুল্লাহর ভাগ্নে আবু সালেহসহ কয়েকজন। চুরির অপবাদ দিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে নির্যাতনের পর শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে ফাঁকা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর রেখে নির্যাতনের বিষয়টি কাউকে না জানানোর শর্তে ছেড়ে দেওয়া হয় আবদুল্লাকে। নির্যাতনের শিকার আবদুল্লাহ বাগেরহাট সদর উপজেলার মুনিগঞ্জ এলাকার শেখ গফুরের ছেলে। তিনি বর্তমানে বাগেরহাট জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

বাগেরহাট জেলা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. অসীম কুমার সমাদ্দার বলেন, যুবক আবদুল্লাহর শরীরের বিভিন্ন স্থানে ফোলা-জখম রয়েছে। মারাত্মক ইনজুরি রয়েছে কিনা সে বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানা যাবে। নির্যাতনের শিকার আবদুল্লাহ বলেন, পূর্ব পরিচিত হওয়ায় ব্রি-চাকশ্রী এলাকার শেখ হাসান আলীকে আমি ১ লাখ ২৭ হাজার টাকা ধার দিই। কিন্তু সে আমাকে টাকা না দিয়ে ঘোরাতে থাকে। পরে পাওনা টাকা বাবদ শেখ হাসান আলী তার মালিকানাধীন ইজিবাইকটি আমার কাছে বিক্রি করে দেয়। প্রতিদিন ২০০ টাকা ভাড়ায় সে ইজিবাইকটি চালাতে থাকে। কিন্তু কয়েকদিন টাকা দেওয়ার পর আর টাকা দেওয়া বন্ধ করে। যার কারণে জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি আমি ইজিবাইকটি আমার আওতায় এনে বিক্রি করে দিই। পরে এ বিষয় নিয়ে আর কথা হয়নি। কিন্তু হঠাৎ করে ২৩ মার্চ দুপুরে ইজিবাইকে রামপাল থেকে বাগেরহাট আসার পথে চাকশ্রী থেকে শেখ হাসান আলী ও চেয়ারম্যানের ভাগ্নে আবু সালেহসহ কয়েকজন মিলে জোরপূর্বক আমাকে ধরে নিয়ে যায়। তারা ব্রি-চাকশ্রী এলাকায় শেখ হাসান আলীর বাড়িতে নিয়ে আমাকে নির্যাতন করে। সন্ধ্যার দিকে আমার বন্ধু প্রাইভেট কারচালক আল আমিনকে চাকশ্রী আসার জন্য আমাকে দিয়ে ফোন করায়। পরে আল আমিন গেলে তাকেও বেঁধে রাখে হাসান ও আবু সালেহরা। সারা রাত আমাকে অমানুষিক নির্যাতন করেছে আবুল সালেহ ও হাসানসহ কয়েকজন। আমাকে বেধড়ক মারপিটের সঙ্গে সঙ্গে শরীরে সিগারেটের ছেঁকা ও আঙুলের মধ্যে খেজুরের কাঁটা ঢুকিয়ে নির্যাতন করে। চোখ উঠিয়ে ফেলারও হুমকি দেয় তারা। সারা রাত এভাবে অত্যাচারের পর দুপুরে বাইনতলা ইউপি চেয়ারম্যান ফকির আবদুল্লাহর কাছে নিয়ে ফাঁকা স্ট্যাম্পে আমার এবং আমার মায়ের স্বাক্ষর রেখে এবং ৩ লাখ টাকা দেওয়ার স্বীকারোক্তি রেখে ছেড়ে দেয়। নির্যাতনের শিকার আবদুল্লাহ তার ওপর নির্যাতনাকারীদের কঠিন বিচার দাবি করেন। বাইনতলা ইউপি চেয়ারম্যান ফকির আবদুল্লাহ বলেছেন, তার সামনে কোনো নির্যাতন হয়নি। আবু সালেহ আমার ভাগ্নে নয়। ভাইরাল হওয়া ২ মিনিট ৪৭ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, একটি ঘরের পেছনে আম গাছের সঙ্গে বেঁধে এক যুবককে মারধর করছে কয়েকজন যুবক। একপর্যায়ে দুই পায়ের তলায় মোটা লাঠি দিয়ে পেটাতে দেখা যায় আবু সালেকে। ওই যুবক তখন মাগো মাগো বলে চিৎকার করছিলেন।

সর্বশেষ খবর